রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের দু'পক্ষের বিরোধে যুবক খুন

প্রকাশ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

রাজশাহী অফিস
রাজশাহীর বাগমারায় ইজারা নেওয়া পুকুর দখল ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু'পক্ষের বিরোধের জেরে এক যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ৯টায় উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নে মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়ায় ওই ঘটনা ঘটে। নিহতদের নাম সোহাগ আলী (২৪)। তার বাড়ি যশোরের মনিরামপুর এলাকায়। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে এবং তিনজনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। এ বিষয়ে ঝিকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক হোসেন জানান, ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা কৃষক লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলামের সঙ্গে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজরুল স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আসাদুল দলীয় প্রার্থী পক্ষে কাজ করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়। এর জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি মনে করেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সপ্তাহখানেক আগে ছুটিতে বাড়ি আসেন নজরুল ইসলামের ভাতিজা মনোয়ার হোসেন। শুক্রবার সকাল ১০টায় নজরুলের লিজ নেওয়া পুকুর পাড়ে নিজের সরিষা ক্ষেতে যান তিনি। এ সময় আসাদুল ইসলামের লোকজন মনোয়ারকে বলে তোদের পুকুরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে জানিস না। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা মনোয়ারকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয়। এ সময় আসাদুলের পক্ষের মুসলেম নামে একজনের নাক ফেটে যায়। পরে মনোয়ারকে উদ্ধার করে নওগাঁর আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করে পরিবারের লোকজন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দিনভর উত্তেজনা চলছিল। এদিকে, মনোয়ারের ওপর হামলা ও আহত হওয়ার খবর পেয়ে তাকে দেখতে ঢাকা থেকে আসেন তার চাচাত ভাই ইমরান, তাদের সহকর্মী সোহাগ ও রনি। তারা প্রথমে সন্ধ্যায় আত্রাই স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে গিয়ে মনোয়ারকে দেখে। এরপর তারা রাত ৯টায় আত্রাই থেকে একটি সিএনজি নিয়ে ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে যায়। তারা এলাকায় গেলে গ্রামে বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করে নিয়ে আনা হয়েছে বলে প্রচার চালায় আসাদুল ইসলামের লোকজন। এ সময় তারা বাগমারা থানাসহ ভাগনদী ও ঝিকরা পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেয়। তবে পুলিশ যাওয়ার আগেই আসাদুলের লোকজন ডাঙ্গাপাড়া মোড়ে তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় তারা সিএনজি চালকসহ তিনজনকে ঘরে রাখে। তবে সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে সোহাগকে মাঠের মধ্যে ধরে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তিনজনকে উদ্ধার করে নিজের হেফাজতে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ব্যাপারে নজরুল ইসলাম বলেন, 'ভোটের দিন বিকালে আমার ছোটভাই সুজনকে মারপিট করে আসাদুল ইসলামের লোকজন। আমি ইজারা নিয়ে দুটি খাস পুকুরে মাছ চাষ করি। ভোটের পরের দিন আসাদুল নিজে আমাকে ওই দুই পুকুরে যেতে নিষেধ করে দিয়েছে এবং মাছ মেরে বিক্রি করে দেয়।' রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) রফিকুল আলম বলেন, 'খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পুলিশ যায় এবং স্থানীয় লোকজনের রোষানলে থেকে এক সিএনজি চালকসহ তিনজনকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়। তবে এর আগেই মাঠের মধ্যে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। নিহত সোহাগসহ তারা রাতে কেন গ্রামে এলো এবং সেখানে কি ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।'