শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

তেজগাঁও থানার ওসি সেজে প্রতারণা অতঃপর ধরা

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তেজগাঁও থানার ওসি সেজে প্রতারণা অতঃপর ধরা

ঢাকার তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন সেজে প্রতারণাকারী আলোচিত সেই প্রতারক আনোয়ার শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার প্রতারক ৭৭১ জন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। পুলিশের ভাবমূর্তি পরিকল্পিতভাবে নষ্ট করতেই সাইবার জগতে এমন প্রতারণার ফাঁদ পেতে ছিল কিনা সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।

শুক্রবার দিবাগত রাতে ঢাকার তেজগাঁও থানা পুলিশ গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন ইসলাম প্রিন্টিং প্রেসে অভিযান চালিয়ে আনোয়ার হোসেন (৩০) নামে ওই সাইবার প্রতারককে গ্রেপ্তার করে।

এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন যায়যায়দিনকে বলেন, গ্রেপ্তার আনোয়ারের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন খোলাবাড়িতে। তার পিতার নাম সাইদুর হোসেন। গ্রেপ্তার আনোয়ার আমার নামে (তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন) প্রতারণা করে আসছিল। আমার নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলে। ফেসবুক আইডিতে তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ

মহসীনের মূল আইডির অনুরূপ ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করেছে। ম্যাসেঞ্জারে সেই আইডি থেকে আনোয়ার ওসি মহসীন পরিচয়ে ৭৭১ জন মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। কোনো কোনো মেয়ের সঙ্গে আপত্তিকর কথাবার্তাও বলতেন। এমনকি আপত্তিকর ছবিও আদান-প্রদান করতেন। অনেকের কাছ থেকে ওসি পরিচয়ে বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার কথা বলে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি নজরে আসার পর পরই আনোয়ারকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়।

তিনি আরও জানান, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন আনোয়ার। প্রতারকের খপ্পরে পড়া নারীদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থী, গৃহিণী, প্রবাসী ও মডেল কন্যাসহ অনেকেই। হোয়াটসঅ্যাপেও তাদের সঙ্গে কথা বলতেন। তবে কথা বললেও কারও সঙ্গে ভিডিও কলে কর্থা বলতেন না। কেউ সন্দেহ করলে তাকে বস্নক করে দিতেন। আনোয়ার মূলত ওই প্রিন্টিং প্রেসে চাকরি করতেন। চাকরির ফাঁকে ফাঁকে ইউটিউব দেখে দেখে ফেসবুকের বিভিন্ন কলাকৌশল শিখেছেন। খোলাবাড়ি গ্রাম ও পাশের দাশ বেকারি মোড় এলাকায় আনোয়ার 'ফেসবুক মাস্টার' নামে পরিচিত। আইডি, পাসওয়ার্ড হারিয়ে গেলে তা উদ্ধার করা, পেজ ভেরিফিকেশন, রিপোর্ট কিংবা স্ট্রাইক খাওয়া পেজ রিকভারসহ ফেসবুকের যে কোনো সমস্যার সহজ সমাধান করতে পারেন আনোয়ার। যাদের পাসওয়ার্ড বা ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার পর উদ্ধার করে দিতেন, স্বাভাবিক কারণেই তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠত। আর পাসওয়ার্ট লিখে রাখতেন। এরপর আনোয়ার সেই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ফেসবুক চালাতেন। বিশেষ করে যেসব আইডি একটু পুরনো হয়েছে সেসব আইডির নাম পরিবর্তন করেই গণ্যমান্য ব্যক্তির নামে ভুয়া আইডি খুলতেন। এসব ভুয়া আইডি রিপোর্ট করে বন্ধ করলেও কিছুদিন পর আবারও তা উদ্ধার করতেন আনোয়ার।

এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহা বলেন, বর্তমানে সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে প্রতারণা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এসব প্রতিরোধে ডিএমপির প্রতিটি ইউনিট প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

গ্রেপ্তার আনোয়ার সারাদেশে ব্যাপকভাবে নেটওয়ার্কিং করে প্রতারণা করেছেন। ওসি মহসীনসহ বিভিন্ন সেলিব্রেটি, জনপ্রতিনিধিদের ছবি-নাম ব্যবহার করে হুবহু ফেসবুক আইডি খুলে প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি। তার প্রধান টার্গেট ছিল মেয়েরা, কথাবার্তার একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি আদান-প্রদান করতেন। আমরা তার কাছ থেকে পাওয়া ডিভাইসগুলো থেকে বিষয়গুলো আরও চেক করব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আনোয়ার বিকৃত শ্রেণির। ফেক আইডি খুলে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে ছবি আদান-প্রদান করে তিনি আনন্দ পেতেন। আবার কখনো টাকা-পয়সা নিয়ে লাভবান হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে