নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সরকারের দুই মন্ত্রণালয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও পুলিশ ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। এতে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।
সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে 'সড়ক দুর্ঘটনার বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যান নিয়ে' এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা ও প্রস্তাব তুলে ধরে নিসচা। সেখানে নিসচা এসব কথা জানায়।
তথ্য প্রকাশ না করার কারণ হিসেবে নিসচা আরও বলেছে, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে অন্যদের তথ্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অগ্রহণযোগ্য বলে দাবি করে। পাশাপাশি বিআরটিএ দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার জন্য উদ্যোগী হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, তা কারও প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সরকার, পুলিশ ও বিভিন্ন রিপোর্টে ভিন্নতা রয়েছে। এতে জাতি বিভ্রান্ত হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের সব তথ্যকে অগ্রহণযোগ্য বলে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে সরকারের উচ্চমহলেও কথা হয়েছে বলে জানান ইলিয়াস কাঞ্চন। সরকার যেহেতু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার জন্য উদ্যোগী হয়েছে, তাই তার সংগঠন থেকে আর এ তথ্য প্রকাশ করবেন না বলে জানান তিনি।
তবে নিজস্ব গবেষণার জন্য নিসচা কাজ করবে বলেও জানান ইলিয়াস কাঞ্চন। সরকার যদি তাদের সহায়তা ও আর্থিক বরাদ্দ দেয়, তাহলে একসঙ্গে কাজটি সঠিকভাবে করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
নিসচার লিখিত বক্তব্যে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সারা বিশ্বের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করে থাকে। তাদের 'গেস্নাবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩'-এ বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্য হয়েছে ২১ হাজার ৩১৬ জনের। তবে পুলিশের রিপোর্টে দুই হাজার ৩৭৬ জনের মৃতু্যর কথা বলা হয়েছে। একইভাবে ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে ২৪ হাজার ৯৪৪ জনের মৃতু্যর কথা বলা হলেও পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মৃতু্য হয়েছে দুই হাজার ৬৩৫ জনের। ২০২১ সালের রিপোর্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৃতের সংখ্যা ৩১ হাজার ৫৭৮।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০১৬ সালে প্রতি লাখে মৃতু্যর হার ছিল ১৫ দশমিক ৩ এবং ২০২১ সালে এই মৃতু্যর হার ছিল প্রতি লাখে ১৯ জনের মতো।
সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, ২০২৩ সালে ৫ হাজার ৪৯৫ সড়ক দুর্ঘটনায় সারাদেশে নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ২৪ জন। পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই বছর ৫ হাজার ৯৩ দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৪৭৫ জন নিহত হয়েছেন। আরও দুই-একটি সংগঠনের তথ্যও এর চেয়ে
অনেক বেশি।
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য ও সড়ক বিভাগের তথ্য ভিন্ন কেন, সে প্রশ্ন রয়েছে। নিসচা চায় স্বাস্থ্য, সড়ক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তথ্য প্রকাশ করুক। তাহলে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ হবে না।