শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

টাঙ্গাইলে দরপত্র গ্রহণে নয়ছয়ের অভিযোগ

উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত কয়েক কোটি টাকা গচ্চার শঙ্কা

প্রকাশ | ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমএসআর (মেডিকেল ও সার্জিক্যাল রিইকুইজিট) দরপত্র গ্রহণে নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উচ্চ দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় প্রতিষ্ঠানের কয়েক কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে কর্তৃপক্ষের এসব অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে নিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর কর্তৃপক্ষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এমএসআর (মেডিকেল ও সার্জিক্যাল রিইকুইজিট) সামগ্রী ক্রয়ের জন্য ওষুধপত্র, লিলেন, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি, গজ-ব্যান্ডেজ-কটন, কেমিক্যাল রি-এজেন্ট এবং আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য ৬টি গ্রম্নপে দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রে টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। দরপত্র খোলার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে দরপত্র মূল্যায়নে সর্বনিম্ন দরদাতাদের পরিবর্তে উচ্চ দরদাতাদের কার্যাদেশ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। ওই অনিয়মের অভিযোগে গত ৭ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ না করায় ডাকযোগে অভিযোগ পাঠানো হয়। কিন্তু পরিচালক অভিযোগের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমিনুর রহমান ও আবু সাঈদ চৌধুরী নামের দুই ঠিকাদার দরপত্র পুনঃমূল্যায়নের জন্য ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। আদালতের বিচারক নাঈমা হায়দার ও কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ শুনানি শেষে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব চেয়ে রুল জারি করেন। সংবাদ সম্মেলনে সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আমিনুর রহমান ও আবু সাঈদ চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে জানান, হাসপাতালের ৬টি প্যাকেজের দরপত্রে তাদের মেসার্স শামসুল হক ফার্মেসি, মেসার্স শামসুল হক এন্টারপাইজ, মেসার্স সাঈদ মেডিকেল হল নামীয় তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। সিডিউলে উলিস্নখিত শর্তাবলি পূরণ করে ওই তিন প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দরপত্রগুলো অনলাইনে (ইজিপি) ওপেনিং শিট প্রকাশ করে। প্রকাশিত ইজিপি শিটে দেখা যায়, নন ইডিসিয়েল মেডিসিন গ্রম্নপে ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এসব দরপত্রের মধ্যে মেসার্স সাঈদ মেডিকেল হল এক কোটি ১৭ লাখ ৯১ হাজার ২৬৪ টাকা দর উলেস্নখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রথম হয়। মেডিকেল যন্ত্রপাতি গ্রম্নপে পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে মেসার্স শামসুল হক ফার্মেসি এক কোটি ৬৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫৯০ টাকা দর উলেস্নখ করায় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রথম হয় এবং দুই কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৭ টাকা দর উলেস্নখ করায় দ্বিতীয় নিম্ন দরদাতা হয় মেসার্স শামসুল হক এন্টারপ্রাইজ। গজ-ব্যান্ডেজ কটন গ্রম্নপে ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে মেসার্স শামসুল হক ফার্মেসি ৭০ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭১ টাকা দর উলেস্নখ করায় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রথম হয় এবং এক কোটি ৩৪ লাখ ৭১ হাজার ৪৭৩ টাকা দর উলেস্নখ করায় দ্বিতীয় নিম্ন দরদাতা হয় মেসার্স শামসুল হক এন্টারপ্রাইজ। হাসপাতালের দরপত্রের লিলেন গ্রম্নপে ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে ৬৬ লাখ ২১ হাজার ৯৫৩ টাকা দর উলেস্নখ করায় মেসার্স শামসুল হক ফার্মেসি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রথম এবং এক কোটি ৩৫ লাখ ৪১ হাজার ৭৫৯ টাকা দর উলেস্নখ করে দ্বিতীয় হয় মেসার্স শামসুল হক এন্টারপ্রাইজ। আসবাবপত্র সরবরাহের গ্রম্নপে অংশ নেওয়া ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৪ লাখ ১২ হাজার ৭৩২ টাকা দর উলেস্নখ করে মেসার্স শামসুল হক ফার্মেসি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রথম হয়। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়মনীতি না মেনে ব্যক্তিগতভাবে সুবিধা নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড না দিয়ে উচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রের বিপরীতে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে। এর মধ্যে মেডিসিন গ্রম্নপে এক কোটি ৪৭ লাখ ৩৫১ টাকা দর উলেস্নখ করা দ্বিতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠান ফরচুন করপোরেশন, ইকুইপমেন্ট গ্রম্নপে দুই কোটি ৩১ লাখ ৩৮ হাজার ৯২৬ টাকা দর উলেস্নখ করা তৃতীয় স্থানে থাকা জোয়াইরা ইন্টারন্যাশনাল, আসবাবপত্র সরবরাহ গ্রম্নপে ৭১ লাখ নয় হাজার ৩১৩ টাকা দর উলেস্নখ করা তৃতীয় স্থান অর্জনকারী মেডিস্কয়ার, গজ ব্যান্ডেজ গ্রম্নপে এক কোটি ৩৫ লাখ এক ১৬৭ টাকা দর উলেস্নখ করে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী মেডিস্কয়াকে স্বীকৃতি (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শামসুল হক ফার্মেসি, মেসার্স শামসুল হক এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স সাঈদ মেডিকেল হল যথাযথ নিয়মে দরপত্রের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হলেও অজ্ঞাত কারণে ওই তিন প্রতিষ্ঠানের দরপত্র বাতিল করে দরপত্র যাচাই-বাছাই কমিটি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আমিনুর রহমান ও আবু সাঈদ চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে জানান, দরপত্র কমিটির চাহিদা অনুযায়ী উৎকোচ না দেওয়ায় তাদের কাজ দেওয়া হয়নি। পরে এ বিষয়ে তারা পুনঃমূল্যায়নের জন্য লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। বাধ্য হয়ে পুনঃমূল্যায়নের জন্য উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন- উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেছেন। রিট পিটিশন দায়ের করায় ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালের পরিচালক তাদের সরকারি কাজে বাধা দেওয়ায় কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না উলেস্নখ করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। তারা আরও জানান, কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করেছেন। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৮ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৬ বিধি ভঙ্গ করে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। কোটি টাকা উৎকোচ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে উচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলে সরকারের কয়েক কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুছ জানান, তিনি ওমরাহ হজ করার জন্য কাগজপত্র ঠিক করতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। যেহেতু ওমরাহ হজ পালনে যাচ্ছেন- তাই এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না।