করোনা ভাইরাসের নতুন সাবভ্যারিয়েন্ট 'জেএন.১' নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের মধ্যে মাস্ক পরিধান, জনস্বাস্থ্যমূলক ব্যবস্থাসহ চারটি পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে সংক্রমণ বেড়ে গেলে বিমানবন্দরে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের প্রস্তুতি নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। করোনার নতুন এই ধরন এখনো বাংলাদেশে শনাক্ত না হলেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের ৪১টি দেশে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতামূলক এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুলস্না স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর সর্বশেষ নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক পরামর্শ নিয়ে জাতীয় কমিটির ৬৫তম সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নতুন ধরন রোধে চারটি সুপারিশ করা হয়েছে।
পরামর্শে বলা হয়েছে, বিশ্বের বেশ কিছু দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ আর এই ভ্যারিয়েন্ট বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করেছে। তবে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রয়েছে এবং ভ্যারিয়েন্ট চিহ্নিত হয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মাস্ক পরিধানসহ কোভিড প্রতিরোধে অন্যান্য জনস্বাস্থ্যমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বিশেষ করে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যেমন হাসপাতাল/চিকিৎসা কেন্দ্র এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সতকর্তা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক কোভিড-১৯ ছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে এটা সহায়ক হবে।
সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বৈশ্বিক রিপোর্ট পর্যালোচনা ও দেশে সার্ভিলেন্স জোরদার করতে হবে। এজন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরকে ভূমিকা রাখতে হবে। ভবিষ্যতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে কোভিড পরীক্ষা ও আইসিইউসহ দ্রম্নত চিকিৎসার সব প্রস্তুতি রাখতে হবে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করতে হবে।
জাতীয় পরামর্শক কমিটি কোভিড ভ্যাকসিন বিষয়ে নিয়মিত বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করেছে। কমিটি মনে করে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মোতাবেক উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সার্জারি অথবা অন্য কোনো রোগের চিকিৎসার আগে রোগীর করোনাভাইরাস উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দিলে কোভিড পরীক্ষা করতে হবে।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, 'বাংলাদেশে কোভিডের ওই ধরনটি ছড়িয়ে না পড়লেও যে কোনো সময় যে কোনো কিছু হতে পারে। ধরনটি বাংলাদেশে আসবে না ধরে নিয়ে বসে থাকলে হবে না। নতুন এই ধরন যে বিরাট সমস্যা, সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। কিন্তু শীত মৌসুমে শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেড়ে যায়। এ কারণেই সতর্কতা নেওয়া দরকার।'
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। বাংলাদেশে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রথম শনাক্তের পর থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৩০০ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতু্য হয়েছে ২৯ হাজার ৪৭৭ জনের।