পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ফটকের জৌলুস ফিরেছে। সংস্কার করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গেটটির আদিম ঐতিহ্য। তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক গণপরিসর। ফটকের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে মীর জুমলার আসাম যুদ্ধাভিযানের টিকে থাকা একমাত্র নিদর্শন-বিবি মরিয়ম কামান তিলোত্তমা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের পাশে অবস্থিত ফটকটি বুধবার বিকাল চারটায় নতুন
রূপে উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ও ফটকের নতুন নকশাকার অধ্যাপক আবু সাঈদ ছিলেন।
ডিএসসিসির প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, কালের স্রোতে হারিয়ে যেতে বসা জরাজীর্ণ ঢাকা গেটের নান্দনিকতা ফেরাতে ২০২২ সালে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। গত বছরের মে মাসে সংস্কার শুরু হয়ে সম্প্রতি কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় ৮২ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করে এ গেট সংস্কার করেছে ঠিকাদার কোম্পানি আহনাফ ট্রেডিংস। প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের অধ্যাপক আবু সাঈদের নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ ফটকটির নতুন নকশা তৈরি করে। সেই নকশার আদলেই নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ঐতিহাসিক ঢাকা গেট তিনটি অংশে বিভক্ত। পশ্চিমাংশ পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ভবনের পাশ, পূর্বের অংশ পড়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের তিন নেতার সমাধির প্রবেশপথের সামনে। এ ছাড়া মাঝের অংশ পড়েছে দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসিগামী সড়ক দ্বীপে। বর্তমানে ফটকটির ওপর দিয়ে মেট্রোরেল চলাচল করে।
এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ঢাকা কোষে বলা হয়েছে, ঢাকার সীমানা চিহ্নিত করতে এবং স্থলপথে শত্রম্নদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ফটকটি নির্মাণ করেন মীর জুমলা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবু সাঈদ বলেন, ১৩ শতকের শুরুতে বখতিয়ার খলজির বাংলা আক্রমণের মাধ্যমে এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা পায় মুসলিম শাসন। তারই ধারাবাহিকতায় আবির্ভাব ঘটে সুলতানি এবং মোঘল শাসনামলের। মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে মীর জুমলাকে বাংলার সুবেদার হিসেবে নিয়োগ দেন। ঢাকা ফটক নির্মাণ করেন সুবেদার মীর জুমলা। এ কারণে এটি মীর জুমলা ফটক নামেও পরিচিত।
তিনি বলেন, বর্তমান রমনা এলাকাটি প্রতিষ্ঠিত হয় মোঘল আমলে, ১৭ শতকে। ফারসি রমনা শব্দের অর্থ বৃক্ষ সমৃদ্ধ উন্মুক্ত স্থান। এর আগে এই এলাকাটি পরিচিত ছিল বাগ-ই-বাদশাহী নামে। কাছাকাছি ছিল মহলস্না-ই-চিশতিয়া এবং সুজাতপুর নামে দুটি আবাসিক এলাকা। মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন। ১৮২৫ সালে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডাউস রমনা এলাকাটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে এখান থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করেন। সড়কের শুরুতে নির্মিত প্রবেশদ্বারটি জনপ্রিয়তা পায় ঢাকা ফটক বা ঢাকা গেট নামে।