প্রাণের বইমেলা
পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়ছে
চতুর্থ দিনে ৬৬টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ১২টি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ১০টি জীবনী ও ১১টি কবিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের বই রয়েছে
প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
অমর একুশে বইমেলা ২০২৪- এর চতুর্থ দিন রোববার পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে। কার্যদিবস হলেও মেলা উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকেই ছিল পাঠক-দর্শনার্থীদের আনাগোনা। বিকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণে পাঠকদের সমাগম বাড়ে।
এদিকে, চতুর্থ দিনে ৬৬টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ১২টি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ১০টি জীবনী ও ১১টি কবিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের বই রয়েছে।
মেলায় ধীরে ধীরে বই বিক্রির হার বাড়ছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। মেলার চতুর্থদিনে নতুন প্রকাশিত বইয়ের সন্ধানে স্টলে স্টলে ঘুরেছেন পাঠকরা। পছন্দের নির্বাচিত বই কিনতে আগ্রহীদের দেখা মিলেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোয়।
দিন যত গড়াবে ততই বিক্রি ও পাঠক উপস্থিতি বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করছেন প্রকাশকরা। বইমেলা ঘিরে এখনো নতুন বই ছাপানোর কাজে ব্যস্ততা রয়েছে প্রেসগুলোতে।
বাংলা একাডেমি সূত্র জানায়, কবিতা ছাড়াও এই সময়ে প্রকাশিত অন্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে নয়টি গল্প, পাঁচটি প্রবন্ধ, ১০টি কবিতা, একটি গবেষণা, রম্য বা ধাঁধা ছয়টি, ধর্মীয় একটি, জীবনী ১১টি, অনুবাদ দুটি, মুক্তিযুদ্ধ একটি, অন্যান্য একটিসহ মোট ৬৬টি।
এদিকে বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ 'কাঙাল হরিনাথ মজুমদার' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তপন মজুমদার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাফর ওয়াজেদ এবং আমিনুর রহমান সুলতান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন। আলোচনার শুরুতে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের জীবন ও কর্মভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাউল সংগীতকে সামাজিক জীবনধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মানসে ঊনবিংশ শতকে যে কয়েকজন সাহিত্যসাধক নিজেদের সাহিত্যসম্পদকে নিয়োজিত করেছিলেন কাঙাল হরিনাথ তাঁদের মধ্যে অন্যতম পথিকৃত। কাঙাল হরিনাথ হিরনায় প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। কাঙাল হরিনাথের জীবন-দর্শন, আধ্যাত্ম ভাবনা ও মরমি মানসের পরিচয় পাওয়া যায় তার বাউল সংগীতের মধ্যে। এই বাউল সংগীতের কথা ও সুর এবং সহজ-সরল প্রাণস্পর্শী ভাব কী শিক্ষিত আর কী নিরক্ষর, সকলকেই মুগ্ধ করে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, রুচিশীল ও শিল্পবোধ-সম্পন্ন কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ছিলেন সৌন্দর্যের পূজারি। আমাদের আবহমান বাংলার লোক-ঐতিহ্যকে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন তিনি। সংবাদপত্র ও সাহিত্যকে তিনি শাসক ও শোষকদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি যেমন বাউল গানে আধ্যাত্মবাদের কথা বলেছেন তেমনি সমাজ-সংস্কারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার নিজেই ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান।
সভাপতির বক্তব্যে মুনতাসীর মামুন বলেন, কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ছিলেন একইসঙ্গে বিদ্রোহী এবং আধ্যাত্মবাদী। তাঁর কর্মের ব্যাপ্তি ছিল অনেক দূর-বিস্তৃত। সৃজনশীল বুদ্ধিজীবী হিসেবে তিনি প্রান্তিক অবস্থানে থেকেও সমাজ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন।
এছাড়া 'লেখক বলছি' অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন চলচ্চিত্রকার ও লেখক তানভীর মোকাম্মেল, শিশুসাহিত্যিক বেণীমাধব সরকার, গবেষক কাজল রশীদ শাহীন এবং কবি ফারুক আহমেদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আনিসুল হক, ফারুক মাহমুদ এবং ঝর্না রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমেদ এবং নায়লা তারান্নুম চৌধুরী। এছাড়া ছিল অনুপম বিশ্বাসের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'বেসিক একাডেমি অফ ইয়োগিক অ্যাকুস্টিক ট্রেডিশনাল ইন্সট্রুমেন্ট' এবং মো. সাজেদুল ইসলাম ফাতেমীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'নকশিকাঁথা'র সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন, চন্দনা মজুমদার, আব্দুল লতিফ শাহ, আরিফ দেওয়ান এবং সরকার আমিরুল ইসলাম। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল (তবলা), এ কে আজাদ মিন্টু (কী-বোর্ড), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি) এবং শেখ জালাল উদ্দীন (দোতারা)।
আজকের সময়সূচি : আজ সোমবার অমর একুশে বইমেলার পঞ্চম দিন। মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সার্ধশত জন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী।