দিনাজপুরে খাদ্য বিভাগের বিশেষ অভিযানে দুই দিনের ব্যবধানে চালের দাম প্রকারভেদে কেজি প্রতি কমেছে দুই থেকে তিন টাকা। গত ১২ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ৭-৮ টাকা পর্যন্ত বাড়লেও সে তুলনায় দাম তেমন একটা কমেনি। হঠাৎ চালের দাম বাড়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশব্যাপী মজুত বিরোধী অভিযানের পাশাপাশি দিনাজপুরেও অভিযানে নেমেছিল জেলা খাদ্য বিভাগ। এর সুফল পাওয়া গেছে শনিবার চালের বাজারে। তবে এ ব্যাপারে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। উভয়েই বলছেন যে পরিমাণ দাম বেড়েছিল কমেছে তার অর্ধেকের কম। একইসঙ্গে বস্তা প্রতি ধানের দামও কমেছে ২৫০-৪৫০ টাকা।
শনিবার শহরের সবচেয়ে বড় চালের বাজার বাহাদুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কথিত মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৬৮ টাকায়। যা বিক্রি হচ্ছে ৬৭ টাকায়। তবে ২৮ ও ২৯ ধানের মিশ্রণে এই মিনিকেট চালের উৎপাদন। যা দিনাজপুর জেলায় বোচাগঞ্জ উপজেলায় একটি মাত্র মিল করে থাকে।
হিসেবে অনুযায়ী, মিনিকেট চালের বাজার বেড়েছিল দশ টাকা। অভিযানের পরে সেই চালের দাম কমেছে মাত্র এক টাকা। এভাবে ব্রি-২৮ জাতের চাল প্রতিকেজি ৫৩ টাকা থেকে ৫ টাকা বেড়ে ৫৮ টাকা হলেও বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়, ব্রি-২৯ চাল প্রতিকেজি ৪৮টাকা থেকে ৫ টাকা বেড়ে
৫৩ টাকা হলেও বিক্রি হয়েছে ৫১টাকায়, সুমন স্বর্ণ প্রতিকেজি ৪৭টাকা থেকে ৩টাকা বেড়ে ৫০ টাকা হলেও শনিবার বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকায়।
তবে এক্ষেত্রে গুটি স্বর্না চালের বাজার ব্যক্তিক্রম। এ চাল ৪৫ টাকা থেকে ২টাকা বেড়ে ৪৭ টাকা হলেও বর্তমানে প্রতিকেজি ৪৪ টাকা ৪০ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ পূর্বের দামের চেয়ে ৬০ পয়সা কমেছে।
বাজারে চাল কিনতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়, তারা জানান, 'শুনলাম চালের দাম কমছে। কোথায় কমছে। ৫০ টাকার কেজির চাল ৪৮ টাকা হয়েছে এটাকে কি দাম কম বলে?'
চালের দাম বাড়া-কমার বিষয়ে বাহাদুর বাজারের ব্যাবসায়ীরা বলেন, চালের দাম বাড়া শুরু করেছে নির্বাচনের পরের দিন থেকে। ২৯শ টাকা বস্তার মিনিকেট হয়ে গেল ৩৩শ টাকা। অভিযানে নামার পর ৪০০ টাকা থেকে বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা কমল। তারা বলেন, কিছু কুচক্রী মিল মালিক ধাপেধাপে চালের দাম বাড়িয়েছে। এক্ষেত্রে মিলারদেরকেই আইনের আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন চাল ব্যাবসায়ীরা।
তবে এ ব্যাপারে মিল মালিকরা বলেন, 'মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়ে কেজিতে ৫০ পয়সা। পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সেটাকে বাড়িয়ে নিয়ে যান ৩-৪ টাকায়। পাশাপাশি কিছু মজুতদার তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন অটো মিলে ডায়ার করে চাল মজুত করেন। পরে দাম বাড়ার সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। অথচ সব দোষ হয় মিলারদের।' চালের দাম কমার বিষয়ে বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাস্কি মিল অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারি মোহন বলেন, 'স্টক ব্যবসার নামে নিবন্ধনবিহীন একশ্রেনীর মজুতদার যারা চাল কিনে মজুত করেছেন এবং আরও স্টক করতে চাচ্ছেন এ ধরনের অভিযানের কারণে তারা স্থবির হয়েছেন। ফলে চালের বাজার কমতে শুরু করেছে। এছাড়াও খুচরা ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতার কারণে দাম বেড়েছিল। তবে কয়েকদিনের মধ্যে চালের বাজার কেজিতে ৩-৪ টাকা কমে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ধান চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে জেলা খাদ্য বিভাগ। নিবন্ধনের শর্ত উপেক্ষা করে দীর্ঘ সময় অতিরিক্ত ধান মজুদ করায় গত বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় এক হাস্কিং মিল মালিকের গুদামঘর সিলগালা করা হয়েছে।
সেইসঙ্গে ওই মিল মালিকের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করাসহ খাদ্য বিভাগের নিবন্ধন বাতিলেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের হিসেব অনুযায়ী জেলায় প্রায় দশ লাখ মেট্রিক উৎপাদন হয়েছে। খাদ্য ঘাটতির কোনো সম্ভাবনা নেই। সেখানে ধান-চালের দাম বাড়ছে মূলত এক শ্রেণির মজুত ব্যবসায়ীর কারণে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। একদিনের অভিযানে দাম কিছুটা কমেছে। আমদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আগামীতে আরও দাম কমবে বলে আশা রাখছেন তিনি।
ধানের দামও কমেছে
এদিকে, দিনাজপুরে খাদ্য বিভাগের মজুতবিরোধী অভিযানের ফলে ধানের বাজারেও কিছুটা কমেছে। গত দুদিনের ব্যবধানে প্রকারভেদে বস্তাপ্রতি (দুই মণ) ধানের দাম কমেছে ২৫০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত। সেইসঙ্গে বাজারে বেড়েছে ধানের সরবরাহ।
\হব্যবসায়ীরা বলেন, খাদ্য বিভাগের অভিযান শুরু হওয়ার পরে, সকলেই সচেতন হয়ে গেছে। ধরা পড়ার আগেই ধান বিক্রি করে ফেলবেন মজুতদাররা। দিনাজপুর সদর উপজেলার পাচঁবাড়ী ধানের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার সকালে এই হাটে বিআর-৫১ জাতের ধান বিক্রি হয়েছে প্রতিবস্তা (দুই মণ) ২ হাজার ২০০ টাকা দরে। যা গত মঙ্গলবারের হাটে বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৪৫০ টাকা দরে। এভাবে বিআর-৯০ ধান ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে নেমে ৩ হাজার ৩৫০ টাকা, সুমন স্বর্ণ ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে নেমেছে ২ হাজার ২৫০, স্বর্ণা-৫ জাতের ধান ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে নেমে ২ হাজার ১৫০ টাকা, বিআর-১১ ধান ২ হাজার ৪০০টাকা থেকে নেমে ২হাজার ২০০ টাকা, বিআর-৩৪ ধান ৫ হাজার ৪০০ টাকা থেকে নেমে ৪ হাজার ৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
হাটে ধান বিক্রি করতে আসা বিক্রেতারা বলেন, 'আজকে (শনিবার) যারা হাটে ধান নিয়ে আসছেন মাত্র কয়েকজন কৃষক। বাকি সবাই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এই দাম কমে যাবার কারণে যে কয়জন কৃষকের ঘরে ধান আছে তারা লোকসানে পড়ল মজুতকারীদের জন্য।
মিল মালিকরা বলেন, কৃষকের ধান এখন নিবন্ধনহীন মজুতদারের ঘরে। কাটা মাড়াইয়ের শুরুতে মিল মালিকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বেশি দামে ধানগুলো কিনেছে। পরে ওরা হয়ে যাচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী। মিলমালিকরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছি। বিভিন্ন বাজার ঘেঁষে এই মজুতদাররা অস্থায়ী গুদামঘর ভাড়া নিয়ে ধান মজুত করছেন। প্রশাসন যেভাবে অভিযান শুরু করেছে যদি এই মজুতদারদের গুদামঘরে অভিযান পরিচালনা করেন তাহলে ধানের দাম বাড়ার প্রকৃত কারণ বের হয়ে আসবে।