রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃতু্যর ঘটনায় তার পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে শিশু আয়ানের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের ডাক্তারি সনদ বাতিল ও ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম জনস্বার্থে রিটটি দায়ের করেন। এতে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুলস্নার হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটি দাখিল করা হয়েছে।
১২ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন চায় মানবাধিকার কমিশন: এদিকে, ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃতু্য অথবা কোনো ক্ষতি 'মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন' বলে মনে করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। শিশু আয়ান আহমেদের মৃতু্যর ঘটনার পর স্বপ্রণোদিত হয়ে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছে কমিশন।
ঘটনাটি তদন্ত করে আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
সোমবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, 'বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত শিশু আয়ানের মৃতু্যর খবর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। শিশুটির বাবা অভিযোগ করেছে, খৎনা করার সময় আংশিক অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া করার কথা। কিন্তু আয়ানকে পুরো অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়েছে। এজন্য হাসপাতাল কোনো অনুমতিও নেয়নি।'
কমিশন বলছে, 'সুন্নতে খৎনার ঘটনায় পরিবারের বিনা অনুমতিতে ভুক্তভোগী শিশুর পুরো শরীরে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ এবং এর ফলে উক্ত শিশুর মৃতু্য ঘটার বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক। কমিশন মনে করে চিকিৎসকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কারও মৃতু্য বা অন্য কোনো ধরনের ক্ষতি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।'
চিঠিতে আরও বলা হয়, 'এ অভিযোগের নিবিড় তদন্তপূর্বক সত্যতা যাচাই করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি এবং একইসঙ্গে ক্ষতিপূরণ আদায় করা আবশ্যক। এ অবস্থায় অভিযোগের বিষয়টি অনতিবিলম্বে কমিশনে প্রেরণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে বলা হলো।'
৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি: এদিকে আয়ান আহমেদের মৃতু্যর ঘটনায় চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ তদন্তে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খৎনা করানোর জন্য আনা হয় আয়ানকে। সেদিন বেলা ৯টায় খৎনা করার জন্য তাকে পুরোপুরি অজ্ঞান করা হয়। খৎনা করার পর ১১টায়ও জ্ঞান না ফিরলে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে এনে লাইফসাপোর্টে রাখা হয় আয়ানকে। রোববার রাতে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নিয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে দেওয়া আয়ানের মৃতু্য সনদে 'কার্ডিও-রেসপিরেটরি ফেইলিওর, মাল্টিঅর্গান ফেইলিওর এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট' কে মৃতু্যর কারণ হিসেবে দেখান হয়েছে।