শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য

২০২৩ সালে সড়কে নিহত ৬৫২৪ জন

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে
যাযাদি ডেস্ক
  ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
২০২৩ সালে সড়কে নিহত ৬৫২৪ জন

২০২৩ সালে সারাদেশে মোট ৬ হাজার ৯১১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। আর এসব দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৬ হাজার ৫২৪ জন নিহত এবং ১১ হাজার ৪০৭ জন আহত হয়েছেন।

শনিবার সংস্থাটি রাজধানীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১১২৮ জন শিশু, যা মোট নিহতের ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ৯৭৪ জন নারী, যা মোট নিহতের ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

সংস্থাটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ২ হাজার ৫৩২টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৪৮৭ জন নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের

৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১ হাজার ৯৬৭টি দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৬৯৪ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৩৪৭টি দুর্ঘটনায় ৩৮৮ জন নিহত হয়েছে।

এ সময় ১০৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৪৮ নিহত, ৭২ আহত এবং ৪৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ২৮৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১৮ নিহত এবং ২৯৬ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ২৯৭৩ দুর্ঘটনায় ৩০৯১ জন নিহত হয়। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১.২ শতাংশ, প্রাণহানি কমেছে ১৫.৪১ শতাংশ।

দুর্ঘটনার বিশ্লেষণ: অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে (৫৭২টি) ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে (৯০৪টি) ৩৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, মোটর সাইকেলে ভারী যানবাহনের চাপা ও ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে (এক হাজার ২৫টি) ৪০ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে (৩১টি) এক দশমিক ২২ শতাংশ। ৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ (৯১৭টি) দুর্ঘটনার জন্য মোটর সাইকেল চালক এককভাবে দায়ী ছিল। দুর্ঘটনার জন্য বাসের চালক দায়ী।

১০ দশমিক ৩০ শতাংশ, (২৬১টি), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি চালক দায়ী ৪০ দশমিক ৯১ শতাংশ (এক হাজার ৩৬টি), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস চালক দায়ী দুই দশমিক ৭২ শতাংশ (৬৯টি), থ্রি-হুইলার চার দশমিক ২৬ শতাংশ (১০৮টি), বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান চালক দায়ী শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ (১৩টি), পথচারী দায়ী তিন দশমিক ৮৩ শতাংশ (৯৭টি) এবং অন্য কারণ দায়ী এক দশমিক ২২ শতাংশ (৩১টি)।

২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ (৭৪৪টি) মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ৪১ দশমিক ৫৮ শতাংশ (এক হাজার ৫৩টি) ঘটেছে আঞ্চলিক সড়কে, ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ (৪৩৪টি) ঘটেছে গ্রামীণ সড়কে এবং ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ (৩০১টি) দুর্ঘটনা ঘটেছে শহরের সড়কে।

আর ২০২৩ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ছয় হাজার ৯১১টি। নিহত হয়েছেন ছয় হাজার ৫২৪ জন এবং আহত হয়েছেন ১১ হাজার ৪০৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৭৪ জন (১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ), শিশু এক হাজার ১২৮ জন (১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ)। দুই হাজার ৫৩২টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত দুই হাজার ৪৮৭ জন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় এক হাজার ৪৫২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২২ দশমিক ২৫ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৪২ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ সময় ১০৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত, ৭২ জন আহত এবং ৪৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ট্রলার ডুবে ৩৩টি গরুর মৃতু্য ঘটেছে। ২৮৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন নিহত এবং ২৯৬ জন আহত হয়েছেন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

যানবাহন ভিত্তিক চিত্র : দুর্ঘটনায় যানবাহন ভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটর সাইকেল চালক ও আরোহী দুই হাজার ৪৮৭ জন (৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ), বাসযাত্রী ২৭৪ জন (চার দশমিক ১৯ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী ৩৮৪ জন (পাঁচ দশমিক ৮৮ শতাংশ), প্রাইভেটকার-

মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ যাত্রী ২২৯ জন (তিন দশমিক ৫১ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-টেম্পো-লেগুনা) এক হাজার ২০৯ জন (১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-চান্দের গাড়ি-মাহিন্দ্র-টমটম) ২৯৬ জন (চার দশমিক ৫৩ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১৯৩ জন (দুই দশমিক ৯৫ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন : রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে দুই হাজার ৩৭৩টি (৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, দুই হাজার ৮৮৭টি (৪১ দশমিক ৭৭ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৯৯৪টি (১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৫৮৩টি (আট ৪৩ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৭৪টি (এক দশমিক শূন্য সাত শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন : দুর্ঘটনার মধ্যে- এক হাজার ২৯১টি (১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, এক হাজার ১৪৯টি (৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, এক হাজার ৪৪৬টি (২০ দশমিক ৯২ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৮১৭টি (১১ দশমিক ৮২ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ২০৮টি (তিন শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন: দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ড্রামট্রাক-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-তেলবাহী ট্যাংকার-বিদু্যতের খুঁটিবাহী ট্রাক-সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স, পাজেরো জিপ চার দশমিক ৮০ শতাংশ, মোটর সাইকেল ২৩ দশমিক শূন্য চার শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-টেম্পো-লেগুনা ইত্যাদি) ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম-চান্দের গাড়ি) ছয় দশমিক ৩৬ শতাংশ, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান চার দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন তিন দশমিক শূন্য সাত শতাংশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে