খোদ ঢাকার সড়ক ও মহাসড়কে সবজিসহ অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার হয়েছে ৫১ জন চাঁদাবাজ। গ্রেপ্তাররা পরিবহণ সেক্টরের চিহ্নিত চাঁদাবাজ।র্ যাব বলছে, তাদের কাছে পাওয়া গেছে চাঁদা হিসেবে আদায় করা লক্ষাধিক টাকা ও বিভিন্ন আলামত।
রোববার দুপুরে ঢাকার কারওয়ানবাজারর্ যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অস্বাভাবিক দামে সবজি বিক্রির খবরে জনমনে রীতিমতো অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ পাইকারি ও খুচরা বাজারে সবজির দামের ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। দামের ব্যাপক পার্থক্যের নেপথ্যে রয়েছে পণ্যবাহী পরিবহণে চাঁদাবাজি। ধাপে ধাপে চাঁদা দিতে দিতে পণ্যের দাম পাইকারি বাজারে এসে দাম বেড়ে যাচ্ছে। যার ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতা। বিষয়টি নজরে আসার পরই শুরু হয় চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তারে অভিযান।
র্
যাব কর্মকর্তা বলছেন, তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩ ফেব্রম্নয়ারি রাতের্ যাব-২ ওর্ যাব-৩ এর সম্মিলিতভাবে ঢাকার কারওয়ানবাজার, বাবুবাজার, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা মোড়, ইত্তেফাক মোড়, মতিঝিল, টিটিপাড়া, যাত্রাবাড়ীর কাজলা, গাবতলী ও ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে পণ্যবাহী গাড়ি থেকে চাঁদা হিসেবে টাকা আদায়ের সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় ৫১ জনকে। তাদের কাছে পাওয়া গেছে চাঁদা হিসেবে আদায় করা প্রায় ১ লাখ সাড়ে ১২ হাজার টাকা। গাড়ি থামানোর কাজে ব্যবহৃত ১টি লেজার রশ্মির লাইট, ৬টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জ্যাকেট, ২টি অন্যান্য লাইট, ৪টি পরিচয়পত্র, ৪১টি মোবাইল ও চাঁদা আদায়ের রশিদ।
গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ের্ যাব কর্মকর্তা জানান, কথিত ইজারাদারদের নির্দেশে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে তারা প্রত্যেক রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ওপর অবস্থান নিত। পণ্যবাহী যানবাহনকে লেজার লাইট ও লাঠি দিয়ে ইশারা করে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিত। এরপর চালকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করত। কোনো কোনো জায়গায় চাঁদার রশিদ দিত চালকদের। চালকরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের গাড়ি ভাঙচুর, চালক-হেলপারসহ গাড়ির স্টাফদের মারধর করত। প্রতিটি পণ্যবাহী যানবাহন থেকে তারা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা নিত। চাঁদা আদায়কারীদের মজুরি প্রতি রাতে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। প্রতি রাতে ঢাকায় চাঁদা হিসেবে আদায় হতো লাখ লাখ টাকা।র্ যাব কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার সেলিমের নেতৃত্বে হানিফ, মানিক, সাদ্দাম ও রাজা ঢাকার ইত্তেফাক ও সায়েদাবাদ এলাকায় চাঁদাবাজি করত। হানিফ সেলিমের প্রধান সহযোগী। গ্রেপ্তার সুমনের নেতৃত্বে রাজিব, বাবলু, ফলহান ও জাহিদ ঢাকার গোলাপবাগ এলাকায় চাঁদাবাজি করত। চক্রটি ৪ বছর ধরে এভাবেই চাঁদা আদায় করছিল। চাঁদা আদায়কারীদের দেওয়া হতো প্রতি রাতে জনপ্রতি ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা। গ্রেপ্তার কাউছারের নেতৃত্বে গ্রেপ্তার মাসুদ, শামীম ও ইমন ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন কাজলা এলাকায় চাঁদাবাজি করত। এরা প্রতিরাতে জনপ্রতি পেত ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। গ্রেপ্তার জাবেদের নেতৃত্বে গ্রেপ্তার আবুল হোসেন, আরিফ, বিলস্নাল, আলী হোসেন ও সজীব ঢাকার ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় চাঁদাবাজি করত। এদের প্রতি রাতে জনপ্রতি দেওয়া হতো ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। গ্রেপ্তার মহসীনের নেতৃত্বে আকতার, ফারুক, বিপস্নব, রাকিব, জমির, আবির, শামসুল ও বিলস্নাল গুলিস্তান ও বাবুবাজার এলাকায় চাঁদাবাজি করত। গ্রেপ্তার জহিরের নেতৃত্বে গ্রেপ্তার সোহেল, তামজিদ, শফিক, কাশেম ও সাদ্দাম কারওয়ানবাজার এলাকায় চাঁদাবাজি করত। ৮ ঘণ্টা পর পর চাঁদা আদায়কারী পরিবর্তন করা হতো। গ্রেপ্তার সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে গ্রেপ্তার কবির, আজমল, অলি, আতিউর, ইউনুস ও ইনতাজ ওরফে এনতা গাবতলী বাস টার্মিনালের কল্যাণপুর এলাকায় চাঁদা আদায় করত। এছাড়া সাদ্দাম, শহিদুল, সজিব, আব্দুর রহমান ও মাসুদ ঢাকার কারওয়ানবাজার এলাকায় চাঁদাবাজি করত।
র্
যাব কর্মকর্তা বলেন, পবিত্র মাহে রমজান আসন্ন। মাসটিকে ঘিরে যারা অবৈধভাবে পণ্য মজুত করবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। একই সঙ্গে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া বাজার সিন্ডিকেট বা কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে। এ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনার কোনো ব্যতিক্রম হবে না। একই সঙ্গের্ যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে নামবে। নিত্যপণ্য মজুতকারীদের সম্পর্কে গোপনের্ যাবকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি। তথ্যদাতাদের নাম পরিচয় গোপন রাখা হবে।