নির্বাচনী সহিংসতায় আহত অর্ধশতাধিক
প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
নির্বাচনী সহিংসতার জেরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে উপজেলা সদর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০৪ রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের ঘটনায় সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৯ জনকে আটকসহ ৩টি রামদা, পিস্তল থেকে ছোঁড়া একটি পরিত্যক্ত গুলি এবং দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। সংঘর্ষ চলাকালে মাসুদ রানা সোহাগ নামের এক সংবাদকর্মী সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করতে গেলে আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ভোট গ্রহণের দিন রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে সদর ইউনিয়নের সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের মূল ফটকের সামনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুহিবুর রহমান মানিক (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী (ঈগল) সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার জেরে এদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পূর্ব মাছিমপুর গ্রামের আমরু মিয়ার পুত্র ইমরান আহমদ, শামীমসহ ২৫/৩০ জন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল মিয়ার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় ভাতিজাকে রক্ষা করতে গেলে দোয়ারাবাজার প্রেস ক্লাব সেক্রেটারি সাংবাদিক আশিক মিয়ার উপরও আক্রমণ করে। উপর্যুপরি মারপিটে ঘটনাস্থলে মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটে পড়েন, যুবলীগ নেতা আবুল মিয়া ও সাংবাদিক আশিক মিয়া। পরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং নৈনগাঁও গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে পুলিশ সংঘর্ষ প্রতিহত করতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশের রাবার বুলেটে গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ৩০/৩৫ জন। গুরুতর আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষে আহতরা হলেন- জাবেদ মিয়া (২৫), জুয়েল মিয়া (২৮), রুস্তম আলী (৬০), আব্দুছ সাত্তার (৪৫), সেলিম (৪৫), সুজন মিয়া (২৬), আলী নুর (২০), আক্তার হোসেন (৩২), রোয়াব আলী (৩০), ছদরুল ইসলাম (৪০), জিয়াউল (২৫), গিয়াস উদ্দিন (৩৫), ধনাই মিয়া (৫০) প্রমুখ।
উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আহত আবুল মিয়া বলেন, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা সদরে আমার বাসার সামনে গেলে পূর্ব মাছিমপুর গ্রামের আমরু মিয়া দুই পুত্রসহ আগে থেকে ওঁতপেতে থাকা ঈগল প্রতীকের ২৫/৩০ জন সমর্থক অতর্কিতভাবে আমার উপর হামলা চালায় এবং আমরু মিয়ার পুত্র শামীম আমাকে লক্ষ্য করে তার হাতে থাকা অবৈধ পিস্তল থেকে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। এ সময় আমার মোবাইল, পকেটে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। আমাকে বাঁচাতে এলে আমার চাচা সাংবাদিক আশিক মিয়াকেও পেছন দিক থেকে হামলা চালিয়ে আহত করে। পরে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
এএসপি (ছাতক-দোয়ারাবাজার সার্কেল) রণজয় চন্দ্র মলিস্নক বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে আগে থেকেই উত্তেজনা চলছিল। বুধবার সকালে জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল খালেকের পুত্র আবুল মিয়া তার বাসার সামনে গেলে আগে থেকে ওঁতপেতে থাকা পূর্ব মাছিমপুর গ্রামের আমরু মিয়ার পুত্ররাসহ কয়েকজন তার উপর অতর্কিত আক্রমণ করে মারপিট করে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ মারমুখী লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে ১০৪ রাউন্ড শর্ট গান ছুঁড়ে। এ সময় ৩টি রামদা, ১টি পরিত্যক্ত পিস্তলের গুলি ও বাঁশের লাটিসোটা উদ্ধার করা করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
গফরগাঁওয়ে নৌকা সমর্থকের বাড়িতে হামলা
এদিকে আমাদের গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকের বিরুদ্ধে নৌকার সমর্থক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার অভিযোগ। এ সময় গুলিতে আহত আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে লিটন মিয়াকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার দত্তের বাজার ইউনিয়নের বিরই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরির্শন করেছেন গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজা নাজনীন।
পুলিশ ও ভোক্তভুগী পরিবার সূত্রে জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবুল হোসেন দীপুর সমর্থকরা নৌকার সমর্থক দত্তের বাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালায়। বারান্দার গ্রিলে রামদা ও লোহার শাবল দিয়ে আঘাত করতে থাকলে ঘরের জানালা খুলে দেখার সময় জালাল উদ্দিনের ছেলে লিটন মিয়াকে উদ্দেশ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি করে। এতে জালাল উদ্দিনের ছেলে লিটন মিয়া গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে স্বজনরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।