ইরানে পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় নিহত অন্তত ৯
তেহরানে পাকিস্তানের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব সীমান্তে ইরানি কর্নেলকে গুলি করে হত্যার দাবি আমরা বুঝতে পারছি, আত্মরক্ষার্থে হামলা: ভারত উত্তেজনা কমাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব চীনের
প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশে সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। আকাশসীমা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানে ইরানের বিমান হামলা চালানো নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে এ হামলা হলো। এতে চার শিশু ও তিন নারীসহ অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন।
১৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পঞ্জগুর গ্রামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। তাতে দুই শিশুসহ অন্তত চারজন নিহত হয়। ওই হামলার ৪৮ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সকালে ইরানে প্রতিশোধমূলক হামলা চালালো পাকিস্তান। এ ঘটনার পরপরই তেহরানে পাকিস্তানের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব করেছে ইরান। খবর- এএফপি, ডন ও ইরান ইন্টারন্যাশনাল।
এর আগে পাকিস্তান-ইরান সীমান্তে হোসেইন আলী জাওয়ানফার নামে ইরানের ইসলামি বিপস্নবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক কর্নেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বুধবার সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের খাশ শহরের সঙ্গে ইরানের প্রাদেশিক রাজধানী জাহেদানের সংযোগ সড়কে 'সন্ত্রাসীদের' গুলিতে তিনি নিহত হন।
এদিকে ইরান-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বলেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, 'ভারত বুঝতে পারছে, যে ঘটনা ঘটেছে, দেশগুলো নিজেদের আত্মরক্ষার্থে তা করেছে।'
তবে বিরোধ মেটাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, চীন আন্তরিকভাবে আশা করে, উভয় পক্ষ (ইরান ও পাকিস্তান) শান্ত ও সংযমী থাকার চেষ্টা করবে এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়াতে পারবে।
বুধবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশটিতে গত মঙ্গলবার রাতে 'বিধিবহির্ভূতভাবে' বিমান হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে দুই শিশু নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান। তেহরান থেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর এ হামলার দুই দিনের মাথায় ইরানে পাল্টা অভিযান চালানোর কথা জানাল পাকিস্তান।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অত্যন্ত সমন্বিতভাবে এবং লক্ষ্যবস্তু সুনির্দিষ্ট করে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। এ অভিযানে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। অভিযানের সাংকেতিক নাম দেওয়া হয়েছে 'মার্গ বার সরমাচার'।
ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের উপপ্রাদেশিক গভর্নর আলিরেজা মারহামাতির বরাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, 'ইরানের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় তিন নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছে। তারা কেউ ইরানি নাগরিক নন।'
আলিরেজা আরও বলেন, পাকিস্তান সীমান্তসংলগ্ন সারাভান শহরের কাছের একটি গ্রামে এ হামলা হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রথমে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানের এই হামলায় তিন নারী, চার শিশুসহ মোট সাতজন নিহত হয়েছেন। পরে হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়, এই হামলায় দুই পুরুষও নিহত হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ জন।
বুধবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুলস্নাহিয়ান দাবি করেন, পাকিস্তানে 'ইরানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জইশ আল-আদল'কে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের কোনো নাগরিককে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি বলে দাবি তার।
তেহরানে পাকিস্তানের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব : এদিকে হামলার পর তেহরানে পাকিস্তানের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে বৃহস্পতিবার তলব করেছে ইরান। দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম এই তথ্য জানিয়েছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিমের খবরে বলা হয়, সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের একটি সীমান্ত গ্রামে পাকিস্তান হামলা চালায়। এই হামলার ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে তেহরানে পাকিস্তানের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে।
পাকিস্তান সীমান্তে ইরানি কর্নেলকে গুলি করে হত্যা: চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এবার পাকিস্তান-ইরান সীমান্তে হোসেইন আলী জাওয়ানফার নামে ইরানের ইসলামি বিপস্নবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক কর্নেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের খাশ শহরের সঙ্গে ইরানের প্রাদেশিক রাজধানী জাহেদানের সংযোগ সড়কে 'সন্ত্রাসীদের' গুলিতে তিনি নিহত হন।
ইরানি সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, সুন্নি মুসলিমদের চরমপন্থি গ্রম্নপ জইশ আল-আদল এ হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে। এছাড়া কর্নেল জাওয়ানফারের দুই দেহরক্ষীকেও হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে জইশ আল-আদল।
তথ্যগুলো নিশ্চিত করে আইআরজিসির কুদস ঘাঁটি এক বিবৃতি দিয়েছে। ওই বিবৃতির বরাত দিয়ে ইরান ইন্টারন্যাশনাল আরও জানিয়েছে, কুদস ঘাঁটির সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনে প্রদেশের সারাভান সফরে গিয়েছিলেন কর্নেল জাওয়ানফার
মুখ খুললো ভারত: ইরান-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব নিয়ে মুখ খুলেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তানের ভূখন্ডে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা এমন একটি বিষয়, যা দুই দেশের জন্যই উদ্বেগের। আরও বলা হয়েছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের 'জিরো টলারেন্স' অবস্থান অটুট রয়েছে। আর ভারত বুঝতে পারছে, যে ঘটনা ঘটেছে, দেশগুলো নিজেদের আত্মরক্ষার্থে তা করেছে।
পাকিস্তানের ভূখন্ডে ইরানের হামলার ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি বলেন, 'এটা ইরান ও পাকিস্তানের বিষয়। তবে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতিতে অটুট আছে। আমরা বুঝতে পারছি, আত্মরক্ষার্থে এমনটা করা হয়েছে।'
উত্তেজনা কমাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব চীনের: এদিকে ইরান-পাকিস্তান বিরোধ মেটাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে চীন।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বৃহস্পতিবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, চীন আন্তরিকভাবে আশা করে, উভয় পক্ষ (ইরান ও পাকিস্তান) শান্ত ও সংযমী থাকার চেষ্টা করবে এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়াতে পারবে।
তিনি বলেন, উভয় পক্ষ চাইলে পরিস্থিতির উত্তেজনা কমাতে আমরা গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে পারি।
ইরান ও পাকিস্তান উভয়ে চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সদস্য। দুই প্রতিবেশীই চীনের কাছে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী দেশ বলে উলেস্নখ করেছেন মাও নিং।