দেশের তিন জেলায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পৃথক ঘটনায় পিতা-পুত্র ও অন্তঃসত্ত্বাসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে মেহেরপুরের মুজিবনগরে ৪৫, লক্ষ্ণীপুরের রামগতিতে পৃথক ঘটনায় ৭ এবং শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পিতা-পুত্রকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এসব সংঘর্ষ হয়।
সোমবার রাত ৯টায় মেহেরপুরের মুজিবনগরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিজয়ী প্রার্থী সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে ৪৫ জন আহত হন। উপজেলার আনন্দবাস গ্রামে দফায় দফায় ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মুজিবনগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়ূব হোসেন ও নৌকার কর্মী ইমরান হোসেন বলেন, 'নৌকার প্রার্থী ফরহাদ হোসেন তৃতীয়বারের মতো জয়লাভ করায় ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য ফেরদৌস হোসেন ওরফে মোলস্নার নেতৃত্বে সোমবার রাত ৮টায় আনন্দবাস বাজার থেকে একটি আনন্দ র?্যালি বের করা হয়। আনন্দ র?্যালিটি আনন্দবাস গ্রামের উত্তরপাড়ার দিকে যাওয়ার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন বিশ্বাসের বাড়ির সামনে পৌঁছে। এ সময় কয়েকজন নৌকার কর্মী-সমর্থক বাড়ির সামনে গিয়ে নাচানাচি করলে জিয়া উদ্দিন বিশ্বাস বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বিষয়টি সংঘর্ষে গড়ায়। এতে আমাদের পক্ষের প্রায় ৪০ জন আহত হন।'
মুজিবনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জ্বল দত্ত বলেন, 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ শটগানের ৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে না ঘটে সে লক্ষ্যে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। মামলা হলে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
রামগতি (লক্ষ্ণীপুর) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার ৬ নম্বর চর আলগী ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চর আলগী গ্রামের পাটোয়ারী বাড়িতে পৃথক দুটি সংঘর্ষে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীসহ উভয় পক্ষের পাঁচ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত মামুন পাটোয়ারী ও তার অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে রাজিয়াকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
চর আলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মনির জানান, ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আল আমিন দ্বাদশ সংসদের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল্যাহর ঈগল প্রতীকের সমর্থক ছিলেন অন্যদিকে তার জেঠাত ভাই মামুন পাটোয়ারী ও তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। মামুনের ছেলে হাসান ও মেয়ে রাজিয়া নৌকার এজেন্ট হন। এতে ইউপি সদস্য আল আমিন তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। এ নিয়ে ভোটকেন্দ্রে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়।
অন্য ঘটনায় উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক জুবায়ের হোসেন জানান ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত এবারের ভোটে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রাথীর পক্ষে ভোট করেন। তিনি দীর্ঘদিন রামদয়াল বাজার সিএনজি স্টেশনের লাইনম্যান ও যানজটমুক্ত রাখার কাজ করে আসছিলেন। ভোট শেষ হতে না হতেই সোমবার সকালে সজীব নামে এক লোক তার অনুসারীদের নিয়ে বিজয়ী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক দাবি করে শাহাদাতের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে মারধর করেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। এ সময় খবর পেয়ে রামগতি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রামগতি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন বলেন, 'পারিবারিক বিরোধের জের ধরে কথা কাটাকাটি ও মারামারি হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
ভেদরগঞ্জ, নড়িয়া (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি জানান, শরীয়তপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সোমবার রাত ৮টায় উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের জয়বাংলা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনকে ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যেই উত্তেজনা চলছিল। এরই জের ধরে জয়বাংলা বাজারের কাছে নৌকা সমর্থক ও ঈগল সমর্থকদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা নৌকায় সমর্থক বাচ্চু হাওলাদার ও স্বপন হাওলাদারকে কুপিয়ে জখম করে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তি করে।
স্বপন হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, 'সোমবার রাতে জয়বাংলা বাজার থেকে আমি এবং আমার বাবা বাচ্চু হাওলাদার বাড়ি ফিরছিলাম। পথিমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক আলী আজগর, গিয়াস উদ্দিন, রহিম, বিলস্নাল, বাবুল, দিদার, মজিবুর, আনসার সিকদার, শাওলিন বাবু খালাসীসহ আরও ২০-২৫ জন আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং রামদা দিয়ে কুপিয়ে আমাদের মারাত্মকভাবে জখম করে।'
এ ব্যাপারে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'