শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

গাজীপুরে পাঁচটি আসনের ৫৯৫ কেন্দ্রই 'ঝুঁকিপূর্ণ'

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
গাজীপুরে পাঁচটি আসনের ৫৯৫ কেন্দ্রই 'ঝুঁকিপূর্ণ'

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরে ৫টি সংসদীয় আসনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৯৩৫টি। এর মধ্যে ৫৯৫টি ভোট কেন্দ্রকেই 'ঝুঁকিপূর্ণ' বা অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশেষ করে রাজধানী লাগোয়া গাজীপুর-২ আসন ও গাজীপুর-১ আসনে অর্ধেকের বেশি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও সদর একাংশ) ৯০টি, গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনে ৭২টি এবং গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ ও সদর একাংশ) আসনে ৫৪টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এদিকে গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও গাজীপুর সদরের আংশিক) আসেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী রোমানা আলী। তার সঙ্গে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল হোসেন সবুজ। তিনি বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য। এই আসনে ভোট কেন্দ্র ১৮০টি এর মধ্যে ৯০টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর অবশ্য কারণও রয়েছে। নির্বাচনী আসনের মাওনা ইউনিয়নের সলিংমোড় এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ ইকবাল হোসেনের (সবুজ) নির্বাচনী

কার্যালয়ের পাশে তার কর্মীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গুলির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাত ৯টায় ওই এলাকার শফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন মিম ইলেকট্রনিকস নামে একটি শোরুমে এ ঘটনা ঘটে। গুলিতে শোরুমের কাঁচ ছিদ্র হয়ে গেছে। কাঁচের টুকরোর আঘাতে ভেতরে থাকা সাজেদুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম নামে দুজন আহত হয়।

ওই আসনের ভাওয়ালগড়, পিরুজালী ও মির্জাপুর ইউনিয়নসহ ১৮০টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৯০টি কেন্দ্রই অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (আপরাধ) ছানোয়ার হোসেন বলেন, এ আসনের সবকটি ভোট কেন্দ্রকে প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ নজরে রেখেছে।

গাজীপুর-২ (সিটি করপোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ড) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেল। তার সঙ্গে লড়ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি কাজী আলিম উদ্দিন। এই আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ৪০০টি। এই আসনের টঙ্গী, আউচপাড়া, এরশাদনগরসহ বেশি কয়েকটি এলাকা নানা কারণে ভোটের সময় উত্তপ্ত পরিস্থিতি থাকে। যার কারণে আসনের এই আসেরন ২৯৭টি কেন্দ্রকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১০৩টি কেন্দ্রকে কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

টঙ্গী পূর্ব থানার পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, টঙ্গী এলাকায় যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগগ্রহণ নেওয়া যায় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছেন।

গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর বাসন, কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তার সঙ্গে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল। আসনে মোট ১২৮টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে ৮২টি। ভোটার আছে ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৬৪ জন। এই আসনের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর, চন্দ্রা পলস্নীবিদু্যৎ ও মৌচাক এলাকাসহ কয়েকটি কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।

কালিয়াকৈর থানার ওসি এএফএম নাসিম জানান, পুলিশের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে, আনসার, বিডিআরসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে দায়িত্বে।

গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের নির্বাচন করছেন সিমিনি হোসেন রিমি তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আলম আহম্মেদ। এই আসনে মোট ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ১২২টি। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে ৭২টি, কম ঝুঁকিপূর্ণ ৫০টি কেন্দ্র রয়েছে।

গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ, সিটির তিনটি ওয়ার্ড ও বাড়িয়া ইউনিয়ন) আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকি। এখানে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আখতারউজ্জামান। আসনে মোট ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ১০৫টি। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৫৪টি ও কম ঝুঁকিপূর্ণ ৫১টি কেন্দ্র রয়েছে। এসব ভোট কেন্দ্রগুলোতের্ যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনের পাশাপাশি কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হবে।

শঙ্কায় কারখানা শ্রমিক ও নারী ভোটার

গাজীপুর শিল্প অধু্যষিত এলাকা হওয়ায় ভোটারের বড় একটি অংশ শ্রমিক ভোটার। প্রার্থীরাও মনে করছেন শ্রমিক যেদিকে পড়বে সেই প্রার্থীই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শ্রমিকদের ভোটারদের মধ্যেও তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। বরং তারা নির্বাচনের দিনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভোটার ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ও শহরে বসবাসকারী বিপুলসংখ্যক শ্রমিক পরবর্তী সংসদ সদস্য কে হবেন তা নির্ধারণের চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারেন।

নির্বাচনী প্রচারণার শেষদিনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বাসন, চৌরাস্তা, কাশিমপুর, কোনাবাড়ী ও জয়দেবপুর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালান গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সংসদ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় সভা করেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্রপ্রার্থী রেজাউল করিম রাসেল।

শ্রমিক নেতারা বলছেন, সহিংসতার কিছু আশঙ্কা হয়তো আছে। কিন্তু নির্বাচনে ভোটারদের অবশ্যই সব প্রতিকূলতা এবং সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে।

গাজীপুরে ভোটারদের বড় একটি অংশ নারী ভোটার। এই নির্বাচনে বিএনপি না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা দেখা গেছে। ভোটের পরিবেশ কেমন হবে তাই নিয়ে অনেক নারীরা শঙ্কায় আছে। গাজীপুর শহরের ছয়দানা এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, অনেকেই বলছে ভোট কেন্দ্রে ঝামেলা হতে পারে। এজন্য চিন্তা করছি কেন্দ্রে ভোট দিতে যাব কিনা।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুব আলম সাংবাদিকদের বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রগুলোতের্ যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া সোনাবাহিনী ও বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার এস এম কাজী সফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনের কেন্দ্রগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রসমূহে মোবাইল টিম কাজ করবে। থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরে ৫টি আসনের ৯৩৫টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। সবগুলো কেন্দ্রকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে যা করা প্রয়োজন, আমরা সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে