সরকার ঘোষিত নতুন কাঠামো অনুযায়ী বেতন না হওয়ার অভিযোগ তুলে চট্টগ্রামে ফের বিক্ষোভ করেছেন তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার (সিইপিজেড) ভেতরে বিক্ষোভ করেন বলে সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবহান জানান।
কারখানার কর্মীরা জানান, 'সরকার ঘোষিত নতুন কাঠামোয় বেতন না হওয়ায় শ্রমিকরা সকালে বিক্ষোভ শুরু করেন। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় প্যাসিফিক জিন্স গ্রম্নপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এনএসটি ফ্যাশনের প্রধান কার্যালয় ঘিরে প্রথমে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। পরে মালিকপক্ষের আশ্বাসে সকাল ১০টার দিকে তারা কাজে ফিরে যান। এরপর সাত নম্বর সেক্টরের জে জে মিলসের শ্রমিকরা নতুন কাঠামোয় বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে মেরিগো কারখানার শ্রমিকদের মধ্যেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এসে সড়কে অবস্থান নেয়।'
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জে জে মিলসের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, 'নতুন বেতন কাঠামোয় শ্রমিকদের বেতন হওয়ার পর অনেকেই কম বেতন বেড়েছে মনে করে বিক্ষোভ করে। এখানে সিনিয়র ও জুনিয়র শ্রমিক রয়েছে, তাদের বেতনের পরিমাণও কমবেশি আছে। সিনিয়রদের বেতন কম বেড়েছে এবং জুনিয়রদের বেশি বেড়েছে। এ নিয়ে অসন্তোষ থেকে বিক্ষোভ হতে পারে।'
এ ব্যাপারে সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, "দুটি কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে বেতন 'ফিক্সেশেন' নিয়ে কনফিউশন আছে। 'ভুল তথ্যের' ওপর ভিত্তি করে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন।"
সমস্যা সমাধানের জন্য বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে প্যাসিপিক জিন্স গ্রম্নপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এনএসটি ফ্যাশনের নুরুল আলম নামে এক শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, '৫-৬ বছর ধরে এখানে যারা কাজ করছেন তারা ৯ হাজার ১শ' টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। কর্মরতদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট হতে হতে এখন বেতন ১৩ হাজার ৫শ' বা ১৪ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সরকার সম্প্রতি নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করেছে। এরপর পুরনোদের বেতন বাড়ানো হয়েছে মাত্র ১ হাজার টাকা। নতুন যেসব কর্মচারী কাজে যোগ দিচ্ছেন তাদের বেতন আমাদের বেতনের প্রায় সমান। পুরনো শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবিতে এ আন্দোলন হচ্ছে।'
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার সেলিম নেওয়াজ বলেন, 'বেতন নিয়ে শ্রমিকদের কিছু দাবি ছিল। শ্রমিক-মালিক দুই পক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। সব শ্রমিক কাজে ফিরেছেন।'
চট্টগ্রাম ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, 'নতুন বেতন কাঠামোতে পোশাক কারখানায় নূ্যনতম বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা। বেপজায় তা ১২ হাজার ৮০০ টাকা। সে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকরা কিছু দাবি জানিয়েছিল। পরে মালিক পক্ষ বসে তা সমাধান করে।'
প্রসঙ্গত, পোশাক শ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি ঠিক করতে গত বছরের এপ্রিলে নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার। ২২ অক্টোবর এই বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা নূ্যনতম মজুরি প্রস্তাব করেন। আর মালিকপক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়।
এই বৈঠকের পর নূ্যনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে- এমন কথা ছড়িয়ে পড়লে ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে আন্দোলন শুরু করেন পোশাক শ্রমিকরা। পরে তা আশুলিয়া, সাভার ও ঢাকার মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ে।
অনেক জায়গায় শ্রমিকরা ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সংঘাতে প্রাণহানিও ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পর্যায়ক্রমে পাঁচ শতাধিক কারখানা বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। পরবর্তীতে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে সর্বনিম্ন গ্রেডে (পঞ্চম) ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি ঘোষণা করে সরকার।