এখনো চড়া নিত্যপণ্যের দাম
প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
গত সপ্তাহের চড়া দামেই অপরিবর্তিত রয়েছে রাজধানীর ভোগ্যপণ্যের বাজার। এ সময়ে কোনো পণ্যের দাম না কমলেও বাড়তির দিকেই রয়েছে ডিম, মাংস, সবজি, চিনি, ডাল, চাল ও পেঁয়াজসহ অতিপ্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্যে। শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দামে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
প্রায় দুই মাস পর রাজধানীর বাজারে ফের দেড়শ' টাকা ছুঁয়েছে প্রতি ডজন ডিমের দাম। যদিও পাইকারি বাজারে কিছুটা কমে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে। এছাড়াও এ দিন বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৪০ টাকার ওপরে।
পাইকারি ডিম বিক্রেতারা জানান, মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিম উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। এছাড়াও গত মাসজুড়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে ডিম ও মুরগির চাহিদা বেড়েছে। ফলে বাজারে এর দাম বাড়তির দিকেই রয়েছে।
এদিকে চলতি সপ্তাহে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে পেঁয়াজ। মূলত জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কমায় দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। এ দিন বেশির ভাগ বাজারেই প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, হালি পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম বাড়তির দিকেই থাকবে। তাদের হিসেবে মার্চের আগে বাজারে হালি পেঁয়াজের সরবরাহ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে ফেব্রম্নয়ারিজুড়েই বাড়তির দিকে থাকতে পারে এই মসলা পণ্যের দাম।
জানা গেছে দেশের স্থানীয় মোকামগুলোতে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ টাকা দরে। যা গত ১০ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। এদিকে বাজারে এখনো বাড়তির দিকেই রয়েছে চালের দাম। যদিও গত দু-সপ্তাহে প্রতি কেজি চালে প্রায় ৬ টাকা বেড়ে এখন তা ২-৩ টাকা কমেছে। এছাড়াও গত দুই সপ্তাহ ঢাকাসহ সারা দেশে মজুতবিরোধী অভিযান পরিচালনা করায় কোথাও কোথাও ধান ও চালের দাম কিছুটা কমেছে। তবে খুচরা বাজারে এর প্রভাব খুবই কম।
শুক্রবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৬৮-৭০ টাকায়, এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল সাড়ে ৭১-৭২ টাকা। তবে গত মাসের শুরুতে এ মিনিকেট বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৫-৬৬ টাকায়। সে হিসেবে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছিল ৬ টাকা। অভিযানের পর সেই চালের দাম কমেছে মাত্র ২ টাকা।
একইভাবে ব্রি-২৮ জাতের চালের কেজি ৫৫ টাকা থেকে বেড়ে গত সপ্তাহে ৬০ টাকা হলেও এ দিন ২ টাকা কমে বিক্রি
হয়েছে ৫৮ টাকায়, স্বর্ণা ৫০ থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা, যা এ দিন বিক্রি হয়েছে ৫৪ টাকা দরে। এ ক্ষেত্রে কমেছে মাত্র ১ টাকা।
এদিকে সবজির বাজারে ক্রেতা অস্বস্তি বেড়েই চলছে। পুরো শীতজুড়েই বাজারে অধিকাংশ সবজির বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকার ওপরে, যা সাধারণের নাগালের বাইরে। এছাড়াও মৌসুমি ফুলকপি ও বাঁধাকপি পিস বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা দরে, যা গতবছর এই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে। এ দিনও বাজারে মাঝারি আকারের লাউ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকার ওপরে। যা গত বছর এই সময় বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে শীতকালীন বেগুন ৯০ থেকে ১১০ টাকা কেজি, দেশি শিম ৬০-১০০ টাকা, টমেটো ৭০-৯০ টাকা, শসা ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তবে গত সপ্তাহ থেকে আলুর দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এ দিন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা দরে। অর্থাৎ দু-সপ্তাহ ব্যবধানে দাম কমেছে প্রায় ১৫ টাকা। তবে তা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
এছাড়াও বাজারে বাড়তি দাম রয়েছে আদা ও রসুনে। এ দিন প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে আড়াইশ' ও ২৪০ টাকা দরে। চিনির দামেও চলছে অস্থিরতা। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বাজারে ১৪৮ টাকা মূল্য থাকলেও বিক্রেতারা সেটা খুলে বিক্রি করছেন ১৫০-১৬০ টাকায়। ফলে বাজারে প্যাকেট চিনির সংকট তৈরি হয়েছে। একইভাবে গত সপ্তাহের চড়া দামে অপরিবর্তিত রয়েছে মসুর ডাল। প্রতি কেজি ছোটদানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়, ভালোমানের মুগ ডালের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে।
এদিকে ফের চড়া গরুর মাংসের বাজার। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৬০-৮০ টাকা বেড়ে এ দিন প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকায়। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রমজান যত ঘনিয়ে আসছে পণ্যের চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের দাম আরও বাড়ছে। আগামী মাসে গরুর মাংসের কেজি ৮০০ ছাড়াতে পারে বলেও জানান তারা।
এছাড়াও গত সপ্তাহের বাড়তি দাম অব্যাহত রয়েছে মাছবাজারে। এ দিন মাঝারি আকারের রুইয়ের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০, বড় পাঙাশ ২৫০, চাষের কই (ছোট) ৩৩০, তেলাপিয়া আড়াইশ' ও শিংমাছ ৬০০, শোলমাছ ৮০০, পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০, ট্যাংরার কেজি আকার ভেদে ৬০০ থেকে ৭০০, মলামাছ ৫০০, বাইলা ১ হাজার, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, মাঝারি আকারে বোয়াল ৫০০ থেকে ৬০০, গুঁড়ামাছ ৩০০, ছোট চিংড়ি ৫০০, গলদা ৭০০ এবং বাগদা ৮০০ থেকে ৯০০ ও রূপচাঁদা ৯০০ টাকা দরে।