কুমিলস্না সিটির উপনির্বাচন

আলোচনায় বড় দুই দলের এক ডজন প্রার্থীর নাম

প্রকাশ | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

মো. আবদুল জলিল ভুঁইয়া, স্টাফ রিপোর্টার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই কুমিলস্না সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে মেয়র পদে আলোচনায় উঠে এসেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এক ডজন প্রার্থীর নাম। সিটি নির্বাচনের দেড় বছরের মাথায় এই উপনির্বাচনে এরই মধ্যে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই মধ্যে মাঠ গোছানোর কাজ শুরু করেছেন তারা। নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক নেতাদের অনেকেই ফেসবুকে দোয়া চেয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। কর্মীরাও বসে নেই। তারা পছন্দের নেতার পক্ষে পোস্ট দিচ্ছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কে কে থাকবেন ভোটের লড়াইয়ে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে 'বিভেদ এড়াতে এবং ভোটকে উৎসবমুখর করতে' দলীয় প্রতীকে মনোনয়ন না দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত ক্ষমতাসীন দলটির। কুমিলস্না সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচন এবং ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকেই দলীয় প্রার্থীদের প্রতীক দেবে না আওয়ামী লীগ। ফলে দলীয় প্রতীকা ছাড়া সিটি নির্বাচনে বিজয় আনতে হলে প্রার্থীদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। ২০১১ সালের ১০ জুলাই কুসিকের যাত্রা শুরুর পর ২০১২ সালের প্রথম নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী প্রয়াত অ্যাডভোকেট আফজল খানকে হারিয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। ২০১৭ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে হারিয়ে বিজয়ী হন সাক্কু। সবশেষ ২০২২ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে কুমিলস্না মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক সাক্কুর চেয়ে তিনি ৩৪৩ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। রিফাত ছিলেন কুমিলস্না সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়র। ওই বছরের ৭ জুলাই তিনি মেয়রের দায়িত্ব নেন। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়। তাই আসন্ন উপনির্বাচনে কে হবেন তার স্থলাভিষিক্ত, তা নিয়ে দলীয় ফোরাম ও সচেতন মহলে বেশ আলোচনা চলছে। আরফানুল হক রিফাতের মৃতু্যতে ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিলস্না সিটির উপনির্বাচনে অংশ নিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম, কুমিলস্না দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও কুমিলস্না ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি শফিকুল ইসলাম সিকদার, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আতিক উলস্নাহ খোকন, দলের উপদেষ্টা ও ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিনের জ্যেষ্ঠ কন্যা তাহসীন বাহার সূচনা, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান মিঠু, এফবিসিআইয়ের পরিচালক ও কুমিলস্না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ডা. আজম খান নোমান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. মাহবুবুর রহমান ও প্রয়াত মেয়র আরফানুল হক রিফাতের স্ত্রী অধ্যাপিকা ফারহানা হক শিল্পী। অন্যদিকে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'দলীয় প্রতীক না থাকলেও প্রার্থিতার বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দলীয় সভা থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আশা তো আছেই।' কুসিকের দুই বারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, 'দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও নগরীতে আমার অনেক অনুসারী ও মুরব্বি আছেন, যারা বিগত সময়েও আমার পাশে ছিলেন। তাই সবার সঙ্গে কথা বলছি, অনেকেই নির্বাচন করতে ইতিবাচক মতামত দিচ্ছেন।' জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, 'আমি এখন দলের বাইরে। যেহেতু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না, তাই নগরবাসীর দোয়া নিয়ে স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচন করব ইনশা আলস্নাহ।' মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আতিক উলস্নাহ খোকন বলেন, 'আমাদের অভিভাবক সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। প্রতীক না থাকলেও দলের সমর্থন যার জন্য থাকবে তাকে নিয়ে আমরা কাজ করব।' তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৩ ফেব্রম্নয়ারি। যাচাই-বাছাই ১৫ ফেব্রম্নয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি ১৯ ও ২০ ফেব্রম্নয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২২ ফেব্রম্নয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ ফেব্রম্নয়ারি। ভোটগ্রহণ ৯ মার্চ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। বর্তমানে কুমিলস্না সিটিতে দুই লাখ ৪২ হাজার ভোটার রয়েছেন।