শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এবার গবেষণায় তিমির কঙ্কাল

জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
কক্সবাজারের হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতের বালুচরে পুঁতে রাখা তিমির কঙ্কাল -সংগৃহীত

দীর্ঘ ২ বছর ৯ মাস পর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হিমছড়ির বালিয়াড়িতে পুঁতে রাখা বিশাল আকৃতির একটি তিমির কঙ্কাল উত্তোলন করা হয়েছে। সৈকতে ৬ দিনের খনন কাজের মধ্যে কঙ্কাল সংগ্রহের কাজে নামেন কক্সবাজার বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। শিক্ষা ও গবেষণায় কাজে লাগাতে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বোরি) তিমির কঙ্কালটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। পরে কঙ্কালটি প্রতিস্থাপন করে গবেষণার জন্য সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এতে করে সমুদ্র সম্পর্কে যেমন মানুষ জানতে পারবে এবং গবেষণার প্রতিও উদ্বুদ্ধ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র মতে, গত ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল সমুদ্রের জোয়ারের সঙ্গে ৪৪ ফুট দীর্ঘ একটি মরা তিমি সৈকতে হিমছড়ি পয়েন্টে ভেসে আসে। তিমিটির ওজন ছিল প্রায় ৯ মেট্রিক টন, দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। পরে বনকর্মীরা তিমিটি সৈকতের বালিয়াড়িতে পুঁতে ফেলে। তার আগের দিন ৯ এপ্রিল সৈকতের চার কিলোমিটার উত্তরে ৪

দরিয়ানগরে আরও একটি ৪৮ ফুট দীঘ মৃত তিমি ভেসে আসে। পরে অবশ্য সেই তিমিটিও সমুদ্রকূলে গর্ত করে পুঁতে ফেলা হয়।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, গবেষণা কাজে সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) কর্তৃপক্ষ তিমি দুটির কঙ্কাল উত্তোলনের জন্য বন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে তিমি দুটির কঙ্কাল দুই প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিমির এই কঙ্কালটি শিক্ষা ও গবেষণার কাজের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হবে বোরি ল্যাবে।

ড. তৌহিদা রশীদ আরও বলেন, পৃথিবীতে ৭৯ থেকে ৮৪ প্রজাতির তিমি রয়েছে যার মধ্যে ব্রাইডস তিমির প্রজাতি রয়েছে ৩-৪টি, যারা ইন্দো-প্যাসিফিক সমুদ্র অঞ্চলে বিচরণ করে। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে আসা তিমিটি ব্রাইডস প্রজাতির। যার বৈজ্ঞানিক নাম বেলিনিওপটেরা ইডিনি। গবেষণার উদ্দেশ্যে তিমির কঙ্কাল বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্যও উন্মুক্ত থাকবে। সমুদ্রকে জানতে ও বুঝতে এটি মানুষের মধ্যে আগ্রহের সঞ্চার করবে এবং পাশাপাশি সমুদ্রের জীব বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে এই কার্যক্রমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিজ্ঞানীদের দেয়া তথ্য মতে, তিমি দুটির নমুনা সংগ্রহ করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজিতে (এনআইবি) পরীক্ষার জন্য পাঠায়। প্রতিবেদনে তিমি দুটি ব্রাইড'স হুয়েল বা বলিনোপেট্রা ইডেনি প্রজাতির বলে চিহ্নিত হয়েছে। ৯ এপ্রিল ভেসে আসা তিমিটি নারী লিঙ্গের এবং ১০ এপ্রিল ভেসে আসে তিমিটি পুরুষ লিঙ্গের। পরে তিমি দুটোর কঙ্কাল গবেষণার উদ্দেশ্যে সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) কর্তৃপক্ষ বন মন্ত্রণালয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে তিমি দুটোর কঙ্কাল প্রতিষ্ঠান দুটিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনার প্রেক্ষিতে গত ২২ জানুয়ারি তিমিটির কঙ্কাল ১৭০টি হাড় উত্তোলন করা হয়। বিশেষজ্ঞ দল পরে এসব হাড় জোড়া দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তিমির কঙ্কাল তৈরি করেন।

সমুদ্র সৈকতে কঙ্কাল উত্তোলন গ্রম্নপের সদস্য নাজমুল হোসেন বলেন, কাজটি খুবই কঠিন ছিল। দুর্গন্ধ ছিল সতর্কতার সঙ্গে একটা একটা করে কঙ্কাল হাড় সংগ্রহ করি। জীবনে অনেক কাজ করেছি কিন্তু এই ধরনের কাজ প্রথম। ১০ ফুট গর্তে থাকা তিমির বড় কঙ্কাল দেখে খুবই অবাক লেগেছিল। হাড়গুলো এক এক খুঁজতে গিয়ে অনেক কষ্ট হয়েছে। গর্তে খুঁজে পাওয়া তিমির হাড়গুলো একটি একটি করে উপরে তুলে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে জোড়া লাগিয়েছি। কাজ যখন সমাপ্তি ঘটে তখন কঙ্কাল হাড়গুলো জোড়া লাগার পর বিশাল একটি তিমির কঙ্কাল দেখে মনে হচ্ছিল কোন ডাইনোসরের কঙ্কাল। তখন বড় উৎফুলস্ন হই।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ বলেন, সাগরের বুকে অপার সম্ভাবনা এবং অনেক সম্পদ লুকিয়ে আছে। আমরা সেগুলো নিশ্চিতকরণ করব। বিশেষ করে সমুদ্রে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির তিমির বিচরণ, তারা কী খাচ্ছে- এগুলোর উপর অনেক গবেষণা রয়েছে। সাগরে থাকা তিমিগুলো যে পরিমাণ পস্নাস্টিক হজম করছে সে পস্নাস্টিকগুলো আমরা খাচ্ছি। যা ক্যান্সারের একটি বড় উৎস। তাই শিক্ষার্থীরা গবেষণার মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারবে। উদ্ধার করা বিশাল তিমির কঙ্কালটি বিশেজ্ঞদের মাধ্যমে জোড়া লাগিয়ে পরিপূর্ণ রূপ দেওয়া হয়েছে। গবেষণার উদ্দেশ্যে তিমির কঙ্কালটি হিমছড়িতে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কঙ্কাল উত্তোলনে অংশগ্রহণ করেন, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বোরি) বিজ্ঞানীরা তাদের মধ্যে আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার মো জাকারিয়া, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার মো. হানিফ বিশ্বাস, সায়েন্টিফিক অফিসার এবং বিওআরআই'র অন্যান্য সহযোগীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে