শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
সা ক্ষা ৎ কা র

যারা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে তাদেরও সেবা পৌঁছানো হবে

নূরুল আজিম, এএমডি, এসবিএসি ব্যাংক লিমিটেড
যাযাদি:দৈনিক
  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যারা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে তাদেরও সেবা পৌঁছানো হবে

বর্তমানে ব্যাংকিং খাত দেশের আলোচিত বিষয়। এ খাতে বিদ্যমান সংকট কাটিয়ে পুনর্গঠনের উদ্যোগ চলছে জোরেশোরে। এছাড়াও খেলাপি ঋণ কমিয়ে এনে পারফরমিং লোন বাড়াতেও চলছে নানা তোড়জোড়। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন চতুর্থ প্রজন্মের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেডের নবনিযুক্ত অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল আজিম। তিনি জানান সমসাময়িক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও তা থেকে উত্তরণে করণীয় নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের স্টাফ রিপোর্টার রেজা মাহমুদ যায়যায়দিনের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা। সম্প্রতি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, শুরুতেই এ বিষয়ে কিছু জানতে চাই? নূরুল আজিম: গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা আগামী জুনে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে নতুন মুদ্রানীতির সুদ হার ৮ শতাংশ করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংক থেকে যে টাকা ধার করবে তার সুদহার বাড়বে। পাশাপাশি এসডিএফ যা রিভার্স রেপো নামে পরিচিত, যার নিম্ন সুদহার ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। বাজারে উদ্বৃত্ত টাকা থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক রিভার্স রেপোর মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়। অর্থাৎ মুদ্রা সরবরাহ সংকোচিত হবে এবং মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে বলে আমি মনে করি। অন্যদিকে নীতি সুদ হার কমিয়ে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে তারল্য সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করলে ব্যয় কম হবে। মোট কথা এবারের মুদ্রানীতি সময় উপযোগী হয়েছে। যাযাদি:দেশের আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতায় নানামুখী সংস্কারের প্রয়োজন বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? নূরুল আজিম:দেখুন সংস্কার একটি সময়সাপেক্ষ ও চলমান প্রক্রিয়া। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণে ঝগঅজঞ ভিত্তিক সুদহার প্রণয়ন করেছে, পাশাপাশি ঋণ আমানতে স্প্রেড সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করেছে। যা বাজার ভিত্তিক সুদহার পরিবর্তনের অংশ। আমি মনে করি, এই পরিবর্তন আরও এক বছর আগে শুরু হলে এখন এর ইতিবাচক প্রতিফলন দেখতে পেতাম। যাই হোক এই পদক্ষেপের প্রতিফলন পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। তবে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সার্বিক ব্যবস্থাপনাই আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি। যাযাদি:বর্তমানে খেলাপি ঋণ ব্যাকিং খাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, পাশাপাশি পারফরমিং ঋণ বাড়াতে চলছে নানা তোড়জোড়, এ বিষয়ে আপনার প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা কি? নূরুল আজিম:পারফরমিং লোন বাড়াতে এসবিএসি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন ঋণ বিতরণে বাড়তি সতর্কতা বিশেষ করে পর্যাপ্ত জামানত গ্রহণে জোর দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে যথাসময়ে ঋণ আদায় খেলাপি ঋণ বাড়তে না দেওয়ার লক্ষ্যে স্ট্রেসড লোন মনিটরিংয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ী ঋণ পুরো ব্যাংকিং খাতের জন্য সমস্যা। এছাড়াও আপাত দৃষ্টিতে ভালো ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় বহুমুখী সংকট তৈরি করছে। আমরা এই সমস্য চিহ্নিত করে ঋণ আদায়ে তৎপরতা বাড়িয়েছি। ইতোমধ্যেই প্রাথমিক সতর্কতা জোরদার করেছি। কোনো গ্রাহক একাধিক কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা, ঝুঁকিপূর্ণ গ্রাহকদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আলোচনার মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাযাদি: যেখানে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষুদ্র ঋণে (গরপৎড় পৎবফরঃ) অনীহা সেখানে করপোরেট সেবার পাশাপাশি আপনারা কৃষি খাতে জামানতবিহীন এবং ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কাজ করছেন। এ নিয়ে আপনাদের ভাবনা জানতে চাই? নূরুল আজিম: আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর দ্বারপ্রান্তে আর্থিক সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে শুরু হতেই এসবিএসি ব্যাংক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রথাগত ব্যাংকিং সেবার পাশাপাশি এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে আসছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর ভিত্তিক ঋণস্থিতিক ১৮৪.০৩ কোটি টাকা। সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক হলো আমাদের প্রদানকৃত ক্ষুদ্রঋণে কোনো শ্রেণিকৃত ঋণ নেই। এসবিএসি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কৃষি ও কৃষকবান্ধব ব্যাংক হিসেবে সহজ শর্তে কৃষি ঋণ বিতরণ করে আসছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকের কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৩৭ কোটি টাকার বিপরীতে প্রদান করা হয়েছে ১৪৪ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮১ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সম্ভাব্য গ্রাহক বাছাই, বিতরণ, সুষ্ঠু ও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে এসবিএসি ফসলি ঋণ, এসবিএসি মৎস্য ও পশু পালন ঋণ এবং এসবিএসি সেচ ও কৃষি সরঞ্জাম ঋণ পণ্য চালু করেছে। এই তিন পণ্যে ৩০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া জামানতে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়ে থাকে। যাযাদি: বর্তমান ডলার সংকট ও পরিস্থিতি উন্নয়নে বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও করণীয় কি? নূরুল আজিম: বৈদেশিক মুদ্রা বাজার ও মূল্যস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ভূমিকা অনেক। আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রার হার খোলাবাজারের ওপর নির্ভরশীল নয়। তবে আশার কথা হলো, নতুন মুদ্রানীতিতে এর বিনিময় হার 'ক্রলিং পেগ' নামক ব্যবস্থা কার্যকর করতে যাচ্ছে, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার একটি নির্ধারিত করিডোর ভিত্তিক হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপের সুযোগও থাকবে। যার ফলে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। যাযাদি: চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ গ্রাহকসেবা দিচ্ছেন এর পরিসর আরও বাড়বে কিনা? নূরুল আজিম: এসবিএসি ৮৯টি শাখা, ২৭টি উপশাখা, ২৭টি এজেন্ট এর সমন্বয়ে গ্রাহক সেবা প্রদান করছে। এ বছরও আমাদের সেবার পরিধি আরও বাড়ানো হবে। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আরও কিছু শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিং আউট লেট স্থাপন করা হবে। যাযাদি:আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে