গত বছর আগুনে প্রায় আটশ' কোটি টাকার সম্পদ পুড়েছে
প্রতিদিন গড়ে ৭৭টি অগ্নিকান্ড হয়েছে সাড়ে ২৭ হাজারের বেশি অগ্নিকান্ড ঘটেছে নিহত হয়েছেন ১০২ আহত ২৮১ জন
প্রকাশ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
গত বছর আগুনে প্রায় আটশ' কোটি টাকার সম্পদ পুড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৭৭টি করে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। বছরটিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে সাড়ে ২৭ হাজারেরও বেশি। আগুনে নিহত হয়েছেন ১০২ জন। আহত হয়েছেন ২৮১ জন। চলতি বছর অগ্নিকান্ডের ঘটনা কমিয়ে আনতে সচেতনতার পাশাপাশি নানামুখী কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত বছর সারাদেশে ২৭ হাজার ৬২৪টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এসব অগ্নিকান্ডে ১০২ জনের মৃতু্য হয়েছে। আহত হয়েছেন ২৮১ জন। আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের ৪৮ জন আহত হন। আর আগুন নেভাতে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ফায়ার সার্ভিসের একজন।
তিনি আরও জানান, গত বছর প্রতিদিন সারাদেশে গড়ে ৭৭টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে অগ্নিকান্ডে ৭৯২ কোটি ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৪ টাকা সম্পদ ক্ষতি হয়েছে। আগুন নির্বাপণের কারণে রক্ষা পেয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। এসব অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বৈদু্যতিক গোলযোগ, বিড়ি সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো ফেলা দেওয়া, গ্যাস ও লাকড়িসহ বিভিন্ন ধরনের চুলা ও গ্যাসের লাইন থেকে।
কারণভিত্তিক পরিসংখ্যান মোতাবেক, ২৭ হাজার ৬২৪টি আগুনের মধ্যে বৈদু্যতিক গোলযোগের কারণে ৯ হাজার ৮১৩টি, বিড়ি সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো থেকে ৪ হাজার ৯০৬টি, চুলা থেকে ৪ হাজার ১১৭টি, ছোটদের আগুন নিয়ে খেলার সময় ৯২৩টি, গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে ৭৭০টি, গ্যাস সিলিন্ডার ও বয়লার বিস্ফোরণ থেকে ১২৫টি ও পটকা বা বাজি পোড়ানোর সময় ৮৭টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
অগ্নিকান্ডে সম্পদের ক্ষতিভিত্তিক পরিসংখ্যান মোতাবেক, বাসাবাড়ি ও আবাসিক ভবনে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকান্ড ঘটেছে। বাসাবাড়িতে ৬ হাজার ৯৫৬টি, গোয়ালঘর ও খড়ের গাঁদায় ৪ হাজার ২৭৭টি, রান্নাঘরে ২ হাজার ৯৩৮টি, দোকানে ১ হাজার ৮২১টি, হাটবাজারে ১ হাজার ২৬৪টি, শপিংমলে ৭৫৯টি, পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৪০৩টি, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ফার্মেসিতে মোট ২৪৮টি, হোটেলে ২৪৬টি, বিদু্যৎ উপকেন্দ্রে ২৩২টি, বস্তিতে ১৯৯টি, বহুতল ভবনে ১৪৭টি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৪০টি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৯৬টি ও পাট গুদাম এবং পাটকলে ৯৪টি আগুনের ঘটনা ঘটে।
পরিবহণ সেক্টরে আগুনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছর স্থলপথে যাতায়াতাকারী ৫০৬টি যানবাহনে, নৌযানে ৭৩টি ও ট্রেনে ১২টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
মাসভিত্তিক অগ্নিকান্ডের পরিসংখ্যান মোতাবেক, গত বছরের জানুয়ারিতে ২ হাজার ৬৪৬টি ও ফেব্রম্নয়ারিতে ২ হাজার ৭১৩টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে মার্চে ৩ হাজার ৩৩৪টি, এপ্রিলে ৩ হাজার ১৪১টি ও মে মাসে ৩ হাজার ২৩৫টি। এ ছাড়া জুনে ২ হাজার ৪৫০টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে কম অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে।
অগ্নিকান্ডে হতাহতদের পরিসংখ্যান মোতাবেক, হতাহতদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অগ্নিকান্ডে আহত ২৮১ জনের মধ্যে পুরুষ ২২১ জন এবং নারী ৬০ জন। নিহত ১০২ জনের মধ্যে পুরুষ ৭৩ জন। নারী ২৯ জন।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, এ বছর অগ্নিকান্ডের ঘটনা আরও কমিয়ে আনতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যেসব বহুতল ভবনে হাইড্রেন্ড আছে, তাদের হাইড্রেন্ডে পর্যাপ্ত পানির মজুদ রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি বাসাবাড়ি ও ভবনে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে পুরনো সরঞ্জাম সচল আছে কিনা তা দেখতে বলা হয়েছে। মানুষ অগ্নিকান্ডের বিষয়ে সচেতন হলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা কম ঘটবে। একই সঙ্গে অগ্নি দুর্ঘটনার স্থলে সাধারণ মানুষকে অহেতুক ভিড় না করারও অনুরোধ জানান তিনি। উৎসুক জনতার কারণে আগুন নেভানো কঠিন ও সময় সাপেক্ষ হয়ে পড়ে।