শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১
ফরিদপুর-৪ আসন

যেসব কারণে বারবার হারতে হয় কাজী জাফর উল্যাহকে

ফরিদপুর প্রতিনিধি
  ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
কাজী জাফর উল্যাহ

সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ভোটযুদ্ধে হারতে হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহকে।

তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) তিনটি উপজেলা নিয়ে এ আসন গঠিত। এই আসন ফরিদপুরের সাবেক সংসদীয় আসন ৪ ও ৫ কে ভেঙে একটি করা হয়েছে। আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও গত তিনটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, কাজী জাফর উল্যাহ নৌকা প্রতীক পেয়েছেন পরপর তিনবার। আর এই তিনবারই তাকে পরাজিত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী। গত ২০১৪ সালে নিক্সন চৌধুরী ২৬ হাজার ৫২ ভোটের ব্যবধানে, ২০১৮ সালে ৪৫ হাজার ৯৪৫ ভোটের ব্যবধানে এবং সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩ হাজার ৯৬৯ ভোটের ব্যবধানে কাজী জাফর উল্যাহকে পরাজিত করেন।

দলের প্রবীণ এই প্রেসিডিয়াম সদস্যের পরাজয় জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দেখছেন নানাভাবে। অনেকেই বলছেন- স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হওয়া, আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোট নিক্সনের পক্ষে যাওয়া, তরুণদের নিক্সন প্রীতি, নির্বাচন পরিচালনা কৌশলে নিক্সনের এগিয়ে থাকাসহ নানা কারণ। তবে কাজী জাফর উল্যাহর নেতাকর্মীরা দাবি করছেন অর্থের কাছে পরাজয় হয়েছে আমাদের।

ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন। যিনি এমপি নিক্সনের ঘনিষ্ঠ জন হিসেবে পরিচিত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিক্সন চৌধুরী এলাকার মানুষের সুখে দুঃখে সব সময় পাশে থাকেন বলেই ভোটারদের ভালোবাসায় জিতে হ্যাটট্রিক করেছেন নিক্সন চৌধুরী। নিক্সনকে এলাকার সব শ্রেণির মানুষ পছন্দ করে তাদের নিজের লোক মনে করেন। এ জন্য ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের আস্থা ও ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছেন। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই নির্বাচনী ফলাফলে।

বার বার স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যাওয়া প্রসঙ্গে কাজী জাফর উল্যাহর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, কাজী সাহেব একজন সৎ রাজনীতিক, ভদ্র লোক। বর্তমান সময়ে তার জন্য এই রাজনৈতিক পরিবেশ বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের নয়। তাছাড়াও নির্বাচনী এলাকায় তিনটি উপজেলায় আওয়ামী লীগ এন্টি ভোট বা সমর্থন নিক্সন সাহেব পেয়ে থাকেন, এর বাইরেও দলের মধ্যে বিভক্তি থাকায় আওয়ামী লীগের কিছু ভোটও তিনি পান বলেনই তার বিজয় হয়।

কাজী জাফর উল্যাহর সমর্থক ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান বলেন, এ আসনে তিনটি উপজেলার মধ্যে আমরা ভাঙ্গায় ভালো করেছি। নিক্সনের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছি। তবে সদরপুর ও চরভদ্রাসনে আমরা ভালো করতে পারিনি। তিনি বলেন, 'ভাঙ্গার তুলনায় সদরপুর ও চরভদ্রাসনে আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল। পাশাপাশি প্রতিপক্ষের নির্বাচনী কৌশল আমরা ভাঙ্গায় যতটা প্রতিহত করতে পেরেছি, ওই দু'টি উপজেলায় তা পারিনি।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাকের) সভাপতি অ্যাডভোকেট শ্রীপ্রা গোস্বামী বলেন, এটা সত্য যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফরিদপুর বেশ ভালো হয়েছে। তবে কাজী সাহেবের মতো একজন প্রবীণ নেতার বারবার হারের বিষয়ে তিনি বলেন, নিক্সন, কাজী সাহেবের থেকে বয়সে অনেক কম হওয়ায় তিনি তৃণমূল মানুষে সঙ্গে মিলে মিশে চলতে পেরেছেন, যেটা কাজী জাফর উল্যাহ পারেনি। এর বাইরেও তরুণ সমাজের সঙ্গে নিক্সনের সখ্যতা অনেক বেশি ছিল এবং নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের বাইরে যারা (বিরোধীরা) তারা বরাবরই নিক্সেনকে সমর্থন দিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে