ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন

শেষ মুহূর্তে প্রার্থীদের ব্যস্ত সময় পার

প্রকাশ | ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মর্যাদার আসন বলে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও কর্মিসভা করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নির্বাচনী এলাকায় শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রার্থীদের পোস্টার ও ব্যানার। চলছে প্রার্থীদের পক্ষে ব্যাপক মাইকিং। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও বিজয়নগর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে রয়েছে একটি পৌরসভা এবং ২১টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১ ইউনিয়ন ও বিজয়নগর উপজেলায় রয়েছে ১০টি ইউনিয়ন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব ছিলেন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনএম, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এই আসনে জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী নেই। এই আসনে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। অন্যরা হলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের 'বিএনএম' জামাল রানা (নোঙ্গর প্রতীক), আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমান (কাঁচি প্রতীক), ইসলামী ফ্রন্টের সৈয়দ নূরে আজম (মোমবাতি প্রতীক), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) আবদুর রহমান খান ওমর (মশাল প্রতীক), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী (বটগাছ প্রতীক), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সৈয়দ মাকসুদুল হক আক্কাছ (আম প্রতীক) ও বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির সোহেল মোলস্না (একতারা প্রতীক)। পরপর তিনবার সংসদ সদস্য থাকার সুবাধে আওয়ামী লীগ নেতা র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেছেন। বিশেষ করে নব-গঠিত বিজয়নগর উপজেলাকে তিনি ঢেলে সাজিয়েছেন। তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের টি.এ. রোডে মৌড়াইল রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করে তিনি শহরের গত কয়েক যুগের নিত্যদিনের যানজট দূর করেছেন। তিনি শহরে ওভারপাস নির্মাণ করেছেন। বিজয়নগরের জনগণ যাতে সহজে জেলা সদরে আসা-যাওয়া করতে পারে এজন্য তিনি হাওড়ের ওপর দিয়ে তিনি প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করেছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মেড্ডা থেকে ভাদুঘর পর্যন্ত তিতাস নদীর পশ্চিমপাড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সেক্টরে অভাবনীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার পক্ষে কাজ করছে। সব কিছু মিলিয়ে আগামী নির্বাচনে তিনি সেইফ জোনে আছেন। কাগজে-কলমে ৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও নির্বাচনী মাঠে ৩ জন প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। এই আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান তার কাঁচি প্রতীকের পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী মাঠে তিনিও উত্তাপ ছড়াচ্ছেন। অপরদিকে জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা জামাল রানা দল ত্যাগ করে এবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এর প্রার্থী হিসেবে নোঙ্গর প্রতীকে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় অপর প্রার্থীদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে মোট ভোটার ৬ লাখ ২১ হাজার ৫৮৪ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪ লাখ ১৩ হাজার ৯৩২ জন এবং বিজয়নগর উপজেলায় ২ লাখ ৭ হাজার ৬৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৩ জন ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩৮১ জন। এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমান (কাঁচি প্রতীক) বলেন, নির্বাচনে ভোটারদের ব্যাপক সারা পাচ্ছি। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, 'আমি ১৩ গত বছর নির্বাচনী এলাকার জনগণের জন্য কাজ করেছি। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেছি। ভোটাররা আমাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন ইনশালস্নাহ।' রাজশাহী-৬ আসন প্রতিমন্ত্রীর নৌকার বিজয়ে বাঁধা স্বতন্ত্রের কাঁচি চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি রাজশাহীর ৬টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে ব্যাপক পরিচিত রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনটি। এ আসনে সরকারের হ্যাভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে পরিচিত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের দুই বারের প্রতিমন্ত্রী ও তিনবারের সাংসদ শাহরিয়ার আলম। আসনটিতে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাম লেখালেও প্রতিমন্ত্রীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নিজ দলের সাবেক এমপি চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাহেনুল হক রায়হান। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঁচি প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন রায়হান। একই দলের দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় দু'টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এতে করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গেই স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের কাঁচি প্রতীকের হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। অন্য দলের প্রার্থীরা রয়েছেন অনেকটাই নীরব। তারা হলেন জাতীয় পার্টির শামসুদ্দিন রিন্টু (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মহসিন আলী (আম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জুলফিকার মান্নান জামী (মশাল) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের আব্দুস সামাদ (নোঙ্গর)। সরেজমিনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন, সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন, সম্পাদক পৌর মেয়র একরামুল হক, বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক বাবুল আক্তারসহ দু'টি উপজেলার যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের বর্তমান কমিটির নেতাকর্মীরা। অপরদিকে, একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু, ভাইস চেয়ারম্যান মোকাদ্দেস আলী, বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, চারঘাট উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বিপস্নব, নারী ভাইস চেয়ারম্যান তাজমিরা খাতুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক জালাল উদ্দিন, ভায়ালক্ষ্ণীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত আলী বুলবুল, সরদহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মতিউর রহমান তপন, ইউসুফপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল আলম রতন, শলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মকলেচুর রহমান মকা প্রমুখ। প্রতীক বরাদ্দের পর গণসংযোগে ব্যস্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহরিয়ার আলম এবং কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক রায়হান। নির্বাচনী মাঠে নৌকার প্রার্থী শাহরিয়ার আলম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের দেখা মিললেও বাকি ৪ জন প্রার্থী নীরব ভূমিকায় রয়েছেন। বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় নৌকা ও কাঁচির পোস্টার শোভা পেলেও অন্য প্রার্থীদের কোনো পোস্টার ও প্রচারণা তেমন চোখে পড়েনি। এ আসনে চারঘাটে ৫৭টি ও বাঘায় ৬১টি মোট কেন্দ্র ১১৮টি রয়েছে। দু'টি উপজেলায় মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৫২৭ ভোট। এরমধ্যে পুরুষ ১ লক্ষ ৭০ হজার ৫২৮ ও নারী ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৯৯৯ ভোট। এরমধ্যে চারঘাটে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৬৬৫; পুরুষ ৮৯ হাজার ৫৫ ও নারী ৮৮ হাজার ৬১০ ভোট। বাঘায় ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৮৬১; পুরুষ ৮১ হাজার ৪৭২ ও নারী ৮১ লক্ষ ৩৮৯ ভোট।