শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১
সংঘবদ্ধ চক্রের দুইজন গ্রেপ্তার

গাড়ির মালামাল চুরি করে মালিকের কাছেই বিক্রি

গাফফার খান চৌধুরী
  ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
গ্রেপ্তার তামজিদ হোসেন শুভ ও মো. সিয়াম

চোর বটে! সাধারণ গাড়ির মালামাল চুরি করে না। শুধু বিলাসবহুল দামি গাড়ির মালামাল চুরি করে। নিজেদের অভিজাত চোর বলেও দাবি করে চক্রের সদস্যরা। চুরি করা মালামাল আবার কৌশলে গাড়ির মালিকের কাছেই বিক্রি করা হয়। বিক্রির কাজটি করে চোর চক্রের সঙ্গে জড়িত গাড়ির মালামাল বিক্রিকারী এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এমনই একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের দুই সদস্য হাতেনাতে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। গ্রেপ্তাররা এক হাজারের বেশি চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত ১০ জানুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ৭টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল আসে। কলকারীর ভাষ্য মতে, বসুন্ধরা শপিং মলের পার্কিং এলাকায় দুইজন সন্দেহভাজন যুবক ঘোরাফেরা করছে। এক পর্যায়ে তারা পার্কিং লটে রাখা মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির লুকিং গস্নাস চুরির চেষ্টা করে। এ সময় তেজগাঁও থানা পুলিশ দ্রম্নত গিয়ে তাদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে দুই চোরের অভিনব সব চুরির কাহিনী।

তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন যায়যায়দিনকে বলেন, পুলিশ দ্রম্নত ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতেনাতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তাররা হলেন- তামজিদ হোসেন শুভ (২৩) ও মো. সিয়াম (২৩)। হাতেনাতে গ্রেপ্তারের পরেও তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে। কারণ ততক্ষণে তারা তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ অন্যত্র ফেলে দেয়। ব্যাগে পাওয়া যায় চুরির মালামাল।

এরপর শুরু হয় পার্কিং লটে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা। পর্যালোচনায় দেখা যায়, গ্রেপ্তার দুইজন এর আগেও সেখান থেকে বিলাসবহুল মার্সিডিজ বেঞ্জ ও হেরিয়ার গাড়ির লুকিং গস্নাস, লেগো, স্টিকারসহ গাড়ির বাইরের অংশে থাকা দামি মালামাল চুরি করেছে। যার ভিডিও পাওয়া যায়। শুরু হয় গ্রেপ্তারদের কড়া জিজ্ঞাসাবাদ। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসে দামি গাড়ির মালামাল চুরি করে আবার গাড়ির মালিকের কাছেই বিক্রি করার চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, গ্রেপ্তার দুইজন একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্য। তাদের চক্রের সদস্য সংখ্যা ৯ জন। এই চক্রটি ঢাকার ধোলাইখালকেন্দ্রিক। চক্রের প্রধান আকাশ। তারা আকাশ গ্রম্নপের সদস্য। চক্রের সদস্যের সঙ্গে ধোলাইখালকেন্দ্রিক গাড়ির বিভিন্ন মালামাল বিক্রিকারী দোকানদারসহ ভাসমান বিক্রেতাদের অনেকেরই যোগাযোগ আছে। চক্রটির টার্গেট মার্সিডিজ বেঞ্জ ও হেরিয়ারের মতো বিলাসবহুল গাড়ি। তারা এসব গাড়ির সামনের লোগো, ব্যাকলাইট, সামনের লাইট থেকে শুরু করে অন্যান্য মালামাল চুরি করে। এক কথায় গাড়ির বাইরের অংশে থাকা যেসব মালামাল সহজেই চুরি করা সম্ভব, সেইসব মালামাল তারা চুরি করত।

ওসি জানান, চুরি করা মালামাল বিক্রি করে দিত, ধোলাইখালকেন্দ্রিক গাড়ির মালামাল বিক্রিকারী স্থায়ী ও ভাসমান দোকানদারদের কাছে। দামি গাড়ির মালামাল সহজেই সব জায়গায় পাওয়া যায় না। শোরুম থেকে কিনতে অনেক টাকা লাগে। যে কারণে অনেকেই ধোলাইখাল ও বাংলামোটরের বিভিন্ন দোকানে দামি গাড়ির মালামালের খোঁজ করেন। এ সময় দোকানদারদের অনেকেই বলেন, ওমুক দোকানে যান পেয়ে যাবেন। অথবা ধোলাইখাল ওই দোকানে যান পেয়ে যাবেন। যথারীতি গাড়ির মালিক নিজে বা তার লোকজনদের সেই দোকানে গিয়ে সেইসব জিনিসপত্র পান। গাড়ির মালিকের কাছেই চুরি করার মালামাল বেশি দামে আবার বিক্রি করে দেওয়া হয়।

তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, এমন চক্রের সঙ্গে যেসব দোকানদার জড়িত তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যেই এমন মালামাল বিক্রিকারী ও চোর সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে সুজন ও রুবেলের নাম জানা গেছে। চক্রটি ধোলাইখালকেন্দ্রিক চুরি করার মালামাল বিক্রি করে।

গ্রেপ্তার দুইজন পঞ্চম শ্রেণি পাস করতে পারেনি। তাদের বাড়ি পুরান ঢাকার ওয়ারী থানাধীন লালমোহন সাহা স্ট্রিটে। তারা প্রায় ৩ বছর ধরে দামি গাড়ির মালামাল চুরি করে বিক্রি করে আসছিল। চক্রটি এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। সবই দামি গাড়ির মালামাল।

ওসি বলেন, তারা মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা জোগাড় করতেই মূলত তারা গাড়ির মালামাল চুরি করে। তারা সব ধরনের মাদক সেবন করে থাকে। তাদের চুরির ধরনটিও অভিনব। তারা অনেকটাই চালকের বেশভূষা ধারণ করে। এরপর পার্কিং লটে যায়। যে কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলে তারা নিজেদের চালক বলে দাবি করে। তাদের কাছে গাড়ির নকল চাবি থাকে।

কেউ জিজ্ঞাসা করলেই তারা বলেন, সাহেব বা ম্যাডাম বের হবেন, এজন্য গাড়ি বের করতে এসেছি। আর যদি কেউ না দেখে তা হলে চোখের পলকে গাড়ির মালামাল চুরি করে সঙ্গে থাকা ব্যাগে ভরে লাপাত্তা হয়ে যায়। শুভর বিরুদ্ধে ৪টি ও সিয়ামের বিরুদ্ধে ৩টি এ ধরনের চুরির মামলা আছে। চক্রটির টার্গেট ঢাকার অভিজাত শপিং কমপেস্নক্সগুলো। যেখানে সাধারণত ধনাঢ্য ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের সদস্যরা দামি গাড়ি নিয়ে শপিং করতে যান। যমুনা ফিউচার পার্কও রয়েছে দামি গাড়ির মালামাল চুরির টার্গেটের মধ্যে।

ওসি আরও বলেন, ঢাকায় এমন একাধিক চোর সিন্ডিকেটের সন্ধান মিলেছে। বাংলামোটরকেন্দ্রিক রয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট। পুরো সিন্ডিকেট সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে। চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এমনকি এমন ব্যবসায় জড়িত ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে