শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১
নতুন উপধরন জেএন.১ শনাক্ত

দ্রম্নত করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরুর নির্দেশ

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দ্রম্নত করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরুর নির্দেশ

দেশে আবারও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এরই মধ্যে আলোচিত করোনার ওমিক্রন ধরনের উপধরন জেএন.১ শনাক্ত হয়েছে। পাঁচ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় জেএন.১ ধরা পড়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এ কথা জানিয়েছে। এ জন্য দ্রম্নত করোনাভাইরাসের টিকা দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স বিভাগের সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, 'ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট সবাইকে পাঠানো হয়েছে।'

বৃহস্পতিবার দুপুরে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, 'পাঁচটি নমুনায় ওমিক্রনের উপধরন জেএন.১ শনাক্ত হয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের করোনা রোগীদের নমুনা পরীক্ষার পর এই উপধরন শনাক্ত হয়েছে।'

মাসখানেক আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই উপধরনের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, নতুন এই উপধরন অতি দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা আছে। তবে এতে রোগের লক্ষণে তীব্রতা কম।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির ওপর তারা নজর রাখছেন। এদিকে ১৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সরকার আড়াই কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহ নিশ্চিত করেছে। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে চতুর্থ ডোজ হিসেবে এসব টিকা দেওয়া হবে।

টাস্কফোর্স বিভাগের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এ জন্য ফাইজার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রমের প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ (তৃতীয়, চতুর্থ ডোজ) বিতরণ এবং টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

নির্দেশনায় বলা হয়, ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী, ৬০ বছর এবং এর বেশি বয়সি জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ১৮ বছর এবং তার চেয়ে বেশি বয়সি জনগোষ্ঠী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি) জনগোষ্ঠী এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে রাজধানীর আটটি কেন্দ্রে বুস্টার ডোজ ফাইজার ভিসিভি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। কেন্দ্রগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ও ফুলবাড়িয়া সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল।

পরে ধাপে ধাপে ঢাকার বিভিন্ন বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট ও সরকারি হাসপাতাল, ঢাকার বাইরের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ভ্যাকসিন বিতরণের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে ফাইজার আরটিইউ ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে হবে। প্রাথমিকভাবে মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নয়াবাজার ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালে এই টিকা দেওয়া হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার প্রমাণস্বরূপ ভ্যাকসিনের নাম এবং তারিখ উলেস্নখ করে টিকা কার্ড সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে দিতে হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজের ক্ষেত্রে সুরক্ষা ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপ থেকে ডাউনলোড করে সঙ্গে আনতে হবে টিকাকার্ড। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পূর্ব নির্ধারিত উপায়ে কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিনেশনের রিপোর্ট দিতে হবে।

তথ্য অনুযায়ী, ভারতের কেরালায় ২০২৩ সালের শেষদিকে শনাক্ত হয় করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরন। জেএন.১ নামের এই ধরন নিয়ে তখন উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিশ্বের অনেক বিজ্ঞানী। তারা বলেন, এই ধরন করোনার আগের সব ধরনের চেয়ে বেশি সংক্রামক।

বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ধারণা, করোনার ওমিক্রন ধরনের উপধরন বিএ.২.৮৬ অথবা পিরোলার মতোই এই জেএন.১ ধরন। এটি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আমেরিকায় প্রথম শনাক্ত হয়। এরপর গত ১৫ ডিসেম্বর ভারতে সাতজনের দেহে এই ধরন শনাক্ত হয়।

করোনার জেএন.১ ধরন শনাক্ত হওয়া ভারতের কেরালার এক নারীর দেহে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগের মৃদু লক্ষণ দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে এটিই এই রোগের লক্ষণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২০ ও ২০২১ সালে পুরো বিশ্বে দাপিয়ে বেড়ানো করোনাভাইরাসের প্রকোপ এখন আর নেই। কিন্তু এ করোনার কারণে বিশ্বের অর্থনীতির বারোটা বেজে গিয়েছিল। করোনার কারণে বেড়ে গিয়েছে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য।

২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৬৪ কোটি মানুষকে আক্রান্ত করেছে করোনা। মারা গেছেন ৬৪ লাখ। মাসের পর মাস লকডাউনের কারণে স্থবির হয়ে পড়ে অর্থনীতি। ইউএনসিটিএডির মতে, করোনার কারণে ২০২০ সালে বৈশ্বিক লেনদেন কমে যায় আড়াই ট্রিলিয়ন ডলার। তবে ২০২১ সালে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে