শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

রাজশাহীতে 'ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট' অ্যাপের ফাঁদে বিনিয়োগকারীরা

রাজশাহী অফিস
  ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
রাজশাহীতে 'ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট' অ্যাপের ফাঁদে বিনিয়োগকারীরা

এবার 'ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট' নামে একটি অ্যাপে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন রাজশাহীর শতাধিক বিনিয়োগকারী। এ ঘটনায় প্রতারণার শিকার মোস্তাক হোসেন নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান ওয়াহেদুজ্জামান (৩৮), তার স্ত্রী ও বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ফাতেমা তুজ জহুরা (৩২), কান্ট্রি লিডার লক্ষ্ণীপুরের রামগঞ্জের মোতালেব হোসেন ভূঁইয়া (৩৫), মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাসিন্দা ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারুক হোসাইন (৩৯) ও রাজশাহী জেলা এজেন্ট নগরের বোয়ালিয়াপাড়া মহলস্নার বাসিন্দা মিঠুন মন্ডলকে (৩৬)। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মঙ্গলবার রাজপাড়া থানার ওসি রফিকুল হক বলেন, 'মামলায় এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। তবে তারা চেষ্টা করছেন।' আসামিদের বিষয়ে কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।

দেশে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা ও ক্রিপ্টো কারেন্সিতে লেনদেন নিষিদ্ধ। এর আগে এমটিএফই (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ), ই-মুভি পস্ন্যানসহ কয়েকটি বিদেশি অ্যাপ দেশে গ্রাহক তৈরি করে এভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলেন, 'ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের গ্রাহকদের বোঝানো হয়, এই অ্যাপে বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। বিদেশ থেকে ব্যাংকে রেমিট্যান্স আকারে প্রতি মাসে মুনাফা আসবে। শুরুর দিকে এমনটিই হয়েছে। তা দেখে বিশ্বাস করে একের পর এক বিনিয়োগকারী ঝুঁকেছেন।'

তারা জানান, এই অ্যাপটি চালু হয় ২০১৯ সালে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের পরে আর কাউকে মুনাফা দেওয়া হয়নি। ব্যাংকের সমস্যার কারণে মুনাফা ঢুকছে না বলে কাউকে কাউকে হাতে-হাতে নগদ মুনাফাও দেওয়া হয়েছে। এতে গ্রাহকেরা আশ্বস্ত হয়েছেন। এভাবে তালবাহানা করে তাদের এক বছর থামিয়ে রাখা হয়। কিন্তু অ্যাপ চালু ছিল। এক মাস আগে অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর রাজশাহী নগরের মোস্তাক হোসেন (৪৫) নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।

মামলার বাদী মোস্তাক হোসেন বলেন, অনেক পরে তারা ধরতে পারেন, অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্র নয়, অ্যাপের সার্ভার পরিচালনা করা হয় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে। তখন আর কিছু করার ছিল না। তারা পরিচিত ভুক্তভোগীরা শনিবার ৫৮ জনের তালিকা করেছিলেন। এখন আরও অনেক মানুষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। একজন রোববার সকালে সাভার থেকে ফোন করে জানান যে তিনি ৫০ লাখ টাকা খুইয়েছেন। এ রকম ফোন আসছেই।

মোস্তাক আরও বলেন, 'তিনি ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান নগরের নওদাপাড়া এলাকার ওয়াহেদুজ্জামানের মাধ্যমে ২০২২ সালের জুনে এই অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত হন। নিজের পাঁচ লাখ ও আত্মীয়স্বজনের পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে প্রথম কিছুদিন মুনাফা পেয়েছিলেন। যেভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে, সেভাবেই মুনাফা আসে। ফলে অবিশ্বাস করার কোনো উপায় ছিল না। ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলেই প্রতি মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা করে মুনাফা আসবে- এই আশায় সবাই বিনিয়োগ করেছেন।'

ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট অ্যাপে বিনিয়োগ করে ৯ লাখ টাকা খুইয়েছেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হাবিবপুর গ্রামের মাদ্রাসাশিক্ষক রেজাউল করিম। তিনি জানান, রাজশাহী নগরের লক্ষ্ণীপুর এলাকার তাজুল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি এই অ্যাপে যুক্ত হয়েছিলেন। সব টাকা তার নিজের না। চার-পাঁচজন মিলে দিয়েছিলেন। ২০২২ সালের নভেম্বরের পর থেকে আর কাউকে মুনাফা দেওয়া হয়নি।

রেজাউল করিম বলেন, 'তিনি মাত্র তিন মাস মুনাফা পেয়েছিলেন। ওই সময় থেকে তাদের বোঝানো হতো, 'ক্রিপ্টো কারেন্সি' বাজারে লঞ্চ করলেই মুনাফা পাবেন। এসব বলে তাদের টানা এক বছর থামিয়ে রাখা হয়েছে। এক মাস ধরে অ্যাপস বন্ধ হয়ে গেছে।'

রাজশাহী নগরের শিরোইল এলাকার ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বলে দাবি করেন। তিনি আগে ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। এখন একটি দোকান চালান।

তিনি বলেন, 'ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফার কথা শুনে তিনি তার জমানো ২৫ লাখ টাকা এই অ্যাপে বিনিয়োগ করেছিলেন। প্রথম ছয়-সাত মাস তিনি তাদের কথামতো মুনাফা পেয়েছিলেন। তাকে বলা হয়েছিল ব্যাংকের মাধ্যমে, হাতে হাতে, বিকাশে বা যেকোনো মাধ্যমে টাকা নিতে পারবেন। তিনি হাতে হাতে নিতে চেয়েছিলেন। তারা ব্যাংক থেকে তুলে তাকে নগদ টাকা দিয়েছিলেন।'

ভুক্তভোগীরা জানান, ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের মাধ্যমে রাজশাহীর অন্তত ৫৮ জন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তারা ১ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন। তাদের অনুমান, সারা দেশ থেকে এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে