দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে বান্দরবান, রাজশাহী ও পাবনার ঈশ্বরদীতে দুইজন করে, সিলেট ও ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চারজন করে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, মাদারীপুর ও ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে একজন করে নিহত হন। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, জেলার রুমা উপজেলায় গাড়ি খাদে পড়ে দুই নারী পর্যটক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১১ নারী। শনিবার বেলা ১১টার দিকে বগালেক-কেওক্রাডং সড়কে উপজেলার দার্জিলিং পাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- ঢাকার বাসিন্দা ফিরোজা বেগম (৫৩) এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী জয়নব খাতুন (২৪)। আহতরা হলেন- ঢাকার বাসিন্দা রাফান (১২), কুমিলস্নার বাসিন্দা উষসী নাগ (১৫) ও ডা. জবা রায় (৪৫), কুষ্টিয়ার বাসিন্দা মাহফুজা ইসলাম রুমা (৪৫) ও আমেনা বেগম (৬০), তাহমিনা তানজীম তালুকদার (১৯), তাসনিম (২১), রিজভী (৩৪), আঞ্জুমান হক (৩৫), ইতু (১৬) ও স্বর্ণা (২৩)।
রুমা থানার এসআই মোহাম্মদ মিদন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার ৫৭ জনের একটি নারী পর্যটক দল রুমা কেওক্রাডং পাহাড়ে বেড়াতে যায়। সেখানে রাতযাপন করে শনিবার সকালে বগালেক ও রুমা সদরে ফিরছিলেন তারা। ফেরার পথে ১৩ জনকে বহনকারী একটি চান্দের গাড়ি দার্জিলিং পাড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গভীর খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই নারী পর্যটক নিহত হন এবং বাকি ১১ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা মিলে তাদের উদ্ধার করে রুমা উপজেলা স্থাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আহতদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল হক বলেন, আহতদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী অফিস জানায়, জেলার মোহনপুরে বাসের ধাক্কায় ভ্যানের দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুইজন। আহতদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- মোহনপুর উপজেলার বড়াইল গ্রামের ভ্যানচালক সিরাজ উদ্দিন (৫৫) ও একই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ১০ বছর বয়সের ছেলে ভ্যানযাত্রী আব্দুলস্নাহ। আহতরা হলেন- আব্দুল কুদ্দুস (৪০) ও তার মেয়ে নাফিসা আখতার (১৪)।
পুলিশ জানান, বেলা সোয়া ১১টার দিকে মোহনপুর উপজেলার সইপাড়া এলাকায় বাগমারার ভবানীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী একটি বাস ব্যাটারিচালিত ভ্যানকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে ভ্যানচালক সিরাজ ও যাত্রী আব্দুলস্নাহ মারা যান। এ সময় আহত হন নিহত আব্দুলস্নাহর বাবা আব্দুল কুদ্দুস ও বোন নাফিজা। তাদের উদ্ধার প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওসি বলেন, ঘটনার পর বাসটির চালক ও সহকারী পালিয়ে যায়। বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
সিলেট অফিস জানায়, সিলেট-তামাবিল সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাইভেটকার খাদে পড়ে চার আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহত চারজন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী। শুক্রবার রাত ১টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলার চার নম্বর বাংলাবাজার ব্রিজের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার নিজপাট লামাপাড়া গ্রামের জহুরুল মিয়ার ছেলে জুবায়ের আহসান (২৬), নিজপাট তোয়াসীহাটি গ্রামের রনদিপ পালের ছেলে নিহাল পাল (২৫), নিজপাট পানিহারাহাটি গ্রামের আরজু মিয়ার ছেলে মেহেদী হোসেন তমাল (২৪) এবং নিজপাট জাঙ্গালহাটি গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে সুমন আহমদ (২৫)। তারা জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, একটি ট্রাক তাদের প্রাইভেটকারটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে পড়ে যায়। স্থানীয়রা প্রাইভেটকারে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম (পিপিএম) বলেন, জৈন্তাপুর উপজেলার চার নম্বর বাংলাবাজার ব্রিজের পাশে সড়ক দুর্ঘটনায় এই চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, জেলার কালিয়াকৈরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি এলাকায় শনিবার সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকের হেলপার নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো তিনজন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তালুকদার পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস টাঙ্গাইলের
দিকে যাচ্ছিল। পথে উপজেলার খাড়াজোড়া এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের আন্ডারপাসের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাকে থাকা হেলপার নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত তিনজন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। আহতের স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নাওজোড় হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট শরিফুল ইসলাম জানান, তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
পাবনা ও ঈশ্বরদী প্রতিনিধি জানান, জেলার ঈশ্বরদীতে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে কুষ্টিয়া-নাটোর মহাসড়কের ঈশ্বরদী দাশুরিয়ার মিরকামারী পূর্বপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের শেখপাড়া এলাকার আব্দুর রউফের ছেলে মো. নাসিম (৪৫) ও পাবনা শহরের রাধানগর এলাকার সুব্রত কুমারের ছেলে অমিত কুন্ডু (৪০)।
আহতরা হলেন- ঈশ্বরদী উপজেলার সাড়া ঝাউদিয়া এলাকার আফিল উদ্দিনের ছেলে আতিয়ার (৩৩), আটঘরিয়া থানার দেবত্তর এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে আমিনুল ইসলাম (৪৪) এবং পাবনা সদর থানার চরঘোষপুর এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে আ. কাদের। হতাহতরা সবাই মাক্রোবাসের যাত্রী।
পাকশি পুলিশ ফাঁড়ির এস আই বেলাল জানান, মিরকামারী পূর্ব পাড়া কুষ্টিয়া-নাটোর মহাসড়কে মাইক্রোবাস ও বাসের সংঘর্ষের ঘটনার খবর পেয়ে আমারা ঘটনাস্থলে যাই এবং আহতদের দ্রম্নত হাসপাতালে পাঠাই। আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পাবনার পাকশি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশীষ কুমার স্যানাল বলেন, যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসটি পাবনা থেকে কুষ্টিয়ার দিকে যাচ্ছি, অপরদিকে এসএন নামের যাত্রীবাহী একটি বাস কুষ্টিয়ার দিক থেকে আসছিল। পথে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১০ জন আহত হোন। আহতদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
তিনি আরও জানান, আহতদের মধ্যে আরও অন্তত তিনজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাসের হেলপার ও চালক পলাতক রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাস ও মাইক্রোবাস উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, জেলার গফরগাঁও উপজেলায় লরি ও মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আবু সায়েম আকন্দ (২৬) নামে এক মসজিদের ইমাম নিহত হয়েছেন। শনিবার বেলা ১১টায় গফরগাঁও-ভালুকা সড়কের গন্ডগ্রাম এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সায়েম আকন্দ ভারইল মধ্যপাড়া পুরাতন জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন। তার বাড়ি উপজেলার বারবাড়িয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া গ্রামে। বাবার নাম হেলাল উদ্দিন আকন্দ।
স্থানীয়রা জানায়, সায়েম ভারইল মসজিদ থেকে মোটর সাইকেলযোগে গফরগাঁও বাজারে আসছিলেন। এ সময় তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন। স্থানীয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গফরগাঁও থানার ওসি শাহীনুজ্জামান খান র্ঘটনার খবরে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ফরিদপুর ও ভাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, জেলার ভাঙ্গায় যাত্রীবাহী একটি বাসের ধাক্কায় লেগুনার চারজন যাত্রী নিহত এবং ছয়জন যাত্রী আহত হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা পৌরসভার খাড়াকান্দি বাস স্ট্যান্ডের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের আরুয়াকান্দি গ্রামের মেহেদী মাতুব্বর (২৫), একই ইউনিয়নের নোয়াকান্দা গ্রামের হাফিজুল ইসলাম (৪০), মধুখালি উপজেলা সদরের সিরাজুল ইসলাম (৩৫) ও নগরকান্দা উপজেলার পুড়াপাড়া গ্রামের লিটন মন্ডল(৩৮)। আহত ছয়জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. খায়রুল আনাম বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। আহতদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর জানান, ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের তাঁতিবাড়ী নামক স্থানে মোটর সাইকেলের ধাক্কায় চায়না বেগম (৫৫) নামের এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছে। তিনি সদর উপজেলার ঝিকরহাটি (ঘটমাঝি) গ্রামের বাহার মোলস্নার স্ত্রী।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর বৃদ্ধাটি পথ পারাবারের সময় একটি মোটর সাইকেল তাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মস্তফাপুর হাইওয়ে পুলিশের এসআই বিজয় রায় জানান, দুর্ঘটনার পর হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে পাঠায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।