শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

সাতক্ষীরার খেজুরের পাতা ও খড়ের তৈরি পণ্যে বিশ্ব জয়!

শাকিলা ইসলাম জুঁই, সাতক্ষীরা
  ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সাতক্ষীরার গোপিনাথপুর গ্রামে খেজুরের পাতা, কাশফুল এবং খড়ের পণ্য তৈরিতে ব্যাস্ত নারীরা -যাযাদি

সাতক্ষীরার খেজুরের পাতা, কাশফুলের গাছ এবং খড় দিয়ে তৈরি পণ্য যেন বিশ্ব জয় করেছে! সাত সুমদ্র তের নদী পেরিয়ে জেলার গোপনাথপুর গ্রামের নারীদের হাতে তৈরি এসব নান্দনিক পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পেরু, স্পেনসহ আমেরিকার অন্তত ২৫ দেশে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে শপিং বাস্কেট, রাউন্ড বাস্কেট, শ্রাবণী ঢাকনা বাস্কেট, স্কয়ার বাস্কেট, মিনি বাস্কেট, বালতি, সোর্ড, ওয়েস্ট বাস্কেট, মিরা, ডালি, টেবিলম্যাট ও রাউন্ডম্যাট।

সাতক্ষীরার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল নারীদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন এসব দৃষ্টিনন্দন পণ্য সংগ্রহ করে তা দুই দশক ধরে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে আসছে। তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর সাতক্ষীরা থেকে ২৮-৩০ কন্টেইনার খড় ও খেজুর পাতার পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি হয়ে থাকে, যার আনুমানিক রপ্তানি মূল্য ২৫-২৬ কোটি টাকা। এতে একদিকে যেমন সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে, তেমনই অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছে গোপিনাথপুরসহ জেলার অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোপিনাথপুর গ্রামের প্রায় ৫০ শতাংশ নারী হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা সংসারের কাজের পাশাপাশি খড় আর খেজুর পাতা দিয়ে নানা দৃষ্টিনন্দন পণ্য তৈরি করে আসছেন।

এই শিল্পে জড়িত গোপিনাথপুর গ্রামের গৃহবধূ মিনতি রানী সরকার, রিক্তা সরকার, সন্ধ্যা রানী সরকার জানান, তারা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত ও বিল্ডিংবাড়ির শোভাবর্ধনের জন্য এখানকার খড় এবং খেজুর পাতা দিয়ে ১০-১৫ প্রকার পণ্য তৈরি করেন। এতে তাদের প্রতি পরিবারে মাসে অনন্তত ৬-৭ হাজার টাকা আয় হয়। এসব পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরার ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন।

এ বিষয়ে জেলা মহিলা-বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ. কে. এম শফিউল আযম জানান, প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর পাশাপাশি বেসরকারিভাবে অনেক নারী উদ্যোক্ত তৈরি হয়েছে জেলায়। গোপিনাথপুর গ্রামের পাঁচ শতাধিক নারী খড় ও খেজুর পাতার পণ্য তৈরি করে সাবলম্বী হয়েছেন। তাদের তৈরি এসব পণ্য এখন বিশ্ববাজার দখল করে নিয়েছে। এতে আর্থিকভাবে তারা লাভবান হচ্ছেন।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুন্সি খায়রুল ইসলাম জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় নারীদের কাছ থেকে এসব শৈল্পিক পণ্য সংগ্রহ করে রপ্তানি করে আসছে দুই দশক ধরে। নারীদের হাতে বোনা এসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকাসহ ২৫-৩০টি দেশে। বছরে প্রায় ৩০ কন্টেইনার খড় ও খেজুর পাতার পণ্য রপ্তানি করা হয়ে থাকে। যার আনুমানিক রপ্তানি মূল্য ২৫-২৬ কোটি টাকা।

সাতক্ষীরা জেলা প্রসাশক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির জানান, জাতীয় অর্থনীতিতে সাতক্ষীরা জেলার খড় ও খেজুর পাতার তৈরি হস্তশিল্প বিশ্ববাজারে জায়গা করে নিয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনালের পৃষ্টপোষকতায় হস্তশিল্পের অনেক মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করছেন নারীরা। সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন প্রকল্পে আওতায় নারীরা সাবলম্বী হচ্ছেন। খড় ও খেজুর পাতার পণ্যের পাশাপাশি সাতক্ষীরার সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি, কাঁকড়া, মধু, আম, পোড়া মাটির টালিসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে