ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

পুলিশ আরও জনবান্ধব হয়েছে :স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পুলিশকে মানুষ এখন আপনজন মনে করে। বিশ বছর আগেও মানুষ পুলিশকে ভয় পেত। পুলিশ এখন আরও জনবান্ধব হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ সত্যিকার অর্থেই জনগণের পুলিশে পরিণত হয়েছে। এ বাহিনীটির উপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বেড়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন। বৃহস্পতিবার ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সুধী সমাবেশ ও নাগরিক সংবর্ধনার অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। শুরুতেই বেলুন উড়িয়ে ডিএমপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসামরিক শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এরপর কেক কাটা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশ প্রধান, ডিএমপি কমিশনারসহ গণমান্য ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে সালমান এফ রহমান পুলিশের ভূয়সী প্রশাংসা করে বলেন, পুলিশকে আরও জনবান্ধব হতে হবে। তাহলে দেশ ও মানুষের উন্নয়ন ঘটবে। বিশেষ করে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে তাগিদ দেন তিনি। যাতে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের আরও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, পুলিশের উপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বেড়েছে। তাই মানুষ এখন বিপদে-আপদে পুলিশকে সবসময়ই পাশে পায়। পুলিশ সত্যিকার অর্থেই জনগণের পুলিশের পরিণত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ট্রাফিক পুলিশের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। পুলিশের বর্তমানে জনবল ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি। সে হিসাবে একজন পুলিশ ৮২৫ জন মানুষকে নিরাপত্তা দেন। মন্ত্রী বলেন, দেশে জঙ্গিবাদ উত্থানের সূত্রধরেই কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন করা হয়। সফলভাবে ইউনিটটি কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া গঠন করা হয়েছে সাইবার ইউনিট ও ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে ডিএমপি। মন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৪-১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। কাজ করতে গিয়ে ওই সময় অনেক পুলিশ সদস্য শাহাদতবরণ করেছেন। আহত হয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতা ও বীরত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। যে কারণে আমাদের দেশ এখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ডিএমপি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। যানজটসহ বিভিন্ন ইসু্যতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে আমরা একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাব। যাতে দেশ ও জাতির আরও উন্নয়ন হয়। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির আওতায় প্রত্যেকটি পুলিশ বক্সে টয়লেট, সুপেয় পানি ও বসার ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশ বক্স করার জন্য দশ কোটি টাকা বাজেট করা হয়েছে। আমরা প্রত্যেকটি পুলিশ বক্স আধুনিক করে দেব। যাতে পুলিশ আরও গতি নিয়ে জনগণকে সেবা দিতে পারে। একই সঙ্গে তিনি যানজট নিরসনে পুলিশকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তা চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে ডিএমপি। জাতির পিতা চেয়েছিলেন পুলিশ শুধু আজ্ঞাবাহী পুলিশ হবে না, তারা জনগণের সেবক হয়ে জনগণের পাশে থাকবে। এ লক্ষে ডিএমপি বাংলাদেশ পুলিশের মুখচ্ছবি হয়ে, জনগণের সেবক হয়ে, জনগণের সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনায় জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুলস্নাহ আল-মামুন বলেন, দেশের প্রতিটি থানাকে আমি জনগণের নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে দেখতে চাই। থানা জনগণের একটি নির্ভরতার জায়গা। সেই জায়গার মান সব সময়ই সমুন্নত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর পুলিশের থানাগুলো সত্যিই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এজন্য তিনি ডিএমপি কমিশনারকে ধন্যবাদ জানান। আইজিপি আরও বলেন, একটি সুশৃঙ্খল ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে বাংলাদেশ পুলিশ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট পুলিশ গড়ে তোলার কাজ চলছে। দক্ষতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। ডিএমপি কমিশনার পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিনিয়ত অপরাধের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মাত্র ১২টি থানা আর ৬ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করা ডিএমপি এখন ঢাকাবাসীর আস্থা, নিরাপত্তা ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে ডিএমপির ৫০টি থানা নগরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বর্তমানে ৩৪ হাজার। সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ, সাইবার অপরাধ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করে যাচ্ছে ডিএমপির ডিবি পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও ট্রাফিক বিভাগ। এছাড়া প্রতিটি থানায় স্থাপিত সেন্টারে মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে নারী ও শিশুদের। ঢাকার যানজট প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকাকে সত্যিকার অর্থেই আধুনিক নগর হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। যাতে করে উত্তরা থেকে ১৫ মিনিটে গুলিস্তান যাওয়া যায়। নগরবাসীর সহযোগিতায় স্মার্ট ডিএমপি গঠনে কাজ চলছে। যাতে ঢাকার নগরীর একজন নারীও রাত ৩টার সময় রাস্তা দিয়ে কোনো প্রকার ভয় ছাড়াই চলতে পারেন। তিনি যেন মনে করেন, তার পেছনে একজন পুলিশ তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। যানজট ঢাকা শহরের অন্যতম একটি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা একটি স্মার্ট ডিএমপি গঠন করতে চাই। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ডিএমপির প্রকাশিত বিশেষ ম্যাগাজিন 'আস্থা' এবং ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান সম্পাদিত জেলখানায় থাকাকালীন বঙ্গবন্ধুর চিঠিপত্রের সংকলন 'লেটারস অব বঙ্গবন্ধু' মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জীবিত পুলিশ সদস্য, সংসদ সদসবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতা, সচিব, বিচার বিভাগের বিচারক, সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। তাতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন দেশের খ্যাতিমান শিল্পীরা। প্রসঙ্গত, 'সেবা ও সদাচার, ডিএমপি'র অঙ্গীকার' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগর পুলিশের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে চকোলেট বিতরণ করেছে পুলিশ।