রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা

'জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ ভোজ্যতেল জরুরি'

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
'জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ ভোজ্যতেল জরুরি'

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল নিশ্চিতকরণ জরুরি বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১১-১২ সালের জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ উদ্ধৃত করে তারা বলেছেন, প্রাক-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন 'এ' এবং দুইজন ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ভোজ্যতেলে ভিটামিন 'এ' সমৃদ্ধকরণ আইন প্রণয়ন করেছে। তবে ড্রামে বাজারজাতকৃত খোলা ভোজ্যতেল এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।

রাজধানীতে 'সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল :অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়' শীর্ষক দুই দিনের সাংবাদিক কর্মশালায় আলোচকরা এসব বিষয় তুলে ধরেন। ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি ঢাকার বিএমএ ভবনে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এই কর্মশালার আয়োজন করে। এতে প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ার ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।

কর্মশালায় জানানো হয়, ভিটামিন 'এ' সমৃদ্ধকরণ

ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ দন্ডনীয় অপরাধ এবং একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো উপকরণ দিয়ে তৈরি প্যাকেটে বা পাত্রে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত ২০১৭ সালের গবেষণা অনুযায়ী বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশ ড্রামে বাজারজাত করা হয়, যার ৫৯ শতাংশই ভিটামিন 'এ' সমৃদ্ধ নয় এবং ৩৪ শতাংশে সঠিকমাত্রায় ভিটামিন 'এ' নেই। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইনে নির্ধারিত নূ্যনতম মাত্রায় ভিটামিন 'এ' পাওয়া গেছে।

কর্মশালায় আরও জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেডেড উপকরণে তৈরি কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য পণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত ড্রাম ভোজ্যতেল পরিবহণে ব্যবহার করা হয়। তাই ড্রামে বাজারজাতকৃত খোলা ভোজ্যতেল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং ভেজাল মেশানোর সুযোগ থাকে। এ ছাড়া এসব পুরনো ড্রামে কোনো ধরনের লেবেল এবং উৎস শনাক্তকরণ তথ্য যুক্ত না করায় তেল সরবরাহের উৎস চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। যা আইনের কার্যকর বাস্তবায়নেও বাধা সৃষ্টি করে। অস্বাস্থ্যকর ভোজ্যতেল মানুষের মধ্যে নানা ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে কর্মশালায় জানানো হয়, ড্রামে বাজারজাতকৃত ভোজ্যতেলের ক্ষতিকর দিকগুলো চিহ্নিত করে শিল্প মন্ত্রণালয় এক নির্বাহী আদেশে জুলাই ২০২২ এরপর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এরপর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধের নির্দেশনা প্রদান করেছে। তবে এ নির্দেশনার কার্যকর বাস্তবায়ন এখনো দেখা যায়নি। ভোজ্যতেল খাদ্যপণ্য বিধায় এটি নিরাপদভাবে (প্যাকেজিং, মোড়কাবদ্ধভাবে) ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে সংশ্লিষ্ট নিরাপদ খাদ্য আইন, বিএসটিআই আইন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, মোড়কাবদ্ধ খাদ্য লেবেলিং প্রবিধানমালা প্রভৃতির যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে একযোগে কাজ করতে হবে। ড্রামের অস্বাস্থ্যকর খোলা ভোজ্যতেল পরিহার করতে ভোক্তাদের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। একই সঙ্গে দেশে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ মোকাবিলায় ভোজ্যতেলে ভিটামিন 'ডি' সমৃদ্ধকরণের বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ভিটামিন এ-এর অভাবে অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃতু্যসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি রিকেটস-এর পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

কর্মশালায় আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিটিউটের (বিএসটিআই) ডেপুটি ডিরেক্টর (সিএম) রিয়াজুল হক, গেস্নাবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রম্নভড নিউট্রিশনের (গেইন) লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন প্রোগ্রামের পোর্টফোলিও লিড আশেক মাহফুজ, বাংলা ট্রিবিউনের বিজনেস ইনচার্জ মো. শফিকুল ইসলাম এবং প্রজ্ঞা'র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।

কর্মশালায় সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথের অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কনসালট্যান্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে