চার বছর আগে এক অটোরিকশা চালককে হত্যার দায়ে চারজনকে মৃতু্যদন্ড দিয়েছে মুন্সীগঞ্জের একটি আদালত। অন্যদিকে ঢাকার মিরপুরে ১১ বছর আগে এক নারীকে গলা কেটে হত্যা মামলায় তার স্বামীকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। বুধবার পৃথক আদালতে এই রায় হয়।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতের বিচারক ইয়াসমিন আক্তার ঊর্মি ৪ জনের মৃতু্যদন্ডের রায় ঘোষণা করেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম পল্টু জানান।
মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রাজেন, হাসান শেখ, রুবেল
ও আকরাম মোলস্না। সাজার পাশাপাশি তাদের ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দিয়েছেন বিচারক।
রায় ঘোষণার সময় রাজেন, হাসান ও রুবেল আদালতে কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন; আর আকরাম উচ্চ আদালত থেকে জামিনে পলাতক রয়েছেন।
মামলার বরাতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল জানান, ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের বাঘরা এলাকা থেকে মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্তরা যাত্রী হয়ে আশরাফ ইসলামের অটোরিকশায় ওঠে। পরে লৌহজংযের গোয়ালী মান্দ্রার নির্জন এলাকায় নিয়ে তাকে গলা কেটে অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। মৃতু্যর আগে মাটিতে হত্যাকারীদের নাম লিখে রাখেন আশরাফ।
পরে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আশরাফ। এ ঘটনায় তার বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে লৌহজং থানায় হত্যা মামলা করেন।
এ মামলায় চোরাই অটোরিকশা ক্রেতা কাজল শেখকে তিন মাসের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক।
আর আসামি এমরান হোসেন, তোফাজ্জল, আমির ব্যাপারী, সবুজ শেখ ও আবু কালামের অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বিচারক তাদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন বলে জানান সিরাজুল।
এদিকে ঢাকার মিরপুরে ১১ বছর আগে এক নারীকে গলা কেটে হত্যার দায়ে তার স্বামীকে মৃতু্যদন্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকার দ্বিতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। দন্ডিত মানিক মিয়া ব্যাপারীর বাড়ি শরীয়তপুর জেলার সখিপুরে। মৃতু্যদন্ডের পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে তাকে।
রায়ের সময় পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিচারক।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মানিক মিয়ার বাড়ি শরীয়তপুর জেলার সখিপুরে, ঢাকায় তিনি থাকতেন মিরপুরের ১০ নম্বর সেকশনে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার মতিয়ার রহমানের মেয়ে সাদিয়া আফরিন রিতার সঙ্গে তার প্রেম হয় এবং পরে তারা বিয়ে করেন।
বিয়ের পর তাদের মধ্যে প্রায়ই সাংসারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো। এরই এক পর্যায়ে মানিক ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি রিতার মাকে ফোন করে বলেন, তাদের মেয়ের 'খুব জেদ', দুই দিন তিনি বাসায় ফেরেননি। রিতার কিছু হলে তিনি দায়ী থাকবেন না।
এরপর রিতার মা ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় গিয়ে মেয়ের বাসায় যান। বাসার দরজা তালাবন্ধ দেখে বাড়িওয়ালার বোনের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কথায় জানতে পারেন, স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে একটি ব্যাগ নিয়ে একা বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন রিতা।
এরপর ঢাকায় আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় খোঁজ নিতে শুরু করেন রিতার বাবা-মা। ১৭ জানুয়ারি পুলিশ এসে রিতার বাবা মতিয়ার রহমানকে জানায়, রিতা মারা গেছেন, তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। সেই খবর পেয়ে মর্গে গিয়ে তারা দেখেন, রিতার ধড় থেকে মাথা আলাদা করে ফেলা হয়েছে। তার ডান উরু ও হাঁটুর নিচে এবং ডান হাতের বগলের ওপর গুরুতর রক্তাক্ত জখম রয়েছে।
মতিয়ার রহমান পরে জানতে পারেন, রিতাদের ভাড়া বাসা থেকে দুর্গন্ধ বের হলে বাড়ির মালিক মিরপুর থানা পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে ওই বাসার বাথরুমে রিতার মুন্ডহীন লাশ পায়। খোঁজাখুঁজি করে মাথাটি পাওয়া যায় পস্নাস্টিকের একটি ড্রামে।
ওই ঘটনায় ১৭ জানুয়ারি মিরপুর থানায় মামলা করেন রিতার বাবা। তদন্ত শেষে ৫ এপ্রিল মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মিরপুর থানার এসআই মোহাম্মদ সেলিম। ওই বছর ২০ এপ্রিল পলাতক মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আতাউর রহমান। তিনি জানান, ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বুধবার মানিক মিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিল আদালত।