বতর্মানে সরিষার তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়া আর স্বল্প খরচে ও অল্প সময়ে ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে সরিষা চাষে। এছাড়া সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে দেশে উৎপাদিত ভোজ্যতেল সরিষা তেলের ব্যবহার বাড়ায় বেড়েছে আবাদ। এ কারণে গত বছরের তুলনায় কয়েক হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ করেছে ফরিদপুরের কৃষকেরা।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন জানান, দেশীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দর বৃদ্ধিতে এবার ফরিদপুরে বেড়েছে ফরিদপুরে সরিষার চাষ। রবি মৌসুমের ফসল হিসেবে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে সরিষা চাষে। জেলার নয়টি উপজেলার প্রায় প্রতিটি মাঠেই এবার আবাদ বেড়েছে সরিষার। সার, ওষুধ, পানি ও অল্প পরিচর্যায় এবং সরকারি প্রণোদনা পাওয়ায় দিন দিন সরিষা আবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা। জেলার নথচ্যানেল, ডিক্রিরচর, গোলডাঙ্গীচরসহ বিভিন্ন মাঠে এক অপরূপ শোভা ছড়াচ্ছে সরিষা ফুলে।
সরেজমিন ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ও চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা মেলে, কোন জাত দুই আবার কোনটা তিন থেকে চার ফুট উঁচু সরিষা গাছে এখন ফুল ফুটেছে। হলুদ ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে মাঠ। বাতাসে দোল খাচ্ছে ফুলে ভরা সরিষার গাছ। বারি-১৪, ১৫, ১৬, ১৭, বিনা-৪, ৮, ৯সহ টরি-৭ জাতের সরিষা চাষ করেছেন চাষিরা। ভোজ্যতেল হিসেবে খাঁটি সরিষার তেলের চাহিদা বেড়েছে অনেক। উচ্চ ফলনশীল জাত হওয়া ফলও ভালো হওয়ার আশা চাষিদের।
জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ মৌসুমের জেলায় ১৪ হাজার ৮৪২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১ হাজার ৩৬০ কেজি (১.৩৬ টন)। বর্তমান বাজার মূল্য মণপ্রতি ৩ হাজারের অধিক। সেই হিসেবে এই মৌসুমেই ১৫১ কোটি ৩৮ লক্ষাধিক টাকার সরিষা উৎপাদন করবেন জেলার চাষিরা।
অম্বিকাপুরের চাষি ইব্রাহিম মোলস্না, রহিম মাতব্বরসহ কয়েক জন সরিষা চাষি জানালেন, বোরো ধান রোপণের আগেই কম সময়ে একটি বাড়তি ফসল আবাদ করতে কৃষি বিভাগ তাদের পরামর্শ দিয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে সরিষার বীজ রোপণের মাত্র ৮০-৯০ দিনের মধ্যে সরিষা গাছ তুলে ফেলা যায়। বিঘা প্রতি সরিষা চাষে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। বৈরী আবহাওয়া না হলে এই ফসলের ফলন বিঘা প্রতি ৫-৬ মণ সরিষা বীজ পাওয়া যায়।
গত মৌসুমের তুলনায় ফরিদপুরে এ বছর ২ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদন হবে ৫ লাখ ৪ হাজার ৬২৮ মণ। জেলার চাষিরা যেখানে দুই ফসল ফলাতেন, সেখান এখন তিন ফসল চাষাবাদ করছেন। এতে তারা বাড়তি লাভের মুখ দেখছেন বলে জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম।