যুদ্ধ-গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে শুরু জাতীয় কবিতা উৎসব

প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন চত্বরে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে ৩৬তম জাতীয় কবিতা উৎসব। এবারের উৎসবের প্রতিপাদ্য 'যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা' -যাযাদি
যুদ্ধ ও গণহত্যার প্রতিবাদ জানানোর মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে শুরু হয়েছে দুই দিনের জাতীয় কবিতা উৎসব। উৎসবের এবারের প্রতিপাদ্য 'যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা'। বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ৩৬তম এ উৎসবের উদ্বোধন করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। উৎসবে দেশ-বিদেশের কবিরা অংশ নিয়েছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, 'জাতীয় কবিতা পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় কবিতা উৎসব যে শুধু বাংলা ভাষাভাষীদের উৎসব, এটা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। কারণ এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন ভাষার কবিরা এসেছেন। গত সম্মেলনে আমি দেখেছি, রাশিয়া থেকে এবং ইস্ট ইউরোপিয়ান ও অন্যান্য কান্ট্রি থেকে কবিরা এখানে যুক্ত হয়েছেন। সুতরাং এটাকে বাংলা কবিতা উৎসব না বলে এটাকে সব ভাষাভাষীর বলা যায়। সব কবিদের জন্য এটি উন্মুক্ত। এটাকে বিশ্ব কবিতা দিবস হিসেবেও আমরা ভাবতে পারি।' আয়োজকরা জানান, দুই দিনের এই উৎসবে কবিতা পাঠ, নিবেদিত কবিতা, সেমিনার, আবৃত্তি ও সংগীতের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ জানানো হবে। এবারের উৎসবের পোস্টার, ব্যাকড্রপ, সু্যভেনিরের প্রচ্ছদে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার ওপর ভারতীয় শিল্পী নীরেন সেনগুপ্তের আঁকা ছবি, ১৯৩৭ সালে পাবলো পিকাসোর আঁকা বিশ্ববিখ্যাত শিল্পকর্ম 'গের্নিকা' ও গাজায় চলমান হত্যাকান্ডের ওপর রাশিদ বাউহামিদির শিল্পকর্ম 'মা ও শিশু' ব্যবহার করা হয়েছে। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে ১৯৮৭ সালে জাতীয় কবিতা উৎসবের শুরু। স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, গণতন্ত্র হনন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বর্বরতার বিরুদ্ধে এই কবিতা উৎসবে প্রতিবাদ জানান বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা কবিরা। জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, 'ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় গাজা উপত্যকায় প্রায় ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। প্রকাশ্য সমর্থন ও প্ররোচনাদাতা পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সসহ পৃথিবীর দেশে দেশে নাগরিক সমাজ এই বর্বরতার প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনী প্যালেস্টাইনে যে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে জাতিসংঘসহ সারা পৃথিবীর বিবেকবান মানুষ স্তম্ভিত ও ক্ষুব্ধ। যুদ্ধ ও গণহত্যার বিশ্ব ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে যৌক্তিক বিবেচনায় ৩৬তম জাতীয় কবিতা উৎসব ২০২৪-এর কণ্ঠে আমরা স্স্নোগান তুলে দিয়েছি- যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা।' পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত বলেন, 'আজ যখন দেশে দেশে অশুভ শক্তির দাপটে নিরপরাধ মানুষ বিপন্ন- নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষের লাশের স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতার অহমিকা দেখাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি- সে সময় আমাদের এ আয়োজন।' উৎসবের আহ্বায়ক শিহাব সরকার বলেন, 'এই মুহূর্তে সমরাস্ত্রের আস্ফালন থেকে মুক্ত নয় পৃথিবীর কোনো অঞ্চলই। মানবজাতির এক বড় অংশকে রক্তক্ষয়ী হানাহানিতে লিপ্ত রেখে কবিতা বা বৃহৎ অর্থে, কোনো শিল্পই এগোতে পারে না। আবার দায়সারা গোছের বিবৃতিধর্মী সাহিত্য রচনা করে বা ছবি এঁকেই শিল্পীর দায়িত্ব শেষ হয় না। অঙ্গীকার থেকে উদ্ভূত কবিতা, যা শান্তি ও মানবতার বাণীকে সমুন্নত রাখে- সেই কবিতা এবং অন্যান্য রচনার মাধ্যমেই আমরা যুদ্ধ এবং হত্যাযজ্ঞকে প্রতিহত করতে পারি। অনুষ্ঠানে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন কবি ও প্রাবন্ধিক আমিনুর রহমান সুলতান, ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কবি আসলাম সানী। উদ্বোধনের পর ভারত, নেপাল, ফিলিপিন্স ও ইরানের আমন্ত্রিত কবিরা মুক্ত আলোচনা ও কবিতা পাঠ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী কামরুল হাসানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কবিরা। এবার আমন্ত্রিতদের মধ্যে ভারতের কলকাতার সুবোধ সরকার, বিথী চট্টোপাধ্যায়, বিভাস রায় চৌধুরী; আগরতলার রাতুল দেব বর্মন, দীলিপ দাস, আকবর আহমেদ; আসামের কবি অনুভব তুলাসি, চন্দ্রিমা দত্ত; ফিলিপিন্সের কবি ও বর্তমানে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল আসান জুনিয়র, নেপালের চাবিলাল কপিলা উৎসবে যোগ দিচ্ছেন। এছাড়াও 'যুদ্ধ গণহত্যা সহে না কবিতা' এই মর্মবাণীর প্রতি সংহতি জানিয়ে কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা থেকে সরাসরি অনলাইনে সংযুক্ত হয়েছেন আরব বিশ্বের খ্যাতিমান কয়েকজন কবি। তারা হলেন- মিশরের আহমেদ আল ছাহহে, ইব্রাহীম আল মাশরি, ড. সারা হামিদ হাওয়াস, ইরাকের ড. আলী আল সালাহ, জার্মান কবি টরিয়াস বার্গার্ট, আর্জেন্টিনার কবি জনা বার্গার্ট।