আজকের যায়যায়দিন

গাজীপুরের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে যোগ দিতে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন মুসলিস্নরা। আগামীকাল শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শুরু হবে এ আয়োজন। বুধবার সকাল থেকেই বাস, ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন যানযোগে ধর্মপ্রাণ মুসলিস্নরা অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দিচ্ছেন।

এদিকে ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। ময়দান প্রস্তুতির কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি অংশ আজকালকের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আয়োজক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া ইজতেমা উপলক্ষে মুসলিস্নদের নিরাপত্তায়র্ যাব, পুলিশ, আনসারসহ কয়েক হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে পুরো ময়দান।

ইজতেমার আয়োজক ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয় তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা। এখানে দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিস্ন অংশ নেন। তিনদিন করে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বিদের বয়ান শোনেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিস্ন।

প্রায় প্রস্তুত ইজতেমা ময়দান : সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে মাঠ প্রায় প্রস্তুত। স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন তাবলিগ জামাত অনুসারীরা। কেউ কেউ শামিয়ানা টাঙাচ্ছেন, কেউ বিদু্যতের কাজ করছেন, কেউ বাথরুম পরিষ্কার, কেউ ময়দান পরিষ্কার, আবার কেউ খুঁটি পুঁতছেন। এভাবেই প্রস্তুত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার ময়দান। এ পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার ময়দান প্রস্তুতির কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন হবে। দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিস্নদের আগমনে মুখরিত হয় টঙ্গীর তুরাগতীর। বিশ্ব ইজতেমায় নিজ নিজ খিত্তায় চলে রান্নাবান্নার কাজ। নিজ নিজ দায়িত্বে এখানেই থাকা, খাওয়া ও গোসলসহ প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরে নেন মুসলিস্নরা। এখানে শুয়ে-বসেই বয়ান শোনেন বিভিন্ন বয়সের দেশ-বিদেশের মুসলিস্নরা। লাখ লাখ মানুষ জামাতবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় ও জিকির করেন।

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের মাওলানা জোবায়ের অনুসারী মুরব্বি মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, 'বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ২ ফেব্রম্নয়ারি। ইতোমধ্যে ময়দান প্রস্তুতির কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। তবে জানা যায়, শামিয়ানা টাঙানোর চট সংকট হওয়ার কারণে অনেক জায়গায় এখনো ফাঁকা রয়েছে এবং আগত মুসলিস্নদের শামিয়ানা নিয়ে আসতে হবে এমনটা জানিয়েছে ইজতেমা পরিচালনার মুরুব্বিগণ।'

তিনি জানান, 'ইজতেমায় প্রথম পর্বে মুসলিস্নদের উপস্থিতি অনেক বেশি হয়। ফলে জায়গা না পেয়ে অনেক মুসলিস্ন চলে যান। তাই এবার দিয়াবাড়ীতে আরেকটি ময়দান প্রস্তুত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা নিষেধ করা হয়েছে।'

মুরব্বি বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলে আসছি আমাদের (মাওলানা জোবায়ের অনুসারী) প্রথম পর্ব দুইভাবে ভাগ করে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা করার। এ ছাড়া আমাদের বর্তমানে কোনো সমস্যা নেই। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবেই বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।'

গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, 'এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের একাধিক টিম দায়িত্বে থাকবে।

পর্যাপ্ত যাতায়াত সুবিধার ব্যবস্থা : এদিকে ইজতেমায় মুসলিস্নদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৭টি স্পেশাল ট্রেন চালু করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রেল ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. কামরুল আহসান এ তথ্য জানান। প্রতি বছরের মতো এবারও মুসলিস্নদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে স্পেশাল ট্রেন চালু করেছে। এর মধ্যে শুধু ২ ও ৯ ফেব্রম্নয়ারি (শুক্রবার) ঢাকা-টঙ্গী ও টঙ্গী-ঢাকা রুটে দুটি জুমা স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।

এ ছাড়া ৩ ও ১০ ফেব্রম্নয়ারি ১

জামালপুর-টঙ্গী রুটে একটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। আখেরি মোনাজাতের দিন (৪ ও ১১ ফেব্রম্নয়ারি) ঢাকা-টঙ্গী রুটে পাঁচটি ও টঙ্গী-ঢাকা রুটে পাঁচটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। টঙ্গী-ময়মনসিংহ রুটে চলবে একটি স্পেশাল ট্রেন। পাশাপাশি টঙ্গী-টাঙ্গাইল রুটে একটি এবং ঈশ্বরদী-টঙ্গী-ঈশ্বরদী রুটে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।

এ ছাড়া সব আন্তঃনগর মেইল, এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনে কোচের প্রাপ্যতা এবং যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী যথাসম্ভব অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে বলেও জানান তিনি।

দলে দলে আসছেন মুসলিস্নরা

এদিকে, প্রথম পর্বে যোগ দিতে দলে দলে তুরাগ তীরে আসছেন মুসলিস্নরা। নরসিংদী থেকে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন সফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে তারা ২৭ জনের একটি তাবলিগ জামাত ইজতেমা ময়দানে এসেছেন। খুব ভোরে মিনিবাসে করে রওনা দিয়েছিলেন। সময় যত ঘনিয়ে আসবে ভিড় ততই বাড়বে, তাই খুব ভোরের শীত উপেক্ষা করে মিনিবাসে করে ভোগান্তি ছাড়াই ইজতেমা ময়দানে এসেছেন তারা।

দিনাজপুর থেকে ২৩ জনের তাবলিগের সাথী নিয়ে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন আমজাদ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, সমাজের মসজিদের ১৩ জনের সাথী নিয়ে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন তারা।

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম জানিয়েছেন, মুসলিস্নরা গতরাত (মঙ্গলবার রাত) থেকেই ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। বুধবার সকালের দিকে মুসলিস্ন আসার সংখ্যা বেড়েছে। একদিনেই মাঠ ভরে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

ইজতেমা উপলক্ষে লাখ লাখ মুসলিস্নর নিরাপত্তায়র্ যাব, পুলিশ, আনসারসহ কয়েক হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয় পুরো ইজতেমার ময়দান।

টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে সব ধরনের নিরাপত্তায় আমরা কাজ করছি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার অপরাধ, দক্ষিণ হাফিজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ময়দান ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৫ হাজারের অধিক সদস্য ময়দান ও তার আশপাশে মোতায়েন করা হচ্ছে। এবং ময়দানজুড়ে সিসিটিভি স্থাপন করা হবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মাহবুব আলম জানিয়েছেন, এবারের ইজতেমায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ছয় সহস্রাধিক সদস্য ছাড়াওর্ যাব, ডিএমপি এবং সাদা পোশাক ও গোয়েন্দা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ইজতেমা এলাকায় কোনো প্রকার অবৈধ দোকান এবং হকারদের অবস্থান করতে দেওয়া হবে না।

গাজীপুর ডিসি আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, বিশ্ব ইজতেমায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম করা হবে। এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।

আনুষ্ঠানিকতা ১১ ফেব্রম্নয়ারি

আগামী ৪ ফেব্রম্নয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব। ৯ ফেব্রম্নয়ারি আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্বের মতো একইভাবে ১১ ফেব্রম্নয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের আনুষ্ঠানিকতা।