তীব্র শীতে কাঁপছে তেঁতুলিয়া

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগি, ২৮ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ, মাসের শেষে বৃষ্টির সম্ভাবনা

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
শৈত্যপ্রবাহের তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে কাজে যাচ্ছেন এক দিনমজুর -সংগৃহীত
দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বয়ে চলা শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে আরও নেমেছে তাপমাত্রার পারদ। রোববার সকালে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমের পাশাপাশি গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগসহ দেশের মোট ২৮ জেলায় এখন মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। তবে তাপমাত্রা আর কমার আশঙ্কা নেই। আজ থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করতে পারে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, দেশের বড় এলাকাজুড়ে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আবহাওয়াবিদরা জানান, তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় পরপর দুই দিন পারদ ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তাই পঞ্চগড়ের পরিস্থিতিকে এখনই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলছে না আবহাওয়া অফিস। গত শুক্রবারও তেঁতুলিয়ার ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে গত মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জে ৬.৬ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছিল। আর রোববার সকাল পর্যন্ত ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সবশেষ ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমে যায় ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি দিনাজুপুরে ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসার রেকর্ড রয়েছে। স্বাধীনতার আগে ১৯৬৮ সালে শ্রীমঙ্গলে ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার একটি রেকর্ড রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ-বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বৃষ্টিপাতের বিষয়ে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। কুয়াশার বিষয়ে বলা হয়েছে, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং দেশের অন্যত্র কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ চলাচল ব্যাহত হতে পারে। পাশাপাশি সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা :পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়া প্রতিনিধি জানান, রোববার সকালে রেকর্ড হওয়া ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা গত পাঁচ বছরের মধ্যে পঞ্চগড়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিসের হিসেবে এটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। শনিবারও এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ছিল মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে। এর আগে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারও আগে ২০১৯ সালের দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল তেঁতুলিয়ায়। রোববার সূর্যোদয়ের পরই রোদের দেখা মেলে। দিনভর ঝলমলে কড়া রোদে কমে যায় শীতের দুর্ভোগ। আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ সোমবার থেকে প্রতিদিনই রাতের তাপমাত্রা বাড়বে। এতে শীতের তীব্রতা কমে আসবে আর ধীরে ধীরে বিদায় নেমে শীত। তীব্র শৈত্যপ্রবাহে জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ থাকলেও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান স্বাভাবিকভাবেই চলেছে। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় শনিবার সন্ধ্যায় কুয়াশা কম থাকলেও মধ্যরাতে তা বাড়ে। এর সঙ্গে উত্তরের কনকনে শীতল বাতাসে প্রচন্ড শীত অনুভূত হতে থাকে। রাতের এ সময়টাতে সবাই ঘুমিয়ে থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হয়নি পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষগুলোর। রোববার সকালে প্রচন্ড শীত অনুভূত হতে থাকলেও সূর্যের দেখা মেলায় ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হাফ ছেড়ে বাঁচে সবাই। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, 'রোববার গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়। আজ সোমবার থেকে প্রতিদিনই রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। ধীরে ধীরে বিদায় নেবে শীত।' চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা :চুয়াডাঙ্গা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, তাপমাত্রা নেমেছে ৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। কনকনে শীত, ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। আগামী বুধবার চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে জেলা আবহাওয়া অফিস। এদিকে চুয়াডাঙ্গার তিন উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ সদর হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত রোটাভাইরাস ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। সঙ্গে শিশুদের নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৪৫০-৫০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জামিনুর রহমান বলেন, 'চুয়াডাঙ্গায় টানা দু'দিন শৈত্যপ্রবাহের পর মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। রোববার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী বুধবার ৩১ জানুয়ারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।' যশোরে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ স্টাফ রিপোর্টার, যশোর জানান, গত কয়েক দিনের তুলনায় তাপমাত্রা আবারও কমেছে। রোববার জেলায় এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলাজুড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর আগের দিন শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটির আবহাওয়া দপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা একই রকম থাকতে পারে এবং দুই-একদিন পর বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, তাপমাত্রা কম থাকায় ভোরে শীতের অনুভূতি হয়। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা মেলে। ফলে শীতের কষ্ট কিছুটা কমে যায়। যশোর শহরের দড়াটানা মোড়ে ইজিবাইক চালক আব্দুল আজিজ জানান, সকাল থেকে কুয়াশা আর বাতাসের কারণে শীত থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের দেখা মেলায় দিনের বেলা তেমন শীত অনুভূত হয়নি। যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, 'শীতে ঠান্ডাজনিত রোগ বিশেষ করে সর্দি, কাশি, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, কোল্ড ডায়রিয়া এবং পানি কম পান করায় প্রস্রাবের সংক্রমণ জাতীয় রোগ হতে পারে।' এ থেকে পরিত্রাণ পেতে কুসুম গরম পানি পান, গরম কাপড় পরিধান, পচা-বাসি খাবার না খাওয়া, কুয়াশায় বাইরে না বের হওয়া, বাচ্চাদের দুই-একদিন পর গোসল করানোর পরামর্শ দেন। আর অবস্থা খারাপ হলে জরুরিভাবে নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে বলেন।