স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা
প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে বুধবার ভোরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কর্মসূচি। সকাল ৮টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি সেখানে মোনাজাতে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আবারও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেন শেখ হাসিনা। এ সময় জাতির পিতার ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডক্টর হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এএম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপস্নব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুবমহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও শ্রদ্ধা ১
নিবেদন করেন।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে এ দিন বিকালে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করে আওয়ামী লীগ। অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ ছাড়া প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোও বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করে।
ডাকটিকিট অবমুক্ত প্রধানমন্ত্রীর
এদিকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম এবং ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার গণভবনে ১০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প, উদ্বোধনী খাম এবং ৫ টাকা মূল্যমানের ডাটা কার্ড অবমুক্ত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কে এম সাখাওয়াত মুন বলেন, অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ সিলমোহর ব্যবহার করা হয়েছে। আজ (বুধবার) থেকে ঢাকা জিপিওর ফিলাটেলিক বু্যরোতে স্ট্যাম্প, উদ্বোধনী খাম এবং ডাটা কার্ড বিক্রি করা হবে। এগুলো পরে সারাদেশের অন্যান্য জিপিও এবং প্রধান পোস্ট অফিসগুলোতেও পাওয়া যাবে। উদ্বোধনী খাম ব্যবহারের জন্য চারটি জিপিওতে বিশেষ সিলমোহরের ব্যবস্থাও রয়েছে।
এ সময়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান ছিলেন।
'নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া'
এদিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দলীয় নেতাদের সঙ্গে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডক্টর হাছান মাহমুদ। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
ডক্টর হাছান মাহমুদ বলেন, 'আওয়ামী লীগ নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ হবে অগ্নিসন্ত্রাস সমূলে উৎপাটন করা ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া।'
সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'আপনারা জানেন যে ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে অত্যন্ত সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সন্ত্রাসমুক্ত একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় ৭০ শতাংশের ওপর মানুষ ভোট দিয়েছে। তিন দিন ছুটি পাওয়ায় অনেকেই শহর থেকে গ্রামে চলে গিয়েছিল। সে কারণে কিছু বড় শহরে ভোটের হার কিছুটা কম হয়েছে। কিন্তু এরপরও আমাদের ভোট প্রদানের হার ৪২ শতাংশ।'
তিনি বলেন, 'এটিও উৎসাহব্যঞ্জক যে মার্কিন পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো, অন্যান্য দেশ ও বিভিন্ন জোটভুক্ত দেশের পর্যবেক্ষক যারা এসেছিল, তারা সবাই এ নির্বাচনকে অত্যন্ত সুন্দর, অবাধ, নিরপেক্ষ মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেছে। নির্বাচনের সময় নানাবিধ গন্ডগোলের মাত্রা অন্যবারের চেয়ে অনেক কম হয়েছে বলে তারা অভিমত দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের বিবৃতিতে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছে। জাপান থেকে শুরু করে ৩১টির বেশি দেশের রাষ্ট্রদূতরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন, অভিনন্দন জানিয়েছেন। ভারত, চীন, রাশিয়া অভিনন্দন জানিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টেলিফোন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আর যারা ভোট বর্জনের কথা বলেছিল, অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে ভোট বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছিল, সেই বিএনপি-জামায়াতের প্রতি মানুষ বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। জনগণ উৎসাহের সঙ্গে ভোট দিয়ে তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।'
দেশের ইতিহাসে একটি ভালো, সুন্দর নির্বাচন হয়েছে বলে উলেস্নখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'নতুন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে। আমাদের সরকার নতুন যাত্রা শুরু করবে। সরকার গঠনের পর আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে দেশ থেকে অগ্নিসন্ত্রাসকে সমূলে উৎপাটন করা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।'
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবন থেকে পাকিস্তানি সেনারা আটক করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। ওই রাতেই বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর শুরু হয় বর্বর হামলা।
পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান বঙ্গবন্ধু। তার ডাকে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তি সংগ্রামে।
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভু্যদয় ঘটে।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বিশ্ব জনমতের চাপে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। মুক্তির পর তিনি লন্ডন যান। সেখান থেকে ১০ জানুয়ারি দিলিস্ন হয়ে পৌঁছান ঢাকায়।
লাখো জনতা সেদিন তাদের প্রিয় নেতাকে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে খোলা ট্রাকে করে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নিয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধু সেখানে সদ্যস্বাধীন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। প্রায় কুড়ি মিনিটের সেই আবেগঘন বক্তৃতায় তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানে বন্দিদশায় তিনি ফাঁসিকাষ্ঠে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন, বাঙালিকে কেউ 'দাবায় রাখতে' পারবে না।
'আমার বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে। আমার জীবনের সাধ আজ পূর্ণ হয়েছে। আমার বাংলার মানুষ আজ মুক্ত হয়েছে।'