অগ্রগতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অনেক চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করে নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, বিষয়গুলো বুঝতে তার 'একটু সময়' প্রয়োজন।
রোববার প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রণালয়ের চারজন সচিব ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় করেন নতুন অর্থমন্ত্রী। বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বক্তব্য শোনার পর নিজে প্রায় ২৫ মিনিট বক্তব্য দেন।
কূটনীতিক হিসেবে নিজের দীর্ঘ কর্মজীবন এবং বাংলাদেশের অভু্যদয়ের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে মাহমুদ আলী বলেন, "চ্যালেঞ্জ ছিল, চ্যালেঞ্জ আছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, তা সমাধান করতে হবে। রাতারাতি সব সংকট দূর করা যাবে না। বিষয়গুলো বুঝতে একটু সময় দিন।"
অর্থনীতির ছাত্র মাহমুদ আলী রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন পেশাদার কূটনীতিক। তার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন কিছুদিন।
এখন এমন এক সময়ে তাকে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের হাল ধরতে হচ্ছে যখন রেকর্ড মূল্যস্ফীতিতে জনজীবনে কষ্ট বেড়েছে, ডলারের দাম আর রিজার্ভ সংকট হয়ে উঠেছে সরকারের বড় মাথাব্যথা। আর্থিক ও ব্যাংক খাতে সুশাসনের জন্য সংস্কারের আহ্বান অনেক বেশি জোরালো হয়ে উঠেছে।
মত বিনিময়ে তিনি বলেন, "রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সময় দিতে হবে। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে অর্থ মন্ত্রণালয় একা পারবে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব। রাতারাতি সব কিছু ঠিক করা যাবে না"
তিনি বলেন, 'অর্থ পাচার রোধে কাজ করা হবে। টাকার মূল্য কমে গেছে। সেটা নিয়েও কাজ করা হবে। এ বিষয়ে দেখি কি করা যায়।'
করোনাভাইরাস মহামারির পর ইউক্রেইন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বড় ধাক্কা দিয়ে গেছে, সে কারণে ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও। জটিল ওই সময়ে অর্থমন্ত্রীর ভূমিকায় আ হ ম মুস্তফা কামালের করণীয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বার বার।
বয়স আর শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত কয়েক বছর বাজেট ঘোষণার সময় খুব বেশি সাবলীল ছিলেন না মুস্তফা কামাল। সে সময় তার দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গত সরকারে পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো এম এ মান্নান।
সে কারণে অনেকের ধারণা ছিল, শেখ হাসিনার নতুন সরকারে এবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে মান্নানকে দেখা যতে পেরে। কিন্তু তাদের দু'জনই শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েছেন। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ভার দিয়েছেন পুরানো আস্থাভাজন আবুল হাসান মাহমুদ আলীর হাতে।
দিনাজপুর-৪ থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত সাংসদ আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত সরকারে না থাকলেও তার আগে দুইবার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে নবগঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মাহমুদ আলী, ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।
এরপর আওয়ামী লীগের নির্বাচনকালীন সরকারে মাহমুদ আলীকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ ফের সরকার গঠন করলে ২০১৪ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পাঁচ বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মাহমুদ আলী। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্রসীমা নির্ধারণী মামলার নিষ্পত্তি এবং ছিটমহল বিনিময় তার সময়েই হয়।
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নতুন মেয়াদে মন্ত্রিত্ব না পেলেও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মাহমুদ আলী।
৮১ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে এবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন।