টাকার লেনদেনের সূত্র ধরে পরিকল্পিতভাবে এক ইজিবাইক চালককে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব। গ্রেপ্তাররা পেশাদার নানা ধরনের অপরাধে জড়িত।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকার টিকাটুলীর্ যাব-৩ এর প্রধান কার্যালয়ে ব্যাটালিয়ানটির অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় শরীয়তপুর থানাধীন কাচিকাটা ইউনিয়নের ৮৯নং হাজিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে ইজিবাইক চালক হাবিবুর রহমান হাবুকে (২৭) হত্যার ঘটনা ঘটে।
হত্যার পর পালানোর সময় স্থানীয় জনতা নাহিদ সরদার নামে এক যুবককে ধরে ফেলে। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা। নাহিদ আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। হত্যার মূল কারণ ও পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানায় নাহিদ। এ ঘটনায় হাবুর ভাই জসিম মাদবর বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উলেস্নখ করে এবং অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে আসামি করে শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্
যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, নাহিদের তথ্য মতে গত ১৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতের্ যাব-৩ এর একাধিক দল ঢাকা ও হ পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ৪
নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে গ্রেপ্তার হয় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানাধীন চরভাগা পশ্চিম প্রধানিয়া গ্রামের ইমাম হোসেনের ছেলে আরিফ (২২)। তার দেওয়া তথ্যমতে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হত্যাকান্ডে জড়িত শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানাধীন ঘড়িসার চরমোহন গ্রামের আবুল বেপারীর দুই ছেলে পারভেজ বেপারী (২৬) ও সজিব বেপারীকে (২২)।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ের্ যাব কর্মকর্তা জানান, ইজিবাইক চালক হাবুর সঙ্গে আরিফের টাকা-পয়সার লেনদেন দীর্ঘদিনের। লেনদেনের সূত্র ধরেই তাদের মধ্যে সম্প্রতি মারামারি হয়। আরিফ হাবুকে চরম শিক্ষা দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার এক পর্যায়ে আরিফ হাবুকে খুনের পরিকল্পনা সাজায়। সে অনুযায়ী আরিফ তার বন্ধু নাহিদ সরদার ও সহোদর দুই ভাই পারভেজ এবং সজিবসহ কয়েকজনকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজায়।
র্
যাব কর্মকর্তা বলছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সকাল থেকেই তারা হাবুর ওপর নজর রাখতে থাকে। বেলা সাড়ে ১১টায় আরিফ তার সহযোগীদের নিয়ে সুইচ গিয়ার চাকু, দেশীয় চাকু ও চাপাতি নিয়ে শরীয়তপুরের দুলার চর এলাকায় অবস্থান করে। হাবু যাত্রী নিয়ে নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার বাজার হয়ে সখিপুর থানাধীন দুলার চর এলাকায় যাচ্ছিল। এ সময় তারা ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ইজিবাইক থামিয়ে হাবুর সঙ্গে টাকা পয়সার লেনদেন নিয়ে কথা তোলে। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তারা হাবুকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। নাহিদ চাপাতি দিয়ে হাবুর মাথায় লক্ষ্য করে কোপ দেয়। মাথা সরিয়ে নিয়ে কোপ লাগে কাঁধে। কাঁধের রগ কেটে যায়। এ সময় গ্রেপ্তার পারভেজ ও সজীব লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে হাবুকে। আরিফ সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে হাবুর পেটে আঘাত করতে থাকে। অজ্ঞান হয়ে হাবু মাটিতে পড়ে যায়। হাবুর চিৎকারে স্থানীয়রা হত্যাকারীদের ধাওয়া করে। এ সময় জনতা নাহিদকে ধরে ফেলে। বাকিরা পালিয়ে যায়। হাবুকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
র্
যাব কর্মকর্তা বলেন, আরিফ মূলত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ও মাদক ব্যবসায়ী। এক সময় আরিফ ইজিবাইক চালাত। পরে ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করেছে। বেপরোয়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত আরিফ এলাকার কিশোরদের টাকা আর মাদকের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করাত।
তিনি আরও জানান, সহোদর পারভেজ ও সজিব কেউই এসএসসি পাস করেনি। তাদের মা জডার্ন প্রবাসী। পিতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। পিতা-মাতার অবর্তমানে দুই ভাই বেপরোয়া জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে নানা অপকর্ম করত। তার মূলত আরিফের সঙ্গে নানা অপরাধ করত। মামলার এজাহারনামীয় আসামি আশরাফুল দেওয়ান, মাহাবুব বেপারি ও ইউসুফসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা পলাতক রয়েছে।