ঝিনাইদহের ৪ সংসদীয় আসন

স্বতন্ত্রের চাপে কোণঠাসা নৌকা

ভোট নিয়ে জেলা ও উপজেলার আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। জেলা-উপজেলার পদধারী প্রথম সারির নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ভোটের প্রচারণায় অংশও নিচ্ছেন

প্রকাশ | ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে, ঝিনাইদহের চারটি সংসদীয় আসনের হাটবাজারে, গ্রামে-গ্রামে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চায়ের দোকান, হাটবাজার আর বাড়ি বাড়ি প্রচারণা চালিয়েছেন। ১৮ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর থেকে প্রতীক বরাদ্দের পর কোমর বেঁধে মাঠে নামেন প্রার্থীরা। তবে, শেষ পর্যায়ে এসে জেলার চার সংসদীয় আসনে ক্ষমাতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হয়েছে। ফলে স্বতন্ত্রদের চাপে চরম বেকায়দায় পড়েছেন সরকার দলীয় নৌকার প্রার্থীরা। ভোটাররা বলছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা ও দলের মনোনয়নবঞ্চিত। তাদের মধ্যে একজন সংসদ সদস্যও রয়েছে। ইতোমধ্যে ভোট নিয়ে জেলা ও উপজেলার আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। জেলা-উপজেলার পদধারী প্রথম সারির নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ভোটের প্রচারণায় অংশও নিচ্ছেন। জেলার চারটি সংসদীয় আসনের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে টানা তিন মেয়াদে বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়নে দৃশ্যমান ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় শহর, ইউনিয়ন ও গ্রামের কিছু নেতার বিরুদ্ধে অসাংগঠনিক কর্মকান্ড ও কর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ করা হচ্ছে। তাদের কর্মীবিরূপ আচরণের ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে নৌকার প্রার্থীরা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনে ৬ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকার প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল হাই। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী দেশের প্রথম সারির ব্যবসায়ী, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইমলাম বিশ্বাস দুলাল। তিনি দল থেকে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়েছিলেন। এই আসনটি একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৬ হাজার ৩৩৬ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৯ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭৭ জন। ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এ সময় রাজনৈতিক ও সামাজিক কোন্দলের জেরে একের পর এক সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা সব অর্জন ডুবিয়ে দিয়েছে। গত দুই বছরের রেকর্ডে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের আধিপত্ত বিস্তারের জেরে খুন হয়েছেন ১০ জন দলীয় নেতাকর্মী। এসব ঘটনার আগে-পরে সংঘর্ষ, লুটপাট আর বসতবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা বিষিয়ে তুলেছে উপজেলাবাসীকে। সর্বশেষ গত ১৬ অক্টোবর রাতে উপজেলা আবাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন-বিষয়ক সম্পাদক ও ইউপি সদস্য রিপন হোসেন খুনের শিকার হন। হত্যার পেছনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলালের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আহসানুল কবির বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় ৩২ জনের নাম উলেস্নখসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামিরা সবাই নজরুল ইসলাম দুলালের সমর্থক বলে জানা গেছে। ফলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুটি ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছে। এর একটি ভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান এমপি আব্দুল হাই এবং আরেক ভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইমলাম দুলাল। গত তিন মেয়াদে নির্যাতিত, প্রতারিত ও বঞ্চিত নেতাকর্মীরা নজরুল ইসলাম দুলালের পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে তফসিল ঘোষণার আগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু নজরুল ইসলাম দুলালের পক্ষে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে যোগ দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। ফলে নজরুল ইসলাম দুলাল একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি হয়েও ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। ঝিনাইদহ-২ (ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুন্ডু) আসনে দেশের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এর মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীকের তাহজিব আলম সিদ্দিকী। তিনি ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। তার বাবা নূরে আলম সিদ্দিকী স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, তুুখোড় রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও তৎকালীন যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেশের প্রথম সারির ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস ও রেডিয়েন্ট বিজনেস কনসোর্টিয়াম লিমিটেডসহ দেশর স্বনামধন্য ১০ শিল্প প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তার প্রতীক ঈগল। আসন্ন নির্বাচনে এই আসন থেকে মোট ১১ জন প্রার্থী ভোট করছেন। এর মধ্যে ভোটারদের আলোচনায় দুই হেভিওয়েট প্রার্থী দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী ও বর্তমান সংসদ সদস্য তাহজিব আলম সিদ্দিকী। তবে ভোট সামনে রেখে জনগণের কাঠগড়ায় আলোচিত হচ্ছে দুই প্রার্থীর মধ্যে জনসেবায় এগিয়ে কে। তবে, জনগণের সুখে-দুঃখে যে পাশে থাকবে এবং জনসেবায় যিনি এগিয়ে থাকবেন, তাকেই ভোট দিবেন বলে মন্তব্য সাধারণ ভোটারদের। স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নৌকার প্রার্থী তাহজিব আলম সিদ্দিকী গত দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও জনগণের নেতা হতে পারেননি। তিনি বেশির ভাগই সময়ই থেকেছেন রাজধানীতে। ফলে প্রয়োজনে তাকে কাছে পাননি এলাকার সাধারণ মানুষ। উন্নয়নের প্রশ্নে নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ দুই-একটি সড়ক বাদে রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এলাকার উলেস্নখযোগ্য উন্নয়ন করেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন প্রায় শতভাগ। অন্যদিকে অপর হেভিওয়েট প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী নিজ প্রচেষ্টায় ব্যবসা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার শুরু থেকেই এলাকার মানুষকে কাছে রেখেছেন। তিনি এলাকার মানুষের বিপদ-আপদে সহযোগিতা করে চলেছেন। বছরের দুই ঈদে ৩-৫ হাজার গরু-ছাগল জবাই করে চাল-ডালসহ অন্যান্য সামগ্রী এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের তালিকা করে তাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। জনসেবার এই কাজ তিনি দীর্ঘ বছর ধরে করে আসছেন বলে জানিয়েছেন সাধারণ ভোটররা। তার প্রতিষ্ঠত ১০ শিল্প প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনী এলাকার সহস্রাধিক নারী-পুরুষ চাকরি করছেন বলে জানান তারা। স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, আমি প্রতিদিনই ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। আমার কর্মী-সমর্থকরা প্রচারণা করছেন। তবে, প্রতিদিনই আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা হচ্ছে। কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আহত ৭ সমর্থককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আমি পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান করব, যারা সন্ত্রাস করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। উৎসবমুখর পরিবেশে যেন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়, সে ব্যবস্থা করবেন। ঝিনাইদহ-২ আসনটি সদর উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং হরিণাকুন্ডু উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার নিয়ে গঠিত। এই আসনে ভোট রয়েছে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩০০। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৩ ও নারী ২ লাখ ৩৮ হাজার ৭৬৩ জন। এই আসনের নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি অশ্রম্নসিক্ত নয়নে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করতে দেখা গেছে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তিনি বলেন, 'আমি মানুষকে প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছি। আমি ঝিনাইদহের মানুষকে হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেছি ও মর্যাদা দিয়েছি। আপনারা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েন না। আমি আপনাদের আলস্নাহর ওয়াস্তে বললাম, আপনারা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েন না।' ঝিনাইদহ-৩ (কোচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলা) আসনে ৬ জন প্রার্থী। নৌকার প্রার্থী সাবেক এমপি মইনুদ্দিন মিয়াজির ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক সচিব সালাউদ্দীন মিয়াজি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চল। তিনি দুই মেয়াদে পৌর মেয়র এবং দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ বছর তিনি নৌকার মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। ঝিনাইদহ-৩ আসনটি মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর দুই উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১৭ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে কোটচাঁদপুরে এক পৌরসভা ও পাঁচ ইউনিয়ন এবং মহেশপুরের একটি পৌরসভা ও ১২ ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। মোট ভোটার ৪ লাখ ৩ হাজার ২২৪ জন। পুরুষ ২ লাখ ৩ হাজার ৯৪৪ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ২৭৭ জন। এই আসনে নৌকার প্রার্থী সালাউদ্দীন মিয়াজি রাজনৈতি ব্যক্তি হিসেবে একেবারেই নতুন। তিনি ২০১৭ সালে সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নিয়ে দলের সদস্য হন। এরপর দলের মনোনয়ন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। মনোনয়ন নিয়ে এলাকায় ফিরে আসার পর দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তার পাশে এসে দাঁড়ায়। অন্যদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সালাউদ্দীন মিয়াজিকে নৌকার প্রার্থী ঘোষণার পর স্থানীয় রাজনীতিতে চরম ফাটল দেখা দেয়। নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। নৌকার প্রার্থী সালাউদ্দীন মিয়াজি বলেন, ২০১৭ সাল পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে থেকে দেশ-বিদেশের মানুষের সেবা করেছি। শেষ তিন বছর প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার বাবা মইনুদ্দিন মিয়াজি এক মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার মানুষের সেবা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে জীবনের বাকি সময়টা ব্যয় করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। নৌকা বঙ্গবন্ধুর প্রতীক, নৌকা আওয়ামী লীগের প্রতীক, নৌকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতীক। নৌকা উন্নয়নের প্রতীক। নৌকা প্রতীক আমি নির্বাচনী এলাকা মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর আওয়ামী লীগের হাতে তুলে দিয়েছি। তারা আমাকে নির্বাচিত করে সেবা করার সুযোগ দেবেন বলে বিশ্বাস করি। ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের আংশিক) আসন থেকে আ'লীগের নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তার শক্ত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আব্দুল মান্নানের ভাই আব্দুর রশিদ খোকন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ খোকনের প্রতীক ট্রাক। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন। তিনি রাজনৈতিক মাঠে নতুন মুখ হলেও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান পরিবারের সদস্য হওয়ায় দলের এশটি অংশ তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ভোটাররা বলছেন, এই আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিী হবে নৌকার আনোয়ারুল আজিম আনার ও ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রশিদ খোকনের মধ্যে। এই আসনে দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের মধ্যে দুটি লবিং-গ্রম্নপিং বিদ্যমান রয়েছে। এখানে একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নৌকা প্রতীকের আনোয়ারুল আজিম আনার। তার পক্ষে কাজ করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু, বর্তমান পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিবলি নোমানী। অপর গ্রম্নপ স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ খোকনের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়ুব হোসেন, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ইসরাইল হোসেন, সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু ও সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি। তবে, ভোটাররা বিগত সময়ের জনসেবা আর দোষ-ত্রম্নটি সামনে নিয়ে আসছে নির্বাচন সামনে রেখে। এদিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আনোয়ারুল আজিম আনার। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তার বেশ সুনামও রয়েছে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তার নির্বাচনী এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা শোনেন ও সমাধান করেন। তিনি চলাচলের সময় কোনো পুলিশ প্রটোকল ব্যবহার না করে একা একা চলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। সব থেকে আলোচিত বিষয়, তার নির্বাচনী এলাকায় যে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার বাড়িতে যান, দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং শোকার্ত পরিবারকে শান্ত্ব্‌না দেন। এমনও হয়েছে তিনি এক দিনে ১০ জন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করে শান্ত্বনা দিয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৪ সহস্রাধিক মৃত ব্যক্তির দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। যা দেশের একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিরল। ঝিনাইদহ ৪ আসনটি কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৫ হাজার ৩২৯জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৬৫ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬০ এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ৪ জন। নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুল আজিম আনার বলেন, বিগত ১০ বছরে আনোয়ারুল আজিম আনার কালীগঞ্জের রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণসহ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। আমি সব সময় মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করার চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বাস করি, এবারও ভোটাররা নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ দিবে।