চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের পর নতুন বছরের শুরুতেই মহাকাশ গবেষণায় আরেক সাফল্য পেল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। সূর্যের কাছের কক্ষপথে পৌঁছে গেল ভারতের প্রথম সৌর পর্যবেক্ষণকারী মহাকাশযান আদিত্য-এল১।
বিবিসি জানায়, শনিবার বিকালে নির্দিষ্ট কক্ষপথে সফলভাবে আদিত্য-এল১-কে বসিয়েছে ইসরো। আগামী পাঁচ বছর সেখানেই থাকবে সৌরযানটি। সংগ্রহ করবে নানা তথ্য। সূর্যকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করবে আদিত্য-এল১।
গত বছর ২ সেপ্টেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে সূর্যের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল আদিত্য-এল১। ১৫ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শেষ পর্যন্ত সফলভাবে সূর্যের দুয়ারে নির্দিষ্ট গন্তব্য ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্টে পৌঁছল সৌরযানটি।
সূর্যের কাছে ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্ট বা এল১ পয়েন্টের দূরত্ব পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার। গত চার মাস ধরে এ পথ অতিক্রম করেছে আদিত্য-এল১। এর আগে ভারতের কোনো মহাকাশযান সূর্যের এত কাছে যায়নি।
ল্যাগারেঞ্জ পয়েন্ট থেকে সূর্যকে স্পষ্ট দেখা যাবে। কোনো বাধাও আসবে না। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরোর এই সাফল্যের জন্য বিজ্ঞানীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তিনি বলেন, 'ভারত আরও এক মাইলফলক তৈরি করেছে। ভারতের প্রথম সোলার অবজারভেটরি আদিত্য-এল১ তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছেছে। এটি সবচেয়ে জটিল মহাকাশ মিশনগুলোর অন্যতম। দেশবাসীর সঙ্গে এই খুশির মুহূর্ত ভাগ করে নিচ্ছি। আমরা মানবতার কল্যাণে বিজ্ঞানের এই অগ্রগতিকে ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব।'
এল১ পয়েন্টে সূর্য ও পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে সৌরযান ঘুরতে থাকবে। এটিকে নিয়ন্ত্রণে তখন আর বেশি শক্তি খরচের দরকার হবে না। বিনাবাধায় সূর্যকে ওই এলাকা থেকে স্পষ্ট দেখতে পাবে আদিত্য-এল১। কয়েক সপ্তাহ পর পর সামনে কোনো পাথর বা বাধা এলে কেবল তার মোড় ঘুরিয়ে দেবেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
ওই এলাকায় মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার পাঠানো আরও চারটি মহাকাশযান রয়েছে। সেগুলোর সঙ্গেও যাতে সংঘর্ষ না হয়, তা বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করবেন।
সূর্যের কক্ষপথে অবস্থান নিয়ে সূর্যের বাইরের স্তর করোনা ও সৌর বায়ুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে আদিত্য-এল১।
এ ছাড়া এই সৌরযান করোনাল মাস ইজেকশন সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করবে। পাশাপাশি সূর্যের ভেতরে ও বাইরের তাপমাত্রার এত পার্থক্য কেন? তাও মূল্যায়ন করবে। সূর্য ও তার বয়স কত তা নিয়ে অনুসন্ধান চালাবে।
আদিত্য এল১ এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালবে আগামী ৫ বছরের জন্য। সৌরজগৎ নিয়ে একাধিক তথ্য উঠে আসতে পারে। আদিত্য এল১ এ আছে সাতটি পেলোড। এই পেলোডগুলো সূর্যের বিভিন্ন রহস্য উন্মোচন করবে। এগুলো বিশেষভাবে ফটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার ও সূর্যের বাইরের স্তরগুলো পরীক্ষা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।