চলছে স্টল নির্মাণের কাজ

সংশয় কাটিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে বইমেলা

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বইমেলার স্থান নির্ধারণ নিয়ে অবশেষে সব ধরনের সংশয় কেটেছে। বাংলা একাডেমির পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে এবারের অমর একুশে বইমেলা-২০২৪। ইতোমধ্যে বইমেলার প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলা একাডেমি। উদ্যানে শুরু হয়েছে স্টল নির্মাণের কাজ। দিন-রাত কাজ করছেন শ্রমিকরা। বাংলা একাডেমি দীর্ঘ ১৬ বছর পর এককভাবে এবারের বইমেলার আয়োজক। বাংলা একাডেমি সূত্র জানায়, আগামী ২৩ জানুয়ারি ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে লটারির মাধ্যমে প্রকাশনীগুলোকে বরাদ্দ দেওয়া হবে স্টল। আর ভাষার মাস ফেব্রম্নয়ারির ১ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠবে বাঙালির প্রাণের এ বইমেলার। এ বছর বইমেলা পূর্বাচলে হবে বলে গুঞ্জন উঠেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া গত বছর নানা সমালোচনা থাকায় এ বছর বইমেলা সম্পন্ন করতে যথাযথ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে বাংলা একাডেমি। মেলার পরিসর বাড়ায় বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মাধ্যমে কাঠামোসহ মেলার প্রায় সব কাজ সম্পন্ন হতো। বিগত বছরগুলোতে তাদের বিভিন্ন অসহযোগিতা ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার পুরো মেলা বাংলা একাডেমি সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়েছে বলে জানিয়েছে মেলা কমিটি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি চত্বর ঘুরে দেখা যায়, স্টল নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা। একাডেমির নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ম্যাপ মেনে স্টল নির্মাণ চলছে। এছাড়া তথ্যকেন্দ্র, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডাসহ বিভিন্ন মঞ্চ ও বইমেলার মিডিয়া সেন্টার নির্মাণের কাজও চলছে। বাংলা একাডেমি সূত্র জানায়, পত্রিকায় দেওয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এ বছর প্রায় ৭০টি নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় স্টল বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছে। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ২১টি প্রকাশনাকে বাছাই করা হয়েছে। এছাড়া গত বছর যেসব প্রতিষ্ঠান স্টল বরাদ্দ পেয়েছিল, সেগুলো অপরিবর্তিত থাকছে। সব যাচাইবাছাই শেষ হলে বইমেলায় কতগুলো স্টল থাকছে তা লটারির দিন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে। সূত্র জানায়, এ বছর নতুন করে বাংলা একাডেমি থেকে ঢাকার ২৫টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের বইমেলায় আনার জন্য শিক্ষকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বইমেলা ঘিরে মেট্রোরেলও চালু থাকবে রাত পর্যন্ত। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবারও বাংলা একাডেমি স্টল তৈরি করাসহ বইমেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে জানিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা বলেন, এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য "পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ"। ১৯৭২ সাল থেকেই বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০০৬ সাল থেকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে বইমেলার আয়োজন করা হতো। গত বইমেলায় আমরা অনেক ধরনের অভিযোগ পেয়েছি। যে কারণে এবার আবারও বাংলা একাডেমি এককভাবে বইমেলার আয়োজন করছে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় বইমেলা আমরা নিজেরাই আয়োজন করছি।' তিনি বলেন, 'বাংলাদেশেই পৃথিবীর দীর্ঘতম বইমেলা আয়োজিত হয়। চাইলে এখানে বিদেশি লেখক অংশ নিতে পারবেন। তবে বিদেশি প্রকাশকদের এখানে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু সম্পূর্ণ দেশীয় বইমেলা, তাই বিদেশি প্রকাশককে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।' মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র?্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল জানান, করোনার পর থেকে মেলা কিছুটা এলোমেলো ছিল। এবার বাংলা একাডেমি সম্পূর্ণ তদারকি করবে। তাদের ভালো প্রস্তুতি রয়েছে। এখন প্রতিটি প্রকাশনা ব্যস্ত রয়েছে নতুন বই প্রকাশনার কাজে। বইয়ের দামের বিষয়ে তিনি বলেন, 'কাগজের দাম স্থিতিশীল থাকায় এ বছর আশাকরি বইয়ের দাম বাড়বে না। বইয়ের মূল্য গত বছরের মতোই থাকবে। তবে এবার নির্বাচনের বছর, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও তেমন একটা ভালো না। বই তো অপরিহার্য কোনো জিনিস না যে কিনতেই হবে, এক্ষেত্রে যাদের হাতে টাকা থাকবে তারাই কিনবে। মেলা শুরু হলে বোঝা যাবে পাঠকরা আসলে কীভাবে দেখেন। দাম নিয়ে পাঠকরা অভিযোগ করবে না আশা করি।' কিংবদন্তি পাবলিকেশনের স্বত্বাধিকারী অঞ্জন হাসান পবন বলেন, 'এবার নির্বাচনের জন্য কাজ স্থবির ছিল। এখন শেষ সময়ে এসে খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে। ২৩ তারিখ লটারি হবে, এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে কাজ শেষ করব সে চিন্তায় আছি। আমাদের প্রকাশনী থেকে এবার ৩০টি নতুন বই মেলায় আসবে।' আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গনি বলেন, 'আমাদের গল্প, উপন্যাস, কবিতাসহ সব ধরনের বই প্রকাশিত হয়। এ বছর প্রায় ১০০টি নতুন বই মেলায় আনব। বাংলা একাডেমিও সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে।' বাংলা একাডেমির মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক এবং বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, 'এবার শুধু মেলার পূর্বপ্রস্তুতি ও পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা সাতটি কোর কমিটি করেছি। এই কমিটি ভালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত মেলায় অনেক অভিযোগ ছিল। একটা প্রকাশনী নিয়ে অনেক অস্থিরতা ছিল, এবার সেটি নেই। তাই আমরা গত বছরের মার্চ থেকে কাজ শুরু করেছি। এবার আমরা পুস্তক সমিতি থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সদস্য ও মন্ত্রণালয়সহ সবাইকে নিয়ে বইমেলার একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করেছি।' তিনি বলেন, 'মেলায় প্রতি বছর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে অনেক অভিযোগ আসে, বিশেষ করে টাকার বিষয়ে। স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মিল পাওয়া যায় না। তাই এবার আমরা নিজেরাই সব তদারকি করছি।' মেলার অবকাঠামোগত বিষয়ে তিনি বলেন, 'অবকাঠামোগত বিন্যাস আগের মতোই আছে। একটা গলির সামনে দাঁড়ালে এর শেষ মাথা দেখা যাবে। গুচ্ছ আকারে থাকবে না। প্যাভিলিয়ন ও স্টলের লাইন আলাদা থাকবে যাতে স্টল খুঁজে পেতে সহজ হয়।' প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। এরপর নানা রূপ-রূপান্তরের মাধ্যমে অমর একুশে বইমেলা আজ বাঙালির প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে।