আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কথায় কথায় কাউকে (ব্যবসায়ী) ধমক দিলে সমস্যা সমাধান হবে না' যারা এর জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে আমাদের পজিটিভ অ্যাকশনে যেতে হবে।' সোমবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন। ব্যবসায়ীরা কথা রাখবেন কিনা, জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, 'ব্যবসায়ীরা কথা রাখবে, মিষ্টি কথায় তো চিড়ে ভিজে না। কথা যেভাবে বলতে হয় সেভাবেই বলতে হবে আমাদের। যে অ্যাকশনের দরকার সে অ্যাকশন নিতে হবে। শুধু হুমকি-ধমকি দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। এখানে অ্যাকশন নিতে হবে, কৌশল অবলম্বন করতে হবে। কারণ আমাদের দেশের যে বাস্তবতা, সবকিছু ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করা যায় না। কিছু কিছু কৌশলেও যেতে হবে এবং সেটা উপলব্ধি করতে হবে।' দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সামনে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'এখন আমাদের প্রায়োরিটি হচ্ছে দ্রব্যমূল্য। বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টা চ্যালেঞ্জ। সংসদে যারা তারা জনগণের প্রতিনিধি। এ সমস্যাগুলো এখন জনগণের নিত্যদিনের সমস্যা, কাজেই প্রথম চ্যালেঞ্জ এখন এটাই।' ওবায়দুল কাদের বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের ইতিহাস ডিঙিয়ে তারা যে বিকৃত তথ্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অপপ্রচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল, তাদের সে অপচেষ্টা সফল হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দেশে-বিদেশে সসম্মানে উচ্চারিত একটি নাম।' বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খানকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'মঈন খান সাহেবদের দল ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে, তারপর ৩ নভেম্বর, একুশে আগস্টে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাইম টার্গেট করে হামলার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে তারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজাকার, আল বদরের দল। গর্হিত বক্তব্য দেওয়ার জন্য মঈন খানকে ক্ষমা চাইতে হবে জাতির কাছে।' তিনি আরও বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের সময় মঈন খান ও তার দলের লোকজন কোথায় ছিল' প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, 'তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়া পাকিস্তানি চর হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন কিনা সেটাই আজকে প্রশ্ন। বাংলাদেশের প্রথম সরকার তথা মুজিবনগর সরকারের অধীনে নিয়মিত বেতন-ভাতা ভোগ করতেন জিয়াউর রহমান। ইতিহাস বিকৃতি করলে তার পরিণতি কারও জন্য ভালো হয় না। বিএনপি প্রমাণ করেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিশ্বস্ত ঠিকানা হচ্ছে এই দল। বিএনপি এখনো সেই লিগেসি বহন করে চলছে।' আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'একেকবার একেকটা নিয়ে বিএনপি আজকে অপপ্রচার করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আজকে দেশের কারাগারগুলোতে তাদের সবমিলিয়ে ১০ হাজারের মতো বন্দি আছে। অথচ তারা আজকে জাতিসংঘ ও মার্কিন কংগ্রেসম্যানের কাছে অপপ্রচার করেছে। মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে তাদেরকে দিয়ে বলাচ্ছে যে, বাংলাদেশে বিএনপির ২৫ হাজার নেতাকর্মী জেলে আছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে।' মার্কিন নির্বাচন প্রসঙ্গে কাদের বলেন, 'আমেরিকার নির্বাচন হচ্ছে দ্বিদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, এটা তাদের জন্মগতই। একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট হয়েছে, এটার কোনো দাম সেখানকার জনগণের কাছে নেই। সেখানে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা আছে। এবং তাদের মধ্যে মামলা মোকদ্দমা রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন জনপ্রিয়তায় সবচেয়ে এগিয়ে। তার বিরুদ্ধে ৯১টা মামলা রয়েছে। তিনি প্রতিনিয়ত মামলা ফেস করছেন।' বাইডেন বলেছেন, 'আমেরিকার গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য পুনর্বার ইলেকশনে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্র রক্ষা করব।' এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে আমরা কী কূটনীতিতে করব। আমরা আমাদের নিয়ে আছি।' স্থানীয় নির্বাচন থেকে দলীয় প্রতীক সরিয়ে দেওয়া- এটা কি দলীয় কোন্দল নিরসনের জন্য, নাকি বিএনপির যারা নির্বাচনে আসতে পারেনি, তাদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি যদি বলি কোন্দল নিরসনের জন্য আমাদের কৌশল নিতে হয়েছে। ইলেকশনে আমরা কৌশল নিয়েছি। স্বতন্ত্রদের ইলেকশন করতে দিয়েছি। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিল তারা নির্বাচন করেছে। সে কৌশলের তো বিজয় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই নতুন চমকের বিজয় তো হয়েছে।' অনেকে বলছে লোকজন কেন্দ্রে আসবে না জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'কত ভোটার অংশ নিয়েছে এটা তো এখন পরিষ্কার। এখানে রাখঢাক করার তো কিছু নেই। এটা আমাদের একটা কৌশল। আমরা এই কৌশলটা নিয়েছি আমাদের দলের ভালোর জন্য এবং কিছুটা জনদাবির মুখে। আমাদের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকেও এই দাবিটা এসেছে উপজেলা নির্বাচনে প্রতীক না দেওয়ার জন্য। আমাদের ওয়ার্কিং কমিটিরও অনেকে একমত পোষণ করেছেন। সে মোতাবেক আমাদের নেত্রী তাদের দাবি পূরণ করেছেন।' তিনি বলেন, 'অলমোস্ট আমাদের বেশিরভাগ সীমান্ত ভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এদিকে মিয়ানমারের কিছু অংশ, বাকিটা ভারত দ্বারা বেষ্টিত। ভারত আমাদের চেয়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তিসহ বহু বিষয়ে এগিয়ে। একটি শক্তিধর দেশ। এখন বিশ্বে ভারতের যে পজিশন সেটা প্রায় পরাশক্তির পর্যায়ে। ভারতের সঙ্গে ঝগড়া করে আমাদের কোনো লাভ নেই। তাদেরও এখানে ইন্টারেস্ট আছে, আমাদেরও আছে। ক্রস বর্ডার টেরোরিজম নিয়ে উদ্বেগ তাদেরও আছে, আমাদেরও আছে।' ব্রিফিংয়ের আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা প্রমুখ।