শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের

বিএনপির বন্ধু তো দেশে আছে, বিদেশেও আছে

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বিএনপির বন্ধু তো দেশে আছে, বিদেশেও আছে

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির বন্ধু তো দেশে আছে, বিদেশেও আছে। এখন নির্বাচনে অংশ নেয়নি, আন্দোলনে ব্যর্থ। তাদের তো বিদেশি বন্ধুদের কাছে মুখরক্ষার বিষয় আছে। শুক্রবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নির্বাচনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কী বলবে, কী করবে, এটা নিয়ে আমরা বিচলিত নই। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমরা চিন্তিত।

তিনি আরও বলেন, অস্থিরতার মধ্যেও কিন্তু আমাদের জনগণের কোথাও হাহাকার নেই। জনগণের পক্ষ থেকে বিক্ষুব্ধতা আমরা লক্ষ করিনি। সবাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। আমাদের দায়িত্ব যেটা আমরা সেটা পালন করছি। আমাদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন এই বিষয়টি নিয়ে ভাবিত। দেশের মানুষকে যে অঙ্গীকার তিনি করেছেন, বিশেষ করে নির্বাচনী ইশতেহারে জনগণের জন্য যেসব কথা ছিল, তিনি সেই ইশতেহার বাস্তবায়নে মাথা ঘামাচ্ছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালকে ডেকে পরামর্শ দিচ্ছেন, কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছেন। কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। কথা বেশি না বলে কাজ করার জন্য দায়িত্বশীল

সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

বিএনপির আন্দোলনে জনগণ সাড়া দেয়নি দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে অংশ নেয়নি। এখন বিএনপি যে একটা দল, সে প্রাসঙ্গিকতা নিজেরাই হারিয়ে ফেলেছে। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।

সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো হবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরও ভালো হবে না কেন? সারা দুনিয়ার সবাই কিন্তু নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত আছে। যুক্তরাষ্ট্রও চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। মধ্যপ্রাচ্যে তারা ইসরাইলকে সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে। একদিকে বৃষ্টি, ঠান্ডা, শৈত্যপ্রবাহ, অপরদিকে রক্ত। বৃষ্টির পানির সঙ্গে লাল রক্তপানি আর দেখা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের দুষ্ট ছেলে ইসরাইল তাদের কথা শুনছে না। বাইডেন বলছেন একটা, নেতানিয়াহু বলছেন আরেকটা। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করার অঙ্গীকার করেছে হামাসকে ধ্বংস করার জন্য।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ইয়েমেনের হুতিদের সঙ্গে সংঘাত চলছে। ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজ ও ভ্যাসেলগুলো চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সুইস ক্যানেল দিয়ে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরেকটা সংকট সৃষ্টি করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে কৃষকরা রাস্তায় প্রতিবাদরত দ্রব্যমূল্যের জন্য এবং কৃষি যন্ত্রপাতির মূল্যবৃদ্ধির জন্য। এসব নিয়ে ইউরোপের প্রায় সব দেশে কৃষকরা রাস্তায় নেমেছেন। জার্মানিতে নেমেছেন, ফ্রান্সে নেমেছেন। যুক্তরাষ্ট্র তো এখন অনেক চিন্তায় আছে। তারা নিজেদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যস্ত, বাংলাদেশের দিকে অত মনোযোগ দেওয়ার সময় তাদের কোথায়?

বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাবের কারণে দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে কোনো ধরনের টানাপড়েন নেই।

নির্বাচন বানচালে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে দেশটির সঙ্গে কোনো কথা বলছেন কিনা, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, কথা যখন হয়, কথা প্রসঙ্গে অনেক কথায় হয়। স্পেসিফিক কোনো বিষয় নিয়ে আমরা কোনো চাপের মধ্যে নেই। কোনো ব্যাপারে আমরা কোনো চাপের মুখে নেই। আমরা চাপ অনুভব করছি না। অহেতুক একটা বিষয় নিয়ে মাতামাতি করব দরকারটা কী?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্র করছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন কথায় কথায় শুধু ষড়যন্ত্র বললে কি দায়িত্ব শেষ হবে? ষড়যন্ত্র বিষয়টা আছে, থাকবে। ষড়যন্ত্রের ঘাড়ে সবকিছু চাপিয়ে দিয়ে নিষ্কর্ম থাকার কোনো কারণ নেই। রাজনীতি যেখানে আছে, ষড়যন্ত্র সেখানে থাকবে। বিশ্বরাজনীতি হোক, দেশের রাজনীতি হোক। এখন এর মধ্য দিয়েই আমাদের চলতে হবে। আমার কথা হচ্ছে, আমরা তো ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করছি না। আমরা পজিটিভ রাজনীতি করছি। ইতিবাচক ধারায় আছি। যারা ষড়যন্ত্র করে, তারা নেতিবাচক ধারায়। পজিটিভ রাজনীতিরই বিজয়ী হবে শেষ পর্যন্ত।

এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি তো এ কথা বলিনি আগামীকালই দ্রব্যমূল্য কমে যাবে? আমি বলেছি, নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। এর অর্থ কি আগামীকাল কমে যাবে? সে আশা দেওয়ার ক্ষমতা আছে আমার? এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা আমার মুখ দিয়ে অন্তত বের হবে না।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় প্রার্থীদের ওপর সংসদ সদস্যদের প্রভাব বাড়বে কিনা, জবাবে সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনো বড় কাজ করতে হলে কিছু ছোট বিষয় থাকে, এগুলো এর মধ্যে এসে পড়বে। কারও ইচ্ছায় নির্বাচন প্রভাবিত হবে, এটা ভাবার কারণ নেই। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী, এবার তারা তা প্রমাণ করেছে। তারা আরও শক্তিশালী হবে। তারা আরও বেশি করে তাদের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালন করতে পারবে। তাতে নির্বাচনী ব্যবস্থায় সামনের দিকে আমাদের জন্য শুভ দিন অপেক্ষা করছে।

দলীয় প্রতীক না দিলেও প্রার্থীদের ওপর প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা কোনো প্রকার সমর্থন দেব না। জনগণ যাকে পছন্দ করে, তাকে নির্বাচিত করবে, যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে।

গত সোমবার ক্যাবিনেট মিটিংয়ে দ্রম্নত বিচার আইন স্থায়ী করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, এ ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটা আইন ক্যাবিনেটে প্রথমত নীতিগত সিদ্ধান্ত করে, তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। দুইটা মিটিং লাগে। এরপর বিষয়টা যাবে পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে। স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আলাপ-আলোচনা বা রেকমেন্ডেশন থাকলে সেটা-সহ পার্লামেন্টে বিল আকারে যাবে। পার্লামেন্টে বিল আকারে আইনটা পাস হবে। পার্লামেন্টে আইনটি সংশোধনীর ব্যাপারে আলোচনা করারও অনেক সুযোগ আছে। তো সে ক্ষেত্রে কোনো অবস্থায় স্থিতি দেবে, সেটা এখন এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপস্নব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে