ঘরে বসেই আয় করুন মাসে লাখ লাখ টাকা। হরহামেশাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন লোভনীয় বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। মূলত এসবই প্রতারণার ফাঁদ। এভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের ছয় সদস্য পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।
গত ২৩ জানুয়ারি রাতে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানাধীন ৬ নম্বরে সেক্টর এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় গ্রেপ্তার হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘরে বসেই লাখ লাখ টাকা রোজগারের প্রলোভন দেখানো প্রতারক চক্রের ছয় সদস্য।
তারা হচ্ছে, শামীম আহম্মেদ (৩২), জাহিদুল ইসলাম (২৪), মাহিদুল হক ওরফে মাহাদী (৩০), আশরাফুল ইসলাম (২৬), এহসান মাশফী (২৪) ও রনি সরদার (২৮)। তাদের কাছে পাওয়া গেছে প্রতারণায় ব্যবহৃত ৬টি এসএসডি কার্ড, ৪টি হার্ডডিস্ক, ৪টি ট্যাব ও ১টি ল্যাপটপ।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এটিইউয়ের মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার
ওয়াহিদা পারভীন যায়যায়দিনকে জানান, গ্রেপ্তাররা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে টাকা রোজগারের প্রলোভন দেখাত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে পুঁজি করে চক্রটি এমন প্রতারণার ফাঁদ পাতে।
তিনি বলছেন, ফ্রিল্যান্সিং খুবই জনপ্রিয় একটি পেশা। নিজের সৃজনশীলতা বা সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে এ পেশায় বৈধভাবেই অনেক টাকা রোজগারের সুযোগ আছে। অনেকেই এভাবে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কোর্স করানোর প্রলোভন দেখিয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করত। এমন বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই কোর্স করার জন্য টাকা দেন। এরপরই প্রতিষ্ঠানটি নানা টালবাহানা শুরু করে। এভাবে গ্রেপ্তাররা বহু মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, আপস্পট একাডেমি নামে এমনই একটি প্রতিষ্ঠান ফেসবুক পেইজে ঘরে বসেই দৈনিক ১০ থেকে ৪০ ডলার আয় করার লোভনীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে। গড় আয় যদি ২৫ ডলারও হয়, তাহলে প্রতি ডলার ১৩০ টাকা হিসেবেও প্রতিদিন রোজগার প্রায় সোয়া ৩ হাজার টাকা। মাসে রোজগার প্রায় লাখ টাকা। এমন বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য ব্যবহার করত ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন ভুয়া ছবি ব্যবহার করত। তারা প্রতিটি গ্রম্নপে ৩০০ জন করে লোক নেবে বলে ঘোষণা দিত। অনলাইনে কোর্স করতে কোনো টাকা লাগবে না। কিন্তু বিজ্ঞাপনে কোর্সটি করতে কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে সে সংক্রান্ত নির্দেশনা দিত। রেজিস্ট্রেশন করার পর জুম লিংকের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করা হতো। ক্লাসে অল্প সময় অনেক টাকা রোজগারের প্রলোভন দেখাত।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ফাঁদে পড়াদের কাছ থেকে বিভিন্ন সফটওয়্যার টুলস পস্নাগইন করার জন্য বিকাশের মাধ্যমে ২ হাজার ৫০০ টাকা নিত। টাকা দেওয়ার পর তারা ফ্রি টুলসগুলো সরবরাহ করত। সেসব টুলস দিয়ে কোনোভাবেই রোজগারের কোনো সুযোগই নেই। এভাবে ১৫৬টি ব্যাচের অন্তত এক হাজার মানুষকে প্রতারিত করেছে চক্রটি। এভাবেই চক্রটি ফাঁদে পড়াদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। প্রতাড়িতদের তরফ থেকে ঢাকায় দায়ের করা মামলার তদন্তের সূত্রধরে গ্রেপ্তার হয় ৬ জন। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে প্রতারণার এমন তথ্য।