শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

তাড়াশে সন্তানসহ দম্পতি খুন পরিবারে শোকের মাতম

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তাড়াশে সন্তানসহ দম্পতি খুন পরিবারে শোকের মাতম

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় নিজ বাড়িতে সন্তানসহ এক দম্পতিকে গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার পৌর শহরের বারোয়ারী বটতলা এলাকার তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলার বাসার দরজার তালা ভেঙে তাদের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন- বিকাশ সরকার (৪৬), তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৪২) ও তাদের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া সন্তান পারমিতা সরকার তুষি (১৫)।

তাড়াশ থানার ওসি (তদন্ত) মো. নূরে আলম বলেন, 'নিহতের স্বজনরা গত দুইদিন ধরে তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে বাসায় গিয়ে বাইরে থেকে তালা ঝোলানো দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। আমরা ঘরের তালা ভেঙে দেখতে পাই তাদের কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হয়েছে।'

তিনি জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নিহতদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করতে শুরু করেন। প্রশাসনের বেশ কয়েকটি ইউনিট ইতোমধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটনে আলামত সংগ্রহ এবং তদন্ত শুরু করেছেন। ওই বাড়ির ভেতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ।

নিহত বিকাশের বড় ভাই ও তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, 'বিকাশ পরিবার নিয়ে কোথাও গেলে আমাকে কিছুই বলে যেত না। শনিবার থেকে তার ফ্ল্যাটে তালা ঝুলতে দেখছি। তিন দিনেও কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে মঙ্গলবার ভোরে প্রতিবেশীদের ডেকে এনে দেখাই ও পুলিশকেও জানাই।'

নিহতের বোন জামাই সমির কুমার দাস জানান, রাজশাহীর পুঠিয়ায় বিকাশের ভাগ্নি রিমির বিয়ে হয়। স্বামীর বাড়ির লোকেরা রিমিকে মারধর ও নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনায় ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে বিকাশ বাদী হয়ে ভাগ্নি জামাই সুব্রত ও শ্বশুর বাড়ির বাকি স্বজনদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

ওই মামলায় সুব্রত বর্তমানে জেলে আছে। শুনেছি, রিমির জামাই বাড়ির লোকজন বেশি ভালো না, খারাপ প্রকৃতির। তারাও এ হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে- যোগ করেন তিনি।

সমির বলেন, 'শ্বশুরের বিশাল সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে বিকাশদের দুই ভাইয়ের মধ্যেও দ্বন্দ্ব রয়েছে। এসব বিষয়ে বেশ কয়েকবার পারিবারিকভাবে সালিশও হয়েছে, কিন্তু সমাধান হয়নি। এ কারণে দুই ভাইয়ের মধ্যে কথা বলাও বন্ধ ছিল। এই শত্রম্নতা থেকেও হত্যাকান্ড ঘটতে পারে। আসলে আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।'

বিকাশ 'ভদ্র স্বভাবের' ছিলেন এবং এলাকায় তার কোনো 'শক্র নেই' জানিয়ে তাড়াশ উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাবেক সভাপতি তপন গোম্বামী বলেন, 'শনিবার বিকালে দেশীগ্রাম ইউনিয়নের শিব মন্দিরে সভায় এসেছিলেন বিকাশ। কিছুক্ষণ পর তিনজন ব্যক্তির সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে দেখা করতে হবে জানিয়ে সভা শেষ হওয়ার আগেই বাড়ির দিকে চলে যান। এরপর বিকাশের সঙ্গে আর দেখা হয়নি।'

তিনি বলেন, 'সোমবার রাতে বিকাশের বোন জামাই শেরপুরের চন্ডি বাবু আমাকে ফোন করে জানায়, তারা বিকাশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না, সবাই শঙ্কায় রয়েছে। এরপর তার ছেলেকে শেরপুর থেকে আমার কাছে পাঠায়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিকাশের বাসায় গিয়ে দরজায় তালা লাগানো দেখি।'

তার ভাষ্যে- 'ওই সময় বিকাশের মোবাইলে কল দিলে ঘরের ভেতর ফোন বাজার শব্দ পাই। এতে আমরা আতঙ্কিত হয়ে থানায় খবর দিই। পুলিশ এসে তালা ভাঙলে বিছানা ও মেঝেতে তিনজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখি।'

তাড়াশ পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, রোববার রাত থেকে সোমবার দিনের মধ্যে কোনো এক সময় তিনজনকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সামিউল ইসলাম বলেন, 'বিকাশের নিজের পরিবার, ভাগ্নি জামাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব আছে কী-না মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। আমরা ওই ভবনের নিচের দুই তলার ভাড়াটিয়া, আশপাশের লোকজন ও নিহতদের স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। পুলিশের কয়েকটি দল এতে কাজ করেছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে