দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এই নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। এরই ধারাবাহিকতায় ভোটের দিন রোববার সকাল থেকেই রয়টার্স, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বসহকারে সংবাদ প্রকাশ করে। এছাড়া আল-জাজিরা ও বিবিসি বাংলা বিশেষ লাইভ প্রচার করে।
ভোটগ্রহণের দিনে দ্য গার্ডিয়ানের শিরোনাম ছিল, 'বাংলাদেশের নির্বাচন শেখ হাসিনাকে পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় আনার নিশ্চয়তা।' সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইতোমধ্যে গণগ্রেপ্তারে বিপর্যস্ত বিরোধী দলগুলো 'ভুয়া' নির্বাচন বয়কট করেছে, যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বয়কটের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় আনার জন্য রোববার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এক সময় দারিদ্র্যপীড়িত একটি দেশে শেখ হাসিনা ব্যতিক্রমী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধী দলের নির্মম দমন-পীড়নের অভিযোগ উঠেছে। শেখ হাসিনার দল যেসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেখানে কোনো কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। তবে আইনসভাকে একদলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত না করার আপাত প্রয়াসে কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেওয়া এড়িয়ে গেছে তারা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর শিরোনাম ছিল, 'বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভোট বর্জন করেছে বিরোধীরা।'
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটকে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আনতে প্রধান বিরোধী দল কর্তৃক বয়কট করা সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র, স্কুল ও একটি বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগের পর শুক্রবার গভীর রাতে যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন লেগে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। তবে ভোটের দিন সহিংসতার কোনো খবর পাওয়া যায়নি, কারণ দেশব্যাপী প্রায় আট লাখ নিরাপত্তা বাহিনী ভোটকেন্দ্র পাহারা দিচ্ছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট পর শেখ হাসিনা তার মেয়ে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে রাজধানী ঢাকার সিটি কলেজে ভোট দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এবং কয়েকটি ছোট মিত্রদের ভোট বয়কটের পর ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশটি ভার্চুয়াল একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো- যারা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রধান গ্রাহক, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা লাইভ রিপোর্ট প্রকাশ করছে। যেখানে শিরোনাম দেওয়া আছে, 'বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যেই ভোটগ্রহণ চলছে।'
আল-জাজিরার লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা পঞ্চমবারের মতো নির্বাচনে বিজয়ী হতে যাচ্ছেন, যে নির্বাচন প্রধান বিরোধী দল বয়কট করেছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ব্যালট খোলার পরপরই ভোট দেন শেখ হাসিনা। বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হবে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই ভোট গণনা শুরু হবে, সোমবারের মধ্যে প্রাথমিক ফলাফল আশা করা হবে। প্রায় আট লাখ পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন। সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও মোতায়েন করা হয়েছে। মিলিয়ন যোগ্য ভোটারের প্রায় অর্ধেক নারী এবং প্রথমবারের ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৫ মিলিয়ন।'
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সংবাদের শিরোনাম দিয়েছে, 'বাংলাদেশে নির্বাচন বর্জন করেছে বিরোধী দল।'
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'প্রধান বিরোধী দল কর্তৃক বয়কট করা একটি সাধারণ নির্বাচনের জন্য রোববার বাংলাদেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, যেখানে দেশটির নেত্রী শেখ হাসিনা- বিশ্বের দীর্ঘতম মেয়াদের নারী প্রধানমন্ত্রী- টানা চতুর্থ মেয়াদে বিজয়ী হতে চলেছেন। প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায় ১২০ মিলিয়ন মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধিত। রোববারের সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।'
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, 'দেশটি অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। গত বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রয়োজন হয়েছিল। ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানী ঢাকায় ভোট দিয়েছেন। এই জয় হবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের পঞ্চম বিজয়।'
টাইমস অব ইন্ডিয়া বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে লাইভ আপডেট প্রচার করেছে। সেখানে শিরোনাম ছিল, 'ভোটের দিন ভারতের প্রশংসা করলেন শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধে নয়াদিলিস্নর ভূমিকা তুলে ধরেন।'
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলকে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' আখ্যায়িত করে বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কটের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পঞ্চম মেয়াদে নির্বাচিত করার জন্য রোববার ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা ভারতের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, ভারতের মতো বিশ্বস্ত বন্ধু পেয়ে বাংলাদেশ ভাগ্যবান। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সমর্থনের কথাও তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা একসময় দারিদ্র্যপীড়িত একটি দেশে ব্যতিক্রমী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নির্মম বিরোধী দমনপীড়নের অভিযোগ রয়েছে।"