বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচিকে অবৈধ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'অনুমতি ছাড়া ফ্রি স্টাইল কর্মসূচি নেওয়ার সুযোগ নেই। অনুমতি নেবে না, আর রাস্তায় ফ্রি স্টাইল কর্মসূচি করবে, আমরা মেনে নেব- তা মনে করার কোনো কারণ নেই।'
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রসহ কেউই ত্রম্নটিপূর্ণ বলেনি- দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'নির্বাচনের ফলাফলের পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, সর্বশেষ সংসদ অধিবেশনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন এবং সংসদের প্রথম অধিবেশনেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা উপস্থিতি ছিলেন।'
দ্বাদশ সংসদের অধিবেশন শুরুর দিন বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের স্পিকারকে ধন্যবাদ দিতে দাঁড়িয়ে যেভাবে সংসদের 'ভারসাম্য' নিয়ে মন্তব্য করেছেন, এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'সংসদ ভারসাম্যপূর্ণ না হলে তিনি কেন এলেন, আবার তিনি সংসদে যা বলার, একাই বললেন।'
গত দুই সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি এবার একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে মাত্র ১১টি আসন নিয়ে। আওয়ামী লীগের ২২৩টি আসনের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিপরীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬২ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের বেশিরভাগই আবার আওয়ামী লীগের।
সে বিষয়ে ইঙ্গিত করেই মঙ্গলবার দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে কথা বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, যিনি এবার সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসন পেয়েছেন।
স্পিকার নির্বাচনের পর শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে জিএম কাদের বলেন, 'সংসদ সদস্যের সংখ্যার বিচারে বর্তমান সংসদে ভারসাম্য রক্ষা হয়নি। আসন সংখ্যার বিচারে এবার সংসদে শতকরা ৭৫ ভাগই সরকার দলের। স্বতন্ত্র ২১ ভাগ। তারাও প্রায়ই সরকারদলীয়।
'৩-৪ ভাগ শুধু বিরোধীদলীয় সদস্য। এই সংসদে সম্পূর্ণ জাতিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। এই সংসদ কখনো নিখুঁতভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে না।'
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান যেভাবে ওই বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা 'নিয়মের লঙ্ঘন'। মঙ্গলবার কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে কথা বলেননি, আমি আনুষ্ঠানিকতা একটু বলেছি। যা বলার তো জিএম কাদেরই বলেছেন। উনি স্পিকারকে ধন্যবাদ দেওয়ার নামে সংসদে ফ্লোর নিয়ে যে কথা বলেছেন, সেটা বলা তার উচিত হয়নি।'
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'স্পিকারকে ধন্যবাদ দেওয়ার নামে শুরুতেই উনি ফ্লোর নিয়ে যে কথা বললেন, মনে হলো যে, তুলকালাম হয়েছে, লম্বা একটা বক্তব্য দিলেন। বিষয়টি ছিল ধন্যবাদ জানানো, উনাকে লম্বা বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। গতকাল তিনি নিয়ম লঙ্ঘন করে কথা বলেছেন। সামনে তার কথা বলার যথেষ্ট সুযোগ আছে। সংসদে আপনি আসলেন এবং নেতা নির্বাচিত হয়েই আসলেন। কেউ নেতা, কেউ উপনেতা-আনুষ্ঠানিকতা মেনেই তো সংসদে আসলেন।'
জাতীয় পার্টিকে নিয়ে কটাক্ষ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'স্বাধীনতার পর এ দেশে একজন শুধু বিরোধীদলের নেতা ছিলেন, এখন নেতা, উপনেতা। এখনতো তারা ১১ জন, সেটা ফুটবল টিম বা ক্রিকেট টিম, যাই হোক, আর এভাবে বলা ঠিক হবে না।'
সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে দিয়েছেন বলে জানান সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'সরকার শুধু কথা বলছে, এমন নয়। সরকার অ্যাকশনে আছে।'
যারা আইন ভঙ্গ করবে, তারা যেই হাক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন কাদের।
অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, সাংস্কৃতিক-বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক বিপস্নব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজি, মারুফা আক্তার পপি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।