বিশ্ববিদ্যালয়ে খাবারের অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন উপায়ে তারা ক্যাম্পাসে খাবারের এই চড়া দাম নিয়ে বরাবরই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। গত এক সপ্তাহজুড়ে এ ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে।
চুয়েটের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়া শিক্ষার্থীদের অসন্তুষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। খাবারের ঊর্ধ্বগামী মূল্য ও নিম্নগামী মানের মূল কারণ বলে জানা যায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নাম্বার ও দুই নাম্বার ক্যান্টিন বন্ধ হওয়ার পর ক্যাফেটেরিয়া একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ পাওয়ায় এই সমস্যা বেড়েই চলেছে। প্রসঙ্গত, ওই ক্যান্টিনগুলো
ছিল সুলভমূল্যে খাবার লাভে শিক্ষার্থীদের অন্যতম ভরসা।
চুয়েটের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী অভিষেক তালুকদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'আমাদের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের দাম আরও সহজলভ্য হওয়া উচিত ছিল। খাবারের পরিমাণের তুলনায় দাম অনেক বেশি। যেদিকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খাবারের দাম তুলনামূলক কম সেদিকে আমাদের বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দাম দিয়ে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে।'
পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজিয়া আহমেদ রাফা বলেন, 'আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যান্টিনে খেয়েছি। খাবারের মান এবং দাম তুলনা করলে সব দিক থেকেই চুয়েটে অতিরিক্ত দাম মনে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর খাবারের দাম শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিত ছিল।'
এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার খাইরুল হোসেন বলেন, 'বাজারের চড়া মূল্যের কারণে আমাদের এখানে দাম এমন। আমরা চেষ্টা করি খাবারের দাম আর মানের যাতে ভারসাম্য থাকে। আমাদের এখানের সব মূল্য ছাত্রকল্যাণ দপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত এবং মূল্যের তালিকা সবসময় টাঙানো থাকে। এই দাম থেকে কম দামে খাবার বিক্রি করার কোনো সুযোগ আমাদের কাছে নেই।'
দামের দিক থেকে একই অবস্থা চুয়েটের তিন নাম্বার ক্যান্টিনেরও। বাড়তি দামের পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা নিয়েও মিলছে নানা অভিযোগ। তাছাড়া শ্রেণি কার্যক্রম চলাকালে সাধারণত চালু থাকে এই ক্যান্টিনটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের আলাদা তেমন কোনো আয়ের উৎস থাকে না। অনেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি টুকটাক টিউশনি করিয়ে অনেকেই নিজের ভরণপোষণ করেন। আবার অনেককেই সেই টাকা থেকে বাড়িতেও পাঠাতে হয়। সব মিলিয়ে এতো মূল্য দিয়ে নিয়মিত পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
চুয়েট শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই দুই বেলা আবাসিক হল ডাইনিংয়ে খাওয়া-দাওয়া করে থাকেন। চুয়েটের কয়েকটি হলের ডাইনিং ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাদের পক্ষে ৪০ টাকায় প্রতিবেলা সুষম খাবার সরবরাহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তি যে খাবার খান তাতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, স্নেহজাতীয় উপাদানের অনুপাত ৪:৪:১ হওয়া প্রয়োজন। পরিমাণ কম হওয়ায় ডাইনিংয়ের খাবারের মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ করা কষ্টসাধ্য।
চুয়েটের আবাসিক হল ক্যান্টিনগুলোতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় খাবারের দাম তুলনামূলক বেড়েছে এবং কমেছে খাবারের পরিমাণও।
শামসেন নাহার খান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বলেন, 'হলের ক্যান্টিনে খাবারের দাম খুব একটা বেশি নয়। তবে মান কিছুটা অস্বাস্থ্যকর। আগে মোটামুটি ভালো খাবার পাওয়া গেলেও এখন সবসময় খাবার পাওয়া যায় না। রাত ৮টার পর এই সমস্যা আরও বেশি দেখা যায়। খাবারের এই অপ্রাপ্যতার কারণে আমরা শিক্ষার্থীরাই সমস্যায় ভুগছি।'
চুয়েটের প্রধান ফটকের বাইরের দোকানগুলোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। এখানেও চওড়া দামে বিক্রি হচ্ছে খাবার। মোটকথা কোথাও সাধ-সাধ্যের মধ্যে খাবার পাচ্ছে না চুয়েট শিক্ষার্থীরা।
পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতিন ইশতিয়াক বলেন, 'চুয়েটের ভিতরে দাম আর মানের সামঞ্জস্য না থাকায় আমরা অনেকেই বিকালের নাস্তার জন্য চুয়েটের গেটের সামনের দোকানগুলোয় যাই। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। অতিরিক্ত দামের কারণে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গত ১-২ বছর ধরে সব ধরনের খাবারের দাম শুধু বেড়েই চলেছে।'
এ ব্যাপারে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, 'খাবারের মান ঠিক রাখতে গেলে এর চেয়ে দাম কমানো সম্ভব নয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টিও সবার মাথায় রাখতে হবে। তাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা এ ব্যাপারে আলোচনা করে দেখব কোনো সমাধানে আসা যায় কি না।' ১ ও ২নং ক্যান্টিনের বিষয়ে তিনি বলেন, মুক্তমঞ্চ করার জন্য এগুলো ভেঙে ফেলা হবে। তাই এগুলো বন্ধ করে দিতে হয়েছে।