অমর একুশে বইমেলা শুরু কাল
থাকছে ৯৩৭ স্টল ও ৩৭ প্যাভিলিয়ন
প্রকাশ | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ঢাবি প্রতিনিধি
আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের অমর একুশে বইমেলা। এবারও বইমেলার প্রতিপাদ্য- 'পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ'। বাঙালির প্রাণের এ উৎসবে এবার বাড়ছে প্রকাশনা সংস্থা। এ বছর ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠান ৯৩৭টি ইউনিটে তাদের বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসবে। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দেড় শতাধিক স্টলে বসবেন লিটলম্যাগ সম্পাদকরা। ২০২৩ সালের বইমেলায় অংশ নিয়েছিল ৬০১ প্রতিষ্ঠান। সেই হিসাবে এবার প্রকাশনা সংস্থা বেড়েছে ৩৪টি।
মঙ্গলবার সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এবারের আয়োজন নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, 'এবারের বইমেলা হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। মেলায় ৩৭টি (একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি) প্যাভিলিয়ন থাকবে।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব জানান, 'উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত 'কালেক্টেড ওয়ার্কস অব শেখ মুজিবুর রহমান : ভলিউম-২'সহ কয়েকটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ২০২৩ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিতরণ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার বইমেলায় গতবারের বিন্যাস অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। তবে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গত বছরের মেলার 'বাহির' পথ এবার একটু সরিয়ে কালীমন্দির গেটের কাছাকাছি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং পস্নান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট আটটি প্রবেশ ও প্রস্থান পথ রাখা হয়েছে। মেলার দুটি গেট প্রথম দিন এবং বাকিগুলো পরে খুলে দেওয়া হবে।
খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা-ঘেঁষে রাখা হয়েছে। এবার এমনভাবে খাবারের স্টলগুলো বিন্যস্ত করা হয়েছে যেন বইমেলায় আসা পাঠকের মনোযোগ বিঘ্নিত না করে। নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবাও থাকছে।
এবারও মন্দির গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে শিশুচত্বর, যাতে শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৭০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বইমেলার প্রবেশ ও প্রস্থান পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র?্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকায় তিন শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে।
মেলা প্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধুলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।
বইমেলার সময়সূচি
২০২৪ সাল লিপইয়ার বা অধিবর্ষ। ফলে মেলার মাস ফেব্রম্নয়ারি পাবে ২৯ দিন। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় 'শিশুপ্রহর' থাকবে। প্রতিদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে।
২১ ফেব্রম্নয়ারি শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে।
বইমেলায় পুরস্কার
অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে 'চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার' এবং ২০২৩ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে 'মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার' দেওয়া হবে।
এছাড়া ২০২৩ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে 'রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার' এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে 'কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার' দেওয়া হবে।
২০০৬ সালের পর এবার ফের বাংলা একাডেমি এককভাবে বইমেলা আয়োজন করছে, এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে বিকাশ। এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০০টি বই।
স্থান পরিবর্তন হবে না : মহাপরিচালক
সংবাদ সম্মেলনে বইমেলার দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজায়ন বৃদ্ধি করতে আগামী বছর থেকে বইমেলা অন্য কোথাও করার কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বইমেলার স্থান পরিবর্তন হবে না। বাংলা একাডেমির সঙ্গে সংযোগ রেখেই মেলা হবে। বাংলা একাডেমির দীর্ঘতম স্মৃতি হচ্ছে এই প্রাঙ্গণের মেলা। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক থাকাকালে আমি সর্বোতভাবে চিন্তা করব এখানেই বইমেলা করার।'
কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার পুরস্কার ফেরত প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, 'তিনি বাংলা একাডেমির অসঙ্গতির প্রসঙ্গ টেনে এক লাখ টাকার চেক ফেরত পাঠিয়েছেন। এখানে গণতন্ত্রহীনতা শুরু হয়েছে ২০০১ সাল থেকে। সেবার বাংলা একাডেমিতে যে নির্বাচন প্রক্রিয়া তাতে ফেলোর সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে না। ২০১৪ সালে এই গণতন্ত্রহীন অবস্থায় তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন।'
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা তৈরি হয়েছে এবং আচরণবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। 'অগণতান্ত্রিক' কথাটি থেকে আমরা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি। আগামী পহেলা বৈশাখের আগে এটা সম্ভব হবে। জাকির তালুকদারের বিষয়টি নিয়ে কাউন্সিলে আলোচনা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে, বাংলা একাডেমির সচিব মো. হাসান কবীর, জনসংযোগ-তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সমীর কুমার সরকার, বইমেলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের সিএমও মীর নহবত আলী উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তা কবি পিয়াস মজিদ।