সাকিবের রংপুরকে হারিয়ে তামিমের উড়ন্ত সূচনা

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বিপিএলে শনিবার মিরপুরে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে উইকেট পাওয়ার পর ফরচুন বরিশালের বোলার খালেদ আহমেদকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন সতীর্থ মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ -ওয়েবসাইট
সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল বাহিনীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচটি দেখতে মিরপুরের গ্যালারিতে ঢল নেমেছিল দর্শকের। অবশ্য দুজনেই তৃপ্ত করেছেন তাদের। একজন বল হাতে এবং আরেকজন ব্যাট হাতে। আর এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্তত্ম জয়ের হাসি ফুটেছে তামিমের ফরচুন বরিশালের মুখে। বিপিএলের হাইভোল্টেজ ম্যাচে খালেদ আহমেদ ও মেহেদী মিরাজদের আগুনে বোলিংয়ে আত্মসমর্পণ করেছে সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্স। সাকিবদের পাঁচ উইকেটে হারিয়ে জয় দিয়ে আসর শুরু করল তামিম-রিয়াদরা। আগামী সোমবার সন্ধ্যায় বরিশাল খেলবে খুলনার বিপক্ষে। পরের দিন দুপুরে রংপুর খেলবে সিলেটের বিপক্ষে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শনিবার টস জিতে রংপুরকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে শুরু থেকেই চেপে ধরে মিরাজ-খালেদরা। তবে লড়াই করে ১৩৪ রানের লড়াকু পুঁজি সংগ্রহ করে রংপুর রাইডার্স। জবাব দিতে নেমে ৫ বল হাতে থাকতেই জয় তুলে নেয় বরিশাল। এদিন ব্যাটিংয়ে সুবিধা করতে পারেননি সাকিব-সোহানরা। তবে অল্প রানের পুঁজিতেও শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে রংপুর। নিজের প্রথম ওভারে রনি তালুকদারকে ফেরান সৈয়দ খালেদ আহমেদ। এক বল পরই তার শিকার সাকিব আল হাসান। শেষ ওভারে পরপর দুই উইকেট নিয়ে জাগালেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। তা না পারলেও ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে রংপুর রাইডার্সকে অল্পে আটকাতে খালেদ রাখলেন বড় ভূমিকা। ছোট লক্ষ্য পেয়ে জয়ে মাঠ ছাড়ল ফরচুন বরিশাল। ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন খালেদ আহমেদ। ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু করে বরিশালের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইব্রাহিম জাদরান। তবে ইনিংস বড় করতে পারেনি জাদরান। ১২ রানে আউট হন এই আফগান ব্যাটার। ২৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলে আউট হন তামিমও। এরপর মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে রান তুলতে থাকেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। তবে পিচে থিতু হতে পারেনি মিরাজও। ১৮ বলে ২০ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। মুশফিককে সঙ্গ দেন পাকিস্তানি তারকা ক্রিকেটার শোয়েব মালিক। কিন্তু ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে মুশফিককে (২৬) বোল্ড আউট করে বরিশালকে বিপাকে ফেলেন সাকিব। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি রংপুরের, শেষ পর্যন্ত শোয়েব মালিকের ১৭ রান এবং মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদের ১১ বলে ১৯ রানের দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে সমান পাঁচ বল এবং উইকেট হাতে থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ফরচুন বরিশাল। রংপুর রাইডার্সের হয়ে সাকিব আল হাসান ও হাসান মুরাদ দুটি করে উইকেট শিকার করেন। এছাড়াও মোহাম্মদ নবী এক উইকেট নেন। এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় রংপুর। প্রথম দুই ওভারেই তিন টপ অর্ডারকে হারায় দলটি। ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন মোহাম্মদ ইরফান। বাঁহাতি এই পেসারের দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ব্রেন্ডন কিং। পরের ওভারেই আবারও ধাক্কা খায় রংপুর। এবার সৈয়দ খালেদের অফ-স্টাম্পের বাইরের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে উড়িয়ে খেলতে চেয়েছিলেন রনি তালুকদার। কিন্তু ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক টাইমিং না হওয়ায় টপ-এজ হয়ে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন তিনি। মাত্র ৫ রানেই থেমে যায় এই ওপেনারের এবারের যাত্রা। এরপর সাকিবকেও ফেরান খালেদ। মাত্র ২ রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। এরপর রাইডার্সদের টেনে তোলার চেষ্টা করেন সোহান ও ওমরজাই। তবে এই জুটিও বেশিক্ষণ ক্রিজে থিতু হতে দেননি দুনিথ ওয়ালস্নালাগে। লঙ্কান এই স্পিনারের বল মিড-অফে খেলতে গিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। পাওয়ার পেস্নতে ৩৭ রানে ৪ উইকেট হারানো রংপুরকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নেন শামীম পাটোয়ারী ও সোহান। এই দুই ব্যাটার চেষ্টা করলেও খুব বেশি সময় এই জুটি স্থায়ী হয়নি। শোয়েব মালিকের অফ-স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরের বলে ব্যক্তিগত ২৩ রানে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রংপুর দলপতি। এরপর মিরাজে ঘূর্ণিতে ব্যক্তিগত ১০ রানেই ফেরেন মোহাম্মদ নবিও। অন্যদিকে একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করা শামীমকেও স্পিন ভেলকি দেখিয়েছেন মিরাজ। এই স্পিনারের অফ-স্ট্যাম্পের বলে সুইম করতে চেয়েছিলেন পাটোয়ারী। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে সোজা স্ট্যাম্পে আঘাত হেনেছে বল। এতে ৩৩ বলে ৩৪ রান থেমেছে তার ইনিংস। ইনিংসের শেষ দিকে ক্যামিও এক ইনিংসে রংপুরকে পথ দেখান শেখ মেহেদী। তবে জাদরানের দারুণ এক ড্রাইভিং ক্যাচে তারও বিদায় ঘণ্টা বেজেছে। পরের বলেই ফেরেন হাসান মাহমুদ। এতে নির্ধারিত ২০ ওভারে শেষ পর্যন্ত ১৩৪ রানেই থেমেছে রংপুরের ইনিংস। সংক্ষিপ্ত স্কোর: রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৩৪/৯ (কিং ০, রনি ৫, সাকিব ২, সোহান ২৩, ওমারজাই ৬, শামিম ৩৪, নবি ১০, মেহেদি ২৯, মুরাদ ৭*, হাসান ০, সালমান ৮*; ইমরান ১/৩২, খালেদ ৪/৩১, ওয়েলালাগে ১/১৭, রকিবুল ০/৩১, মিরাজ ২/১৩, মালিক ১/৯)। ফরচুন বরিশাল: ১৯.১ ওভারে ১৩৮/৫ (তামিম ৩৫, ইব্রাহিম ১২, মিরাজ ২০, সৌম্য ১, মুশফিক ২৬, মালিক ১৭*, মাহমুদউলস্নাহ ১৯*; ওমারজাই ০/১২, সালমান ০/১৫, হাসান ০/২৫, মেহেদি ০/২৪, সাকিব ২/১৬, নবি ১/২৫, মুরাদ ২/১৭)। ফল: ফরচুন বরিশাল ৫ উইকেটে জয়ী ম্যাচসেরা: সৈয়দ খালেদ আহমেদ